৫৫০ কোটি টাকায় এবার কেনা হচ্ছে ৪টি হেলিকপ্টার by সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু

দুর্যোগের সময় ব্যবহারের জন্য এবার হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট চারটি হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে হেলিকপ্টারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। কেনার কাজে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণও পাওয়া যাবে। চারটি হেলিকপ্টার কিনতে ব্যয় হতে পারে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এই হেলিকপ্টারগুলো কেনা হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশটি ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে তারা ‘সুপার পুমা’ নামে যেটি হেলিকপ্টার তৈরি করে সেগুলো ত্রাণ ও দুর্যোগের সময় ব্যবহারের খুবই উপযোগী। তাই বাংলাদেশে দুর্যোগকালে বা ত্রাণকাজে ব্যবহারের জন্য সুপার পুমা কপ্টারগুলো কেনা যেতে পারে। তবে তুলনামূলক ভালো হলে রাশিয়া থেকেও চারটি হেলিকপ্টার কেনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার তৈরি ‘এমআই-১৭’ হেলিকপ্টারের নামটি ওঠে এসেছে। বাংলাদেশ এত দিনও রাশিয়ার কপ্টার ব্যবহার করে আসছে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে এর আগে চারটি হেলিকপ্টার কেনার জন্য একটি খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে দেয়ার জন্য সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে অনুরোধ করে একটি চিঠি পাঠায়। এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, হেলিকপ্টার চারটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থে কেনা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন করার জন্য কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। ইতোমধ্যে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ‘পিটি ডিরগানতারা ইন্দোনেশিয়া অ্যারোস্পেস (আইএই)’ থেকে হেলিকপ্টার কেনার একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে কপ্টারগুলো কেনা হলে আইডিবি থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া সম্ভব হবে। সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের এই মত ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও বিমানবাহিনী সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বিমানবাহিনী বিভাগ থেকে মত দেয়া হয়, ত্রাণকাজে ‘এমআই-১৭’ হেলিকপ্টারই বেশি উপযোগী এবং এটিই কেনা উচিত। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, হেলিকপ্টারগুলো বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে না কিনে আইডিবি কর্তৃক সফট লোনেই সংগ্রহ করা হবে।

জানা গেছে, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৯ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার আইএই এবং সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রতিনিধিদের সাথে একটি সভায় আইএই তাদের প্রস্তুতকৃত ‘ফিক্সিড অ্যান্ড রোটারি উইং’ কপ্টারের ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করে। এ উপস্থাপনা শেষে সুপার পুমা হেলিকপ্টারটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে প্রতীয়মান হয়। এ পরিস্থিতিতে আইডিবি থেকে সহজ শর্তে ঋণে ইন্দোনেশিয়ার আইএই থেকে চারটি সুপার পুমা বা অন্য মডেলের হেলিকপ্টার সংগ্রহ যথাযথ হবে বলে বিমান সদর দফতর থেকে মত প্রদান করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপের ‘ইউরোকপ্টার’-এর অনুমতি নিয়ে ইন্দোনেশিয়া সুপার পুমা নামক এই কপ্টারটি তৈরি করছে। একটি সুপার পুমা কপ্টারের আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার। একইভাবে রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭ কপ্টারের আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। যার কাছ থেকেই কেনা হোক না কেন চারটি হেলিকপ্টারের মূল্য দাঁড়াতে পারে ৫৫০ কোটি টাকা মতো। বাংলাদেশ এমআই-১৭ কপ্টার ইতোমধ্যে ব্যবহার করলেও সুপার পুমা কখনো ব্যবহার করেনি। এই দিক থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী রাশিয়ার হেলিকপ্টারের সাথে বেশ পরিচিতই বলা চলে। ২০১১ সালে আফগানিস্তান রাশিয়ার তৈরি ২১টি এমআই-১৭ ক্রয় করেছে। হেলিকপ্টার কেনার খরচ জুগিয়েছে আমেরিকা। আফগান সেনাবাহিনী রাশিয়ার কপ্টার পরিচালনায় পারদর্শী বলেই এটি কেনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কার কাছ থেকে চারটি কপ্টার কেনা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি বলে সূত্র জানায়।

ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার সুপার পুমা হেলিকপ্টারে ১৯ যাত্রী বসতে পারে। বিভিন্ন দেশ এই দুই ধরনের কপ্টার সামরিক ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে আসছে।
       

No comments

Powered by Blogger.