‘সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রয়োজনে সান্ধ্য আইন জারি করবে’
কাফি কামাল: রিজভী আহমেদ। ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি ওয়ান ইলেভেনের সময় সোচ্চার ছিলেন জরুরি সরকারের বিরুদ্ধে। চলতি বছর দলের নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী ইস্যুতে আন্দোলনের সময় মামলা মাথায় নিয়েও কাজ করেছেন দলীয় কার্যালয়ে।
জেলও খেটেছেন। রোববারের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে নৈরাজ্যের ঘটনায় নতুন করে মামলার শিকার হয়েও তিনি দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে দপ্তরের দায়িত্বপালন করছেন। পাশাপাশি হরতালসহ পরবর্তী কর্মসূচি সফল করতে নেতাকমীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন মানবজমিন অনলাইনের সঙ্গে।জাতীয় সংসদের আলোচনায় অংশ না নিয়ে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকারের তরফে সে পরিবেশ সৃষ্টি তো দূরের কথা উল্টো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। ফলে বিরোধীদলের পক্ষে সংসদে অংশগ্রহণ রীতিমতো দূরুহ। যার প্রেক্ষিতে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে হচ্ছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক শক্তি ও দেশের জনগণ। ফলে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
জনগনকে কষ্ট দিয়ে হরতাল কর্মসূচি কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অসংখ্য ইস্যুর সৃষ্টি হলেও বিএনপি জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। এ সরকারের আমলে বিএনপি ঘোষিত হরতাল কর্মসূচির সংখ্যা দেখলে সেটা প্রমাণ করে। কিন্তু বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে হত্যায় মেতে উঠলে হরতালের মতো কড়া কর্মসূচির বিকল্প থাকে না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথে এগোলেও সরকারই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বারবার সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখন কি গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন? এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, প্রতিবন্ধকতার মুখেও রোববারের অবরোধ দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর ও আমিসহ সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে পদদলিত করে আমাদের মহাসচিবকে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হবার পথে গতরাতে গ্রেপ্তার করেছে। এখন তাকে রিমাণ্ডে নেয়ার আয়োজন চলছে। তবু আমি দলীয়ভাবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি এবং করে যাব। গ্রেপ্তারের আশংকা করলেও গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আতঙ্কিত নই। পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকেও গ্রেপ্তার করতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোন রীতিকে সম্মান করে না। রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা কোন আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করি না। আমাদের কর্মসূচিসহ যা করছি সবই ন্যায়সঙ্গত ও সাংবিধানিক। সারাদেশের নেতা কর্মীদের হরতালসহ পরবর্তী কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি। সবধরনের ভাগ্যবরণের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই দায়িত্ব পালন করছি।
অবরুদ্ধ অবস্থায় আন্দোলন সফল করবেন কিভাবে? এমন প্রশ্নে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের চিরাচরিত চরিত্র অনুযায়ী- প্রশাসন, দলীয় ক্যাডার ও ভাড়াটিয়া বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরাও জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্যাতনের ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছে। এটা আমাদের আন্দোলনের অগ্রগতি ও সরকারের নৈতিক পরাজয়ের প্রমাণ দেয়। নয়াপল্টনের চিত্র সারাদেশের হরতালচিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে না। রিজভী বলেন, সরকার প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে। স্বৈরাচারকেও হার মানিয়েছে এ সরকারের আচরণ। বিএনপির মতো দলের মহাসচিবকে তুচ্ছ ও মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন প্রমাণ করে এ সরকার সভ্য নয়। তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলন সফল হবেই। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও খুনি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রয়োজনে সান্ধ্য আইন জারি করবে।
বিজয়ের মাসে হরতাল কি এড়ানো যেত না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আনন্দে হরতাল দেয়নি বিরোধী দল। আর বিজয়ের মাসে হরতাল নিয়ে সরকার রীতিমতো অপপ্রচার করছে। দেশবাসী ভুলে যায়নি ১৯৯৫ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ ৭২ঘন্টার হরতাল দিয়েছিল। তখনও দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
বিরোধী দলের পরবর্তী কর্মসূচির ধরণ কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে রিজভী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান। এখন দলের মহাসচিবকে গ্রেপ্তারের পর নিশ্চয় নীতি নির্ধারনী ফোরাম নতুন কর্মসূচি দেবেন। তবে মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলার গতিপ্রকৃতি আন্দোলনকে জোরদার বরবে। আন্দোলনের তোড়েই মহাসচিবের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ত্বরান্বিত হবে।
ইস্যুর পর ইস্যু কি পূর্ববর্তী ইস্যুগুলো থেকে বিরোধীদলের আন্দোলনকে সরিয়ে আনছে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার সার্বিকভাবে গণধিকৃত হয়ে পড়েছে। তাই তারা কিছুদিন পর পর নতুন নতুন ইস্যুর সৃষ্টি করে। সম্প্রতি আদালত নিয়ে সর্বত্র কথাবার্তা হচ্ছে- তাই জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই বিএনপি নেতাদের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি কোন ইস্যুই ভুলছে না। বরং ইস্যুর সামষ্টিক রূপ নিয়েই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। এটা মনে রাখতে হবেÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে কোন ইস্যুরই সমাধান হবে না।
প্রয়োজনে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছেন আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। ওই নেতার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, মাহবুবুল আলম হানিফদের মতো রাজনৈতিক শেকড়হীন লোক এমন কান্ডহীন বক্তব্য দিতে পারে। সরকার যা ইচ্ছা করবে আর বিরোধী দল ঘরে বসে থাকবে এমন ভাবলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করে। হানিফের বক্তব্যের জবাবে বলতে চাই- শূন্য কলসি বাজে বেশি। আসলে সরকারের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলেই প্রলাপ বকছে।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ইস্যু এক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে ১৮দল জাতীয় স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনের ইস্যু সুনির্দিষ্ট। কিন্তুদলীয় ইস্যুতে জামায়াতের যে কর্মসূচি সেটা একান্তই তাদের। জামায়াতের দলীয় ইস্যুতে কোন সমর্থন ঘোষণা করেনি বিএনপি।
হাজারো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা কি আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এই প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, সরকারের এ মামলা প্রক্রিয়া প্রমাণ করে তারা জনভিত্তি হারিয়েছে। এখন দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করতে চায়। ভয় দেখিয়ে, হয়রানী করে, খুনীর চেহারায় জনগণের আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চায়। এ লক্ষণ দেশের রাজনীতিতে অশুভ লক্ষন। তারা অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে মামলা দায়েরের উদ্দেশ্য হচ্ছে-পরে ইচ্ছামতো নেতাকর্মীদের নাম ঢুকিয়ে হয়রানী করা।
No comments