জামায়াতের সঙ্গে এখনই যুগপ আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি
জাতীয় সংসদের ভেতরে ও রাজপথে সরকারের কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানালেও যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এই মুহূর্তে যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
যখন জামায়াতের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রশিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারের লৰ্যে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, ঠিক এই মুহূর্তে জামায়াতের নেতারা ছুটে গেলেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে। সরকারের বিরম্নদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় জামায়াত। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আপাতত জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে আগ্রহী নয় বিএনপি। সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের জন্য জনমত গড়ে তোলা ও দল চাঙ্গা করার পরই রাজপথে আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। সরকারকে আরও কিছু সময় দেয়ারও কৌশল নিয়েছে তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কর্মসূচী সরকার কতটুকু বাসত্মবায়ন করতে পারবে, সেই অপেৰাও করছে বিএনপি। তবে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের পৰে সরাসরি সাপাই না গাইলেও বিরোধিতা করছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। শিবিরের তা-বে সারাদেশে যেভাবে চিরম্ননি অভিযান শুরম্ন হয়েছে, তাতে একঘরে হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। রাজনীতিতে শরিক দল বিএনপি ছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের আর কোন বন্ধু নেই। এ জন্যই সরকারের বিরম্নদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার লৰ্যে বিএনপিকে মাঠে নামানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে তারা।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সংসদের ভেতরে ও বাইরে রাজপথে সরকারের কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানাব। তবে বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলতে সময় লাগবে। বড় ধরনের ইসু্য ছাড়া আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হবে কিনা তাও ভাবা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এখনই সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু তা কতটুকু সম্ভব, তা নিয়েও বিএনপির মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। আমরা রাজপথে আছি, সময় হলেই তুমুল আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। কারণ আমাদের দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আগেই ঘোষণা করেছেন আমরা সংসদে যাব, রাজপথেও প্রতিবাদ করব।
জামায়াত-শিবির সংগঠনের ক্যাডাররা বরাবরই হিংস্র। শিবির কর্মীদের ওপরে স্বাভাবিক অবস্থা দেখা গেলেও ভেতরে তার পুরো উল্টো। কিছুদিন রগকাটা কর্মসূচী বন্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আবার শিৰা প্রতিষ্ঠানে রগকাটা ও হত্যার রাজনীতি শুরম্ন করেছে শিবির ক্যাডাররা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দিতেই চলছে শিবিরের এই হত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর সরকার চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে অনড়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়ার লৰ্যেই বিশেষ কৌশলে শিবিরের ক্যাডাররা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে মেধাবী ছাত্রলীগ কর্মীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারম্নককে হত্যা করা হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ছাড়াও সাধারণ ছাত্রের রগ কেটে দিয়েছে শিবিরের ক্যাডাররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিৰাঙ্গনে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের হোতা শিবির ক্যাডাররা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী তা-ব। জাতীয় সংসদে দাবি উঠছে রগকাটা রাজনীতির সংগঠন জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। একইভাবে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে দাবি উঠছে, সামাজিকভাবে জামায়াতকে বয়কট করা হোক। এ অবস্থায় সারাদেশে শিবিরের বিরম্নদ্ধে চলছে চিরম্ননি অভিযান। রাজশাহী নগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আতাউর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারম্নক হত্যা মামলার আসামি শিবিরকর্মী শাহীন গুলিতে নিহত হয়। এর প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবির সংগঠন।
মহাজোট সরকারের কেবল এক বছর পার হলো। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের এক বছরের মাথায় আন্দোলন যদি সফল না হয়, তখন বিএনপি আরও ৰতিগ্রসত্ম হবে। এ আশঙ্কা থেকেই আন্দোলনে যেতে বিএনপির অনেকেই সায় দিচ্ছে না। সরকারকে সময় দেয়ার সঙ্গে বিভিন্নভাবে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তারা। একদিকে সংসদের ভেতরে দলীয় সংসদ সদস্যরা সরকারের কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানাবে। অন্যদিকে সংসদের বাইরে রাজপথেও বিভিন্ন ইসু্যতে কর্মসূচী অব্যাহত রাখার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিএনপি।
১০ মাস পর বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের সঙ্গে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর দুই জন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) এক জন সদস্য অধিবেশনে যোগ দেন। মাত্র চার ঘণ্টা সংসদে ছিল বিএনপি। প্রথম দিনেই অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেছে তারা। রবিবার বিকাল তিনটা পর্যনত্ম অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে। ওইদিনও বিএনপি অধিবেশনে প্রবেশ করে সরকারের কর্মকা-ের বিরম্নদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করলেও সংসদে যোগ দেয়ার কারণে বিএনপিকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের মানুষ। দলীয় নেতাকর্মীর একই দাবি রাজপথে কর্মসূচী দেয়ার পাশাপাশি সংসদেও থাকতে হবে বিএনপিকে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৩০০ বিধিতে বক্তব্য রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে 'খুনী মোশতাক-জিয়া চক্র স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে লালন-পালন এবং রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করছে বলে অভিযোগ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান বিরোধী দলের সদস্যরা। মাইক ছাড়াই দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন তাঁরা। বিরোধী দলের সদস্যরা ফোর চাইলে স্পীকার বলেন, ৩০০ বিধির ওপর বক্তব্য দেয়ার নিয়ম নেই, তখনই টেবিল চাপড়ে, ফাইল ছুড়ে হৈ-চৈ করে অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন তাঁরা। ওয়াক আউটের পর এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপির সদস্যরা। এদিকে বিএনপি সংসদে ফেরায় স্বাগত জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি। বিএনপির সিদ্ধানত্ম প্রশংসনীয় বলে উলেস্নখ করেন তিনি। সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাও স্বাগত জানিয়েছে বিএনপিকে। জাতীয় সংসদ হচ্ছে সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকা-ের প্রতিবাদ সংসদ অধিবেশনেই করা উচিত।
No comments