শিশুর নিঃশ্বাসে হুইজিং বা বাঁশির মতো শব্দ by ডা: গোবিন্দ চন্দ্র দাস
পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং সঙ্কোচন হয় সাধারণত
শ্বাসনালীতে ভাইরাসের আক্রমণে। এ সময় শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বাঁশির
শব্দের অনুরূপ শব্দ পরিলক্ষিত হয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের
এই বাঁশির শব্দ ভবিষ্যতে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার অনেকখানি ইঙ্গিত বহন
করে। এই হুইজিং সাউন্ড (বাঁশির মতো শব্দ) সৃষ্টিকে বয়স্ক এবং শিশুদের
শ্বাসনালীর গঠনগত এবং কার্যগত পার্থক্যের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালীর অন্যান্য লক্ষণ যেমন- কাশি, কফ,
গলাব্যথা বারবার দেখা দেয়। বারবার শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং স্বাভাবিক
শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধার অন্যান্য কারণ যেমন- শ্বাসনালীতে কোনো বস্তু আটকে
যাওয়া, শ্বাসনালীর স্থায়ী সঙ্কোচন, টিউমার ইত্যাদি বিষয়কে যদি রোগের
বৃত্তান্ত এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেয়া যায় তবে সে ক্ষেত্রে
হুইজিংকে অ্যাজমার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব।
গবেষণা : ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউট অব পেডিয়েট্রিকস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্সের শিশুরোগ বিভাগ শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং নিঃশ্বাসে বাঁশির মতো আওয়াজ এই সমস্যা নিয়ে যেসব এক বছরের কম শিশু ভর্তি হয় তাদের ওপর একটি গবেষণা করে। মোট ৮৯৭ জন শিশুর ওপর এই গবেষণা চালানো হয় এবং তাদেরকে বয়সভিত্তিক চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। যেমন : ৬-৯, ১০-১৩, ১৪-১৭ ও ১৮-২১ বছর। এই গবেষণায় অ্যাজমা লক্ষণের সাথে মিল রয়েছে এমন লক্ষণগুলো যেমন- হুইজিং, শ্বাসকষ্ট শ্বাসনালীর সংবেদনশীলতা এবং রাতের বেলা কাশি ইত্যাদি আগে থেকে অ্যাজমা রোগী হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত হয়েছে তাদের লক্ষণগুলোকে বিবেচনায় রাখা হয়েছিল এবং সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় : শিশুদের হুইজিং ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার পর অ্যাজমার যেসব লক্ষণ গবেষণায় প্রতিফলিত হয় তা শতকরা হিসাবে ৬-৯, ১০-১৩, ১৪-১৭, ১৮,২১।
১। হুইজিং : ৪৩.৬%, ৩৭%, ৪৩.৯%, ২৬.২১%, ২৬.২১%, ৩৬%।
২। শ্বাসকষ্ট : ২৮.৯%, ২৪.১%, ১৯.২%, ২৩.৭%।
৩। শারীরিক পরিশ্রমের পরে কাশি : ৩১.১৭%, ২৯.২%, ২৪.২%, ২৫.৯%।
৪। রাতে কাশি : ৪৬%, ৩৯.৮%, ২৮.১৫%, ২১%, ৩৪.৯%।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাজমা-আক্রান্ত রোগীদের অ্যাজমা পূর্ববর্তী লক্ষণগুলোর ইতিহাস বৃত্তান্ত পর্যালোচনা করে যেসব শিশু হুইজিং ব্রঙ্কাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় পরে তাদের শতকরা ৫০ ভাগ অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। সুতরাং উল্লিখিত গবেষণালব্ধ ফলাফল (অগ্রমুখী বা পশ্চাৎমুখী গবেষণা) বিশ্লেষণে দেখা যায়, হুইজিং শ্বাসকষ্ট এবং রাতে কাশি এই লক্ষণগুলো পরবর্তী জীবনে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার বার্তা বহন করে। সুতরাং শিশুদের এই লক্ষণগুলোকে অ্যাজমা নিরূপণী বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
তবে যেহেতু শ্বাসনালীর অনেক রোগের লক্ষণ হুইজিং এবং অনেক চিকিৎসক হুইজিংকে ক্ষণকালীন বলে মনে করেন এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটা কমে আসে, সেহেতু হুইজিং হলেই অ্যাজমা নিরূপণ করা নিতান্তই অবিবেচকের পরিচয় দেয়া হবে। এ অবিবেচনায় শিশুর ভুল রোগ নিরূপণ, ভুল চিকিৎসা বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং শ্বাসনালীর অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ : হুইজিং শ্বাসনালীতে প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়া শিশুদের রোগের পরিপূর্ণ বৃত্তান্ত এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অ্যাজমার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য লক্ষণগুলোকে বাদ দেয়া যায় এবং যদি উপরোল্লিখিত লক্ষণগুলোর কারণগুলো সঠিক অ্যালার্জি টেস্ট ও ফুসফুসের কার্যকরী ক্ষমতা পরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায় ও তদনুযায়ী অ্যালার্জি দ্রব্যাদি পরিহার করে অ্যালার্জির ওষুধ ও অ্যালার্জি ভ্যাকসিন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থেকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতি চিকিৎসাকে অ্যালার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অহবেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যালার্জি পরিহার, ওষুধ এবং ভ্যাকসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে যদি স্থায়ী চিকিৎসা করা হয় তবে শিশুদের অ্যাজমার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। তাই সময়মতো অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, ৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।
ফোন : ০১৯২১ ৮৪৯৬৯৯
গবেষণা : ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউট অব পেডিয়েট্রিকস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্সের শিশুরোগ বিভাগ শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং নিঃশ্বাসে বাঁশির মতো আওয়াজ এই সমস্যা নিয়ে যেসব এক বছরের কম শিশু ভর্তি হয় তাদের ওপর একটি গবেষণা করে। মোট ৮৯৭ জন শিশুর ওপর এই গবেষণা চালানো হয় এবং তাদেরকে বয়সভিত্তিক চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। যেমন : ৬-৯, ১০-১৩, ১৪-১৭ ও ১৮-২১ বছর। এই গবেষণায় অ্যাজমা লক্ষণের সাথে মিল রয়েছে এমন লক্ষণগুলো যেমন- হুইজিং, শ্বাসকষ্ট শ্বাসনালীর সংবেদনশীলতা এবং রাতের বেলা কাশি ইত্যাদি আগে থেকে অ্যাজমা রোগী হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত হয়েছে তাদের লক্ষণগুলোকে বিবেচনায় রাখা হয়েছিল এবং সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় : শিশুদের হুইজিং ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার পর অ্যাজমার যেসব লক্ষণ গবেষণায় প্রতিফলিত হয় তা শতকরা হিসাবে ৬-৯, ১০-১৩, ১৪-১৭, ১৮,২১।
১। হুইজিং : ৪৩.৬%, ৩৭%, ৪৩.৯%, ২৬.২১%, ২৬.২১%, ৩৬%।
২। শ্বাসকষ্ট : ২৮.৯%, ২৪.১%, ১৯.২%, ২৩.৭%।
৩। শারীরিক পরিশ্রমের পরে কাশি : ৩১.১৭%, ২৯.২%, ২৪.২%, ২৫.৯%।
৪। রাতে কাশি : ৪৬%, ৩৯.৮%, ২৮.১৫%, ২১%, ৩৪.৯%।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাজমা-আক্রান্ত রোগীদের অ্যাজমা পূর্ববর্তী লক্ষণগুলোর ইতিহাস বৃত্তান্ত পর্যালোচনা করে যেসব শিশু হুইজিং ব্রঙ্কাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় পরে তাদের শতকরা ৫০ ভাগ অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। সুতরাং উল্লিখিত গবেষণালব্ধ ফলাফল (অগ্রমুখী বা পশ্চাৎমুখী গবেষণা) বিশ্লেষণে দেখা যায়, হুইজিং শ্বাসকষ্ট এবং রাতে কাশি এই লক্ষণগুলো পরবর্তী জীবনে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার বার্তা বহন করে। সুতরাং শিশুদের এই লক্ষণগুলোকে অ্যাজমা নিরূপণী বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
তবে যেহেতু শ্বাসনালীর অনেক রোগের লক্ষণ হুইজিং এবং অনেক চিকিৎসক হুইজিংকে ক্ষণকালীন বলে মনে করেন এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটা কমে আসে, সেহেতু হুইজিং হলেই অ্যাজমা নিরূপণ করা নিতান্তই অবিবেচকের পরিচয় দেয়া হবে। এ অবিবেচনায় শিশুর ভুল রোগ নিরূপণ, ভুল চিকিৎসা বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং শ্বাসনালীর অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ : হুইজিং শ্বাসনালীতে প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়া শিশুদের রোগের পরিপূর্ণ বৃত্তান্ত এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অ্যাজমার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য লক্ষণগুলোকে বাদ দেয়া যায় এবং যদি উপরোল্লিখিত লক্ষণগুলোর কারণগুলো সঠিক অ্যালার্জি টেস্ট ও ফুসফুসের কার্যকরী ক্ষমতা পরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায় ও তদনুযায়ী অ্যালার্জি দ্রব্যাদি পরিহার করে অ্যালার্জির ওষুধ ও অ্যালার্জি ভ্যাকসিন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থেকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতি চিকিৎসাকে অ্যালার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অহবেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যালার্জি পরিহার, ওষুধ এবং ভ্যাকসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে যদি স্থায়ী চিকিৎসা করা হয় তবে শিশুদের অ্যাজমার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। তাই সময়মতো অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, ৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।
ফোন : ০১৯২১ ৮৪৯৬৯৯
No comments