গুম খুন ও অজ্ঞাত লাশ- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রমাণ
রাজধানীর আশপাশ এলাকার নদীতীর ও বিল-ঝিল
থেকে এখন প্রায়ই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার হচ্ছে। হাত-পা বা চোখ
বাঁধা এসব লাশে গুলি করে বা গলা কেটে হত্যার আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
গত
সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জ ও সাভারে এ ধরনের চারটি লাশ পাওয়া গেছে। একটি দৈনিকের
খবরে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে শুধু মুন্সীগঞ্জেই পাওয়া গেছে ৩৩টি লাশ। এভাবে
লাশ উদ্ধারের ঘটনা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। মানুষকে গোপনে হত্যা
করে লাশ গুম বা ফেলে রাখার ঘটনা প্রমাণ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির
অবনতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন এভাবে খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো ঘটনা
ঘটছে। এর ফল হিসেবে অপরাধীরা যেমন খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তেমনি প্রতিহিংসা
চরিতার্থ করার জন্য বা পারিবারিক ও ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে খুনোখুনিতে
জড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ মানুষ হত্যা একটি সাধারণ অপরাধে পরিণত হয়েছে। মানুষ
নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। সম্মিলিতভাবে মানুষ কিভাবে আইন নিজের হাতে
তুলে নিচ্ছে, গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা তার প্রমাণ। গত বছর সারা দেশে
গণপিটুনিতে মারা গেছে ১৩২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিচারবহির্ভূত
খুন ও গুমের সাথে জড়িত। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৪ জন মানুষকে গুম করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে ৭০ জনকে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা সমাজে প্রভাব ফেলছে। তুচ্ছ কারণে এখন খুন ও গুমের ঘটনা ঘটছে। এর ফল হিসেবে সাধারণ মানুষের জীবন এখন খুবই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে এখন ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধ দমনের দায়িত্ব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে পুলিশকে এখন রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বন্ধ করা, তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানোর কাজে পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত রয়েছে। পুলিশও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি থানার ভেতরে এক পুলিশ আরেক পুলিশকে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়ছে।
আমরা মনে করি, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটছে তাতে অপরাধ দমনের দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। না হলে এভাবে খুন ও গুমের ঘটনা আরো বাড়তে থাকবে। এ জন্য সর্বপ্রথম পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি।
No comments