রাঙ্গুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রী-নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখুন by নূপুর দেব ও জিগারুল ইসলাম জিগার
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, '২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আপনারা এই নির্বাচনে আমাদের ভোট দিন।'
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'একজনের বিচারের রায় আমরা পেয়েছি, বাকি রায়গুলোও পাব। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা কলঙ্কিত করেছিল, তাদের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা সেই কলঙ্ক মুছে দেব। গত নির্বাচনের আগে আমরা জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করব। সেই ওয়াদা মোতাবেক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে আসেন বিকেল ৪টায়। নৌকা প্রতীকের আদলে তৈরি করা মঞ্চে উঠেই শেখ হাসিনা হাত নেড়ে জনগণকে অভিবাদন জানান। ৪টা ১৫ মিনিট থেকে বক্তব্য শুরু করে টানা ৩২ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নৌকা জনগণের মার্কা, এই নৌকায় ভোট দিয়ে '৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে এ দেশের মানুষ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র পেয়েছিল। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে এ দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩৭ জন নেতা বক্তব্য দেন। এদিকে ১৩ বছর পর রাঙ্গুনিয়ায় সরকারপ্রধান হিসেবে জনসভা করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে রাঙ্গুনিয়ায় বেসরকারি ইপিজেডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে তিনি রাঙ্গুনিয়ায় আসেন। এর আগে আরো তিনবার তিনি রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রামে অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। অন্যের কাছ থেকে ধার নেব আর ছবক শুনব, তা হতে পারে না। আমরা আমাদের সম্পদ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াব।' ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দে র চত্বরে গতকাল প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৪তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রাঙ্গুনিয়ার জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির দুটি গুণ রয়েছে। একটি হচ্ছে দুর্নীতি, অন্যটি হলো মানুষ খুন। এই দুটি গুণ ছাড়া বিএনপি আর কিছুই করতে পারে না।' জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছেন- তিনি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দেবেন। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সারা দেশে অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যেগুলো বর্তমান সরকার ফের চালু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তারা বন্ধ করে দিয়েছিল। এসব আমরা ক্ষমতায় এসে আবার চালু করেছি।' যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া তাদের নিয়ে সরকার গঠন করেন।'
বিগত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শুধু রাঙ্গুনিয়া নয়, পুরো চট্টগ্রাম ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকতে শুধু রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। একের পর এক আমাদের অনেক নেতা-কর্মীসহ মানুষ হত্যা করেছে। মানুষ রাতে ঘুমাতে এবং দিনে শান্তিতে থাকতে পারত না। আপনারা কি আবার সেই দুঃশাসন চান?' শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে গুলি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আমাকেও গুলি করা হয়েছিল। যে পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে গুলি চালানো হয়েছে খালেদা জিয়া তাকে দিয়েছেন প্রমোশন। এরশাদ তাকে আইনের আওতায়ও আনেননি। এই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। '
রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে এই এলাকার বিশেষ করে আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন মানুষের রাতে ঘুম এবং দিনে শান্তি ছিল না। মানুষ তখন আতঙ্কে ছিল। গত নির্বাচনে আমরা ড. হাছান মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়েছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করেছেন। আপনাদের প্রতি অভিনন্দন জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। এলাকার এমপি হওয়ায় আমি আপনাদের একজন মন্ত্রী উপহার দিয়েছি।'
ভাষণে শেখ হাসিনা রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বিভিন্ন খাতে গত চার বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার কী কী উন্নয়নকাজ হয়েছে, তার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'আজকে এই এলাকায় দুটি মিল চালু করে দিয়েছি। যেখানে চার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। এই পাটকল বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু এসব কলকারখানা নয়, তারা দেশের অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল।'
খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলেদের বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়নকাজ হয় আর বিএনপি এলে সন্ত্রাসী ও লুটপাট হয়।
বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি দুর্নীতি আর লুটপাটের দেশ বানিয়েছেন। তাঁকে কালো টাকা সাদা করতে হয়েছিল জরিমানা দিয়ে। আর তাঁর ছেলেরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আমরা জনগনের সেই টাকা ফিরিয়ে এনেছি।' খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'উনার ছেলেদের তিনি কী ডিগ্রি দিয়েছেন- মানি লন্ডারিং, নাকি দুর্নীতির ডিগ্রি?'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যদের মধ্যে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সংসদ সদস্যদের মধ্যে বীর বাহাদুর, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আবুল কাশেম মাস্টার, হাসিনা মান্নান, চেমন আরা তৈয়ব, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এম এ সালাম, মোছলেম উদ্দিন আহমদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সাকার ফাঁসি দাবি : বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাকা চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কারাগারে আটকের পর গতকাল রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের জনসভায় সাকা চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি চায় রাঙ্গুনিয়াসহ সারা দেশের মানুষ। গত নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাঙ্গুনিয়া রাজাকারমুক্ত হয়েছে। শুধু লিফটন নয়, গতকাল জনসভায় বক্তৃতা দেওয়া প্রায় সব নেতার বক্তব্যে ঘুরে ফিরে সাকা চৌধুরীর বিচার দ্রুত করার দাবি তোলা হয়।
গতকালের জনসভার সবার বক্তব্যেই ঘুরেফিরে এসেছে, গত চার বছরে রাঙ্গুনিয়ায় ড. হাছান মাহমুদের সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি।
চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী : চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল চট্টগ্রামে আইইবির এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আপনারা দেশের মেধাবী সন্তান। আপনারাই চিন্তা করুন, দেশ কেন পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের সময়ে দেশ এগিয়ে গেলেও অন্য সময়ে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠিন সময় পার করে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।' প্রকৌশলীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের মতো দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।'
আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী নুরুল হুদার সভাপতিত্বে দেশি ও বিদেশি প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইইবির সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সবুর। স্বাগত বক্তব্য দেন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন এবং সমাপনী বক্তব্য দেন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী এম এ রশীদ। কনভেনশনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আইইবি ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচন করা হয়।
কনভেনশন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি ভবন, ফৌজদারহাট নার্সিং কলেজ, ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'একজনের বিচারের রায় আমরা পেয়েছি, বাকি রায়গুলোও পাব। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা কলঙ্কিত করেছিল, তাদের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা সেই কলঙ্ক মুছে দেব। গত নির্বাচনের আগে আমরা জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করব। সেই ওয়াদা মোতাবেক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে আসেন বিকেল ৪টায়। নৌকা প্রতীকের আদলে তৈরি করা মঞ্চে উঠেই শেখ হাসিনা হাত নেড়ে জনগণকে অভিবাদন জানান। ৪টা ১৫ মিনিট থেকে বক্তব্য শুরু করে টানা ৩২ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নৌকা জনগণের মার্কা, এই নৌকায় ভোট দিয়ে '৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে এ দেশের মানুষ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র পেয়েছিল। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে এ দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩৭ জন নেতা বক্তব্য দেন। এদিকে ১৩ বছর পর রাঙ্গুনিয়ায় সরকারপ্রধান হিসেবে জনসভা করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে রাঙ্গুনিয়ায় বেসরকারি ইপিজেডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে তিনি রাঙ্গুনিয়ায় আসেন। এর আগে আরো তিনবার তিনি রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রামে অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। অন্যের কাছ থেকে ধার নেব আর ছবক শুনব, তা হতে পারে না। আমরা আমাদের সম্পদ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াব।' ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দে র চত্বরে গতকাল প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৪তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রাঙ্গুনিয়ার জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির দুটি গুণ রয়েছে। একটি হচ্ছে দুর্নীতি, অন্যটি হলো মানুষ খুন। এই দুটি গুণ ছাড়া বিএনপি আর কিছুই করতে পারে না।' জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছেন- তিনি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দেবেন। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সারা দেশে অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যেগুলো বর্তমান সরকার ফের চালু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তারা বন্ধ করে দিয়েছিল। এসব আমরা ক্ষমতায় এসে আবার চালু করেছি।' যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া তাদের নিয়ে সরকার গঠন করেন।'
বিগত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শুধু রাঙ্গুনিয়া নয়, পুরো চট্টগ্রাম ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকতে শুধু রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। একের পর এক আমাদের অনেক নেতা-কর্মীসহ মানুষ হত্যা করেছে। মানুষ রাতে ঘুমাতে এবং দিনে শান্তিতে থাকতে পারত না। আপনারা কি আবার সেই দুঃশাসন চান?' শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে গুলি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আমাকেও গুলি করা হয়েছিল। যে পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে গুলি চালানো হয়েছে খালেদা জিয়া তাকে দিয়েছেন প্রমোশন। এরশাদ তাকে আইনের আওতায়ও আনেননি। এই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। '
রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে এই এলাকার বিশেষ করে আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন মানুষের রাতে ঘুম এবং দিনে শান্তি ছিল না। মানুষ তখন আতঙ্কে ছিল। গত নির্বাচনে আমরা ড. হাছান মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়েছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করেছেন। আপনাদের প্রতি অভিনন্দন জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। এলাকার এমপি হওয়ায় আমি আপনাদের একজন মন্ত্রী উপহার দিয়েছি।'
ভাষণে শেখ হাসিনা রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বিভিন্ন খাতে গত চার বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার কী কী উন্নয়নকাজ হয়েছে, তার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'আজকে এই এলাকায় দুটি মিল চালু করে দিয়েছি। যেখানে চার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। এই পাটকল বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু এসব কলকারখানা নয়, তারা দেশের অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল।'
খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলেদের বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়নকাজ হয় আর বিএনপি এলে সন্ত্রাসী ও লুটপাট হয়।
বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি দুর্নীতি আর লুটপাটের দেশ বানিয়েছেন। তাঁকে কালো টাকা সাদা করতে হয়েছিল জরিমানা দিয়ে। আর তাঁর ছেলেরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আমরা জনগনের সেই টাকা ফিরিয়ে এনেছি।' খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'উনার ছেলেদের তিনি কী ডিগ্রি দিয়েছেন- মানি লন্ডারিং, নাকি দুর্নীতির ডিগ্রি?'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যদের মধ্যে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সংসদ সদস্যদের মধ্যে বীর বাহাদুর, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আবুল কাশেম মাস্টার, হাসিনা মান্নান, চেমন আরা তৈয়ব, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এম এ সালাম, মোছলেম উদ্দিন আহমদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সাকার ফাঁসি দাবি : বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাকা চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কারাগারে আটকের পর গতকাল রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের জনসভায় সাকা চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি চায় রাঙ্গুনিয়াসহ সারা দেশের মানুষ। গত নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাঙ্গুনিয়া রাজাকারমুক্ত হয়েছে। শুধু লিফটন নয়, গতকাল জনসভায় বক্তৃতা দেওয়া প্রায় সব নেতার বক্তব্যে ঘুরে ফিরে সাকা চৌধুরীর বিচার দ্রুত করার দাবি তোলা হয়।
গতকালের জনসভার সবার বক্তব্যেই ঘুরেফিরে এসেছে, গত চার বছরে রাঙ্গুনিয়ায় ড. হাছান মাহমুদের সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি।
চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী : চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল চট্টগ্রামে আইইবির এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আপনারা দেশের মেধাবী সন্তান। আপনারাই চিন্তা করুন, দেশ কেন পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের সময়ে দেশ এগিয়ে গেলেও অন্য সময়ে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠিন সময় পার করে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।' প্রকৌশলীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের মতো দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।'
আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী নুরুল হুদার সভাপতিত্বে দেশি ও বিদেশি প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইইবির সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সবুর। স্বাগত বক্তব্য দেন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন এবং সমাপনী বক্তব্য দেন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী এম এ রশীদ। কনভেনশনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আইইবি ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচন করা হয়।
কনভেনশন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি ভবন, ফৌজদারহাট নার্সিং কলেজ, ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
No comments