আবার আগুন আবার তালা নিঃশেষ ৭ প্রাণ
আবার পোশাক কারখানায় আগুন, আবার বন্ধ দরজার কারণে শ্রমিকদের মৃত্যু। আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসের পর এবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে 'স্মার্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড' নামের একটি পোশাক কারখানা। গতকাল শনিবার সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন সাত পোশাক শ্রমিক।
আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আগুন ধরার পর ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে সিঁড়িতে পদদলিত হয়ে এবং আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে তাঁরা মারা যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন নাসিমা খাতুন (২৭), নাসিমা বেগম (২২), কোহিনুর (১৬), রাজিয়া (১৬), লাইজু (১৭), জোছনা (২২) ও ফাতেমা (২০)। পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিস্থিতি দেখতে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। এরই মধ্যে এ ট্র্যাজেডি ঘটল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার ৭১৭ নম্বর আবছার খান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় স্মার্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড নামের কারখানাটির অবস্থান। দোতলা ভবনটির নিচতলায় একটি বেকারি ও তিনটি ওয়ার্কশপ আছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে এগিয়ে এলেও তাতে কাজ হয়নি। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, খবর পেয়ে সদর দপ্তর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কুর্মিটোলা থেকে আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তাদের চেষ্টায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেটর ফরিদ উদ্দিন। তবে স্থানীয় লোকজন জানায়, সন্ধ্যার দিকে আগুন নিভেছে।
আগুন লাগার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। এক গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, গুদামের কাছে কোনো গার্মেন্টকর্মী জ্বলন্ত সিগারেট ফেলার কারণে আগুন লাগে। আবার কেউ কেউ বলেন, শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান আখন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিভাবে আগুন লেগেছে এ মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না। কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল (আজ রবিবার) তদন্ত করে এর কারণ জানার চেষ্টা করা হবে। গার্মেন্টকর্মীরা জানান, বছরখানেক আগে চারজন মিলে এ গার্মেন্ট কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের মধ্যে দুজন হলেন শরিফ উদ্দিন খান ও হুমায়ুন। অন্য দুজনের নাম জানা যায়নি। সেখানে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন।
প্রতিদিন দুপুর দেড়টার সময় দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া হয়। গতকাল ১টার কিছু পরে বিদ্যুৎ চলে গেলে একটু আগেভাগেই ছুটি দেওয়া হয়। শ্রমিকরা পৌনে ২টার দিকে আবার কাজে ফেরেন। ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে আসে। কাজ শুরুর পর তাঁরা আড়াইটার দিকে দেখতে পান, দোতলার বাথরুমের পাশে গুদামঘরের দিকে আগুন জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে গার্মেন্টকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করেন। কারখানার দুটি গেটের মধ্যে একটি তালাবদ্ধ ছিল। খোলা ছিল শুধু লোহার সরু সিঁড়িটি। সিঁড়িটি দিয়ে একসঙ্গে দু-তিনজনের বেশি নামা যায় না, সেখানে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হলে কয়েকজন পদদলিত হয়ে গুরুতর আহত হন। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন এবং ভয়ে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন আরো অনেকে। তাঁদের উদ্ধার করে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আরেকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যজনকে ঘটনাস্থল থেকেই মৃত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা বাড়ি নিয়ে যান।
গার্মেন্টকর্মী লিপি আক্তার কালের কণ্ঠকে জানান, আগুন লাগার পরপরই কারখানা ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এক দিকে ধোঁয়া অন্যদিকে অন্ধকার থাকার কারণে সিঁড়িটিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। শেষ পর্যন্ত তিনিসহ অন্যরা নেমে আসতে সক্ষম হন।
গতকাল বিকেলে গার্মেন্টের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিপি আক্তার। তিনি বলেন, 'আগুন দেখার পরই আমরা নামার লাইগ্যা দৌড়াদৌড়ি শুরু করি। কিন্তু আমি বাইর অইতে পারলেও অনেকেই পারে নাই। তারা মইরা গেছে।'
এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিহত প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা তুলে দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০ সদস্যের একটি দল তদারকিতে সহায়তা করে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, 'স্বজন হারানোর বেদনা কতটা কষ্টের, এটা আমি বুঝি। আমি আমার সন্তান হারিয়েছি। যে সাতজন মারা গেছেন, তাঁরা আমার বোনের মতো, সন্তানের মতো। তাঁদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত সহাযোগিতা করা হবে।' তিনি আরো বলেন, 'এই নির্মম ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা তদন্ত করতে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিকের গাফিলতি ও গেট তালাবদ্ধের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কারখানা ও শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, 'আবাসিক এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট কারখানা উচ্ছেদ করা হবে। এখন থেকে আবাসিক এলাকায় আর কোনো গার্মেন্ট কারখানা গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না। এসব কারখানাকে শিল্পাঞ্চলে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।' তিনি আরো বলেন, শনিবারের ঘটনা শুধু শর্ট সার্কিট থেকে নাকি নাশকতা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক জানান, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পদদলিত হয়ে নিহত পাঁচজনের দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগের বারান্দায়। সেখানে তাঁদের স্বজনরা আহাজারি করছেন। নাসিমা নামের এক গার্মেন্টকর্মীর স্বামী প্রাইভেট কারচালক শফিক কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'সকালে নাসিমা আমারে সাবধানে গাড়ি চালাতে বইলা বাড়ি থিকা বারাইয়্যা নিজেই আমাগো ছাইড়া চইলা গেল। এখন আমার দুই সন্তানের কী অইবো? আমি তাদের কিভাবে মানুষ করব?'
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত জোছনার বাবার নাম কাওসার মিয়া। গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। মোহাম্মদী হাউজিংয়ের ৪ নম্বর সড়কে থাকতেন তিনি। নিহত লাইজুর বাবা আবুল হোসেন জানান, মেয়ের গার্মেন্টে আগুনের খবর পেয়ে তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, তাঁর মেয়েকে ধরাধরি করে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেলে তাঁর লাশ বছিলা রোডের বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।
নিহতরা হলেন নাসিমা খাতুন (২৭), নাসিমা বেগম (২২), কোহিনুর (১৬), রাজিয়া (১৬), লাইজু (১৭), জোছনা (২২) ও ফাতেমা (২০)। পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিস্থিতি দেখতে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। এরই মধ্যে এ ট্র্যাজেডি ঘটল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার ৭১৭ নম্বর আবছার খান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় স্মার্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড নামের কারখানাটির অবস্থান। দোতলা ভবনটির নিচতলায় একটি বেকারি ও তিনটি ওয়ার্কশপ আছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে এগিয়ে এলেও তাতে কাজ হয়নি। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, খবর পেয়ে সদর দপ্তর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কুর্মিটোলা থেকে আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তাদের চেষ্টায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেটর ফরিদ উদ্দিন। তবে স্থানীয় লোকজন জানায়, সন্ধ্যার দিকে আগুন নিভেছে।
আগুন লাগার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। এক গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, গুদামের কাছে কোনো গার্মেন্টকর্মী জ্বলন্ত সিগারেট ফেলার কারণে আগুন লাগে। আবার কেউ কেউ বলেন, শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান আখন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিভাবে আগুন লেগেছে এ মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না। কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল (আজ রবিবার) তদন্ত করে এর কারণ জানার চেষ্টা করা হবে। গার্মেন্টকর্মীরা জানান, বছরখানেক আগে চারজন মিলে এ গার্মেন্ট কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের মধ্যে দুজন হলেন শরিফ উদ্দিন খান ও হুমায়ুন। অন্য দুজনের নাম জানা যায়নি। সেখানে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন।
প্রতিদিন দুপুর দেড়টার সময় দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া হয়। গতকাল ১টার কিছু পরে বিদ্যুৎ চলে গেলে একটু আগেভাগেই ছুটি দেওয়া হয়। শ্রমিকরা পৌনে ২টার দিকে আবার কাজে ফেরেন। ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে আসে। কাজ শুরুর পর তাঁরা আড়াইটার দিকে দেখতে পান, দোতলার বাথরুমের পাশে গুদামঘরের দিকে আগুন জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে গার্মেন্টকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করেন। কারখানার দুটি গেটের মধ্যে একটি তালাবদ্ধ ছিল। খোলা ছিল শুধু লোহার সরু সিঁড়িটি। সিঁড়িটি দিয়ে একসঙ্গে দু-তিনজনের বেশি নামা যায় না, সেখানে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হলে কয়েকজন পদদলিত হয়ে গুরুতর আহত হন। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন এবং ভয়ে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন আরো অনেকে। তাঁদের উদ্ধার করে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আরেকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যজনকে ঘটনাস্থল থেকেই মৃত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা বাড়ি নিয়ে যান।
গার্মেন্টকর্মী লিপি আক্তার কালের কণ্ঠকে জানান, আগুন লাগার পরপরই কারখানা ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এক দিকে ধোঁয়া অন্যদিকে অন্ধকার থাকার কারণে সিঁড়িটিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। শেষ পর্যন্ত তিনিসহ অন্যরা নেমে আসতে সক্ষম হন।
গতকাল বিকেলে গার্মেন্টের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিপি আক্তার। তিনি বলেন, 'আগুন দেখার পরই আমরা নামার লাইগ্যা দৌড়াদৌড়ি শুরু করি। কিন্তু আমি বাইর অইতে পারলেও অনেকেই পারে নাই। তারা মইরা গেছে।'
এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিহত প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা তুলে দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০ সদস্যের একটি দল তদারকিতে সহায়তা করে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, 'স্বজন হারানোর বেদনা কতটা কষ্টের, এটা আমি বুঝি। আমি আমার সন্তান হারিয়েছি। যে সাতজন মারা গেছেন, তাঁরা আমার বোনের মতো, সন্তানের মতো। তাঁদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত সহাযোগিতা করা হবে।' তিনি আরো বলেন, 'এই নির্মম ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা তদন্ত করতে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিকের গাফিলতি ও গেট তালাবদ্ধের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কারখানা ও শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, 'আবাসিক এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট কারখানা উচ্ছেদ করা হবে। এখন থেকে আবাসিক এলাকায় আর কোনো গার্মেন্ট কারখানা গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না। এসব কারখানাকে শিল্পাঞ্চলে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।' তিনি আরো বলেন, শনিবারের ঘটনা শুধু শর্ট সার্কিট থেকে নাকি নাশকতা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক জানান, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পদদলিত হয়ে নিহত পাঁচজনের দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগের বারান্দায়। সেখানে তাঁদের স্বজনরা আহাজারি করছেন। নাসিমা নামের এক গার্মেন্টকর্মীর স্বামী প্রাইভেট কারচালক শফিক কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'সকালে নাসিমা আমারে সাবধানে গাড়ি চালাতে বইলা বাড়ি থিকা বারাইয়্যা নিজেই আমাগো ছাইড়া চইলা গেল। এখন আমার দুই সন্তানের কী অইবো? আমি তাদের কিভাবে মানুষ করব?'
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত জোছনার বাবার নাম কাওসার মিয়া। গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। মোহাম্মদী হাউজিংয়ের ৪ নম্বর সড়কে থাকতেন তিনি। নিহত লাইজুর বাবা আবুল হোসেন জানান, মেয়ের গার্মেন্টে আগুনের খবর পেয়ে তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, তাঁর মেয়েকে ধরাধরি করে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেলে তাঁর লাশ বছিলা রোডের বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।
No comments