যানজট নিরসনের সব পরিকল্পনা ফাইলবন্দী by শওকত ওসমান রচি

যানজটে বেড়েছে দুর্ভোগ। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা সব মহাসড়কেও এ দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছে জনগণ।
বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যানজট নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও সেগুলো এখনো ফাইলবন্দী রয়ে গেছে। অন্য দিকে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সারা দেশে চলাচলকারী যানবাহনের অর্ধেকের বেশি চলাচল করছে রাজধানীতে। মেগাসিটি ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ বা বিকল্প রাস্তা নির্মাণ হয়নি। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে নতুন ১ কিলোমিটার রাস্তাও নির্মাণ হয়নি। একটি শহরের জন্য মোট আয়তনের ২২ থেকে ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ। রাজধানীর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীকে। প্রতিবছর ঢাকা মহানগরীতে গড়ে প্রায় ২১ হাজার নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। যানবাহনের ভারে রাজধানীর রাস্তাগুলো তিগ্রস্ত হচ্ছে। এ দিকে রাজধানীবাসীর কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়ক পথ। কাঁচপুর ব্রিজ পেরোতেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে বাসযাত্রী ও প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারকারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাঁচপুর ব্রিজ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত রাস্তা পার হতে গড়ে এক থেকে দু’ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ থেকে যাত্রাবাড়ী ক্রসিং পর্যন্ত প্রতিদিন অসংখ্য বাস, মিনিবাস ও প্রাইভেটকার চলাচল করে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের গাড়ি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর যানবাহন এ রুটেই চলাচল করে। রিকশা ও ভ্যানও চলে বিপুল। সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ।

যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। যানজট নিরসনে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও কোনোটাই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব পরিকল্পনা শুধু বৈঠক ও কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। রাজধানী থেকে গাড়ির চাপ কমাতে সম্প্রতি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পাঁচটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। সে পরিকল্পনাও এখন ফাইলবন্দী। যানজট কমাতে সম্প্রতি রাজধানীর চারপাশে নৌরুট চালুর বিষয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনাটিও ফাইলবন্দী রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চি?িহ্নত করা হয়েছে এর মধ্যে ট্রেন চলাচল। রাজধানীর ২০টি রেলওয়ে গেট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭২টি ট্রেন চলাচল করে। এ ট্রেন চলাচলের ফলে প্রতিটি গেটে প্রতি ট্রেনের জন্য ৫ মিনিট হিসেবে প্রায় ৬ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এর ফলে রাজধানীজুড়ে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি সরকারের আমলে আলোচনা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান বের করা যায়নি। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৪ বছর পার হয়ে গেছে। ৬টি ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঝুলে গেছে। নিত্যদিন যানজট ছাড়াও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এসব রেলগেট এলাকায়।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশে একবার ম্যাগনেটেড ট্রেন চালুর মতো মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ১ ঘণ্টায় ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন থেকে সরকার পিছিয়ে আসে। ওই প্রকল্প বাতিল হলেও পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বর্তমান সরকার পাতাল ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়। ম্যাগনেটেড ট্রেনের মতো প্রকল্পে গবেষণার মতো নতুন এ প্রকল্পও গবেষণার ফাঁদে পড়ে এবং এসব প্রকল্পে সমীক্ষা বাবদ কয়েক কোটি টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলেই মূলত এ উদ্যোগ নেয়া হলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এটা বাস্তবায়ন কাজ শুরু সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে চাউর করেছিলেন। এ প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখলেও এরপর সরকার ‘উড়াল ট্রেন’-এর প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

যানজট নিরসনে সরকারের সর্বশেষ পরিকল্পনার মধ্যে ছিল রিকশার পাশাপাশি প্রাইভেট কার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, যানজট নিরসনে ঢাকা শহরে প্রাইভেটকার চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। তবে কবে নাগাদ প্রাইভেটকার চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে সে  সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেনি সরকার। যানজট নিরসনে ঢাকার বিপণি বিতানগুলোকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করে সপ্তাহে নির্দিষ্ট ১ দিন বন্ধ রাখা হয়। তাতেও যানজট কমেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজট নিরসনে অফিস এবং স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন করেও কাজ হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে নতুন অফিস ও স্কুল সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। তাতেও যানজট নিরসনে কোনো প্রভাব পড়েনি।
       

No comments

Powered by Blogger.