কম খরচে ভাল স্বাস্থ্য সেবার উপায় বের করতে হবে ॥ অমর্ত্য সেন
দণি এশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও নারীদের প্রতি অবহেলাকে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে সামনে এনেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন।
তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকল্প নেই। আর কম খরচে কিভাবে ভাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, তার উপায় বের করতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে নারীদের প্রতি অবহেলা। দণি এশিয়ায় এ সমস্যা প্রকট রূপ নিয়েছে। এতে কম ওজন ও অপরিপক্ক শিশু জন্মের ঘটনা বাড়ছে। জন্মের পরই একটি শিশুকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগের শিকার হতে হচ্ছে। আর বেড়ে চলেছে শিশু ও মাতৃমৃতু্যর হার। এভাবে জন্মের শুরম্নু থেকেই একটি শিশুকে স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দণি এশিয়ার যেকোন দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ।শনিবার রাজধানীর মহাখালীস্থ ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশের শিা ও স্বাস্থ্যসেবা শীর্ষক দু'দিনের ডায়ালগের প্রথম দিনের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ ডায়ালগের আয়োজন করেছে যৌথভাবে ব্র্যাক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ইউনিসেফের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ক্যারেল ডে রয়, হেলথ ওয়াচের কনভেনর অধ্যাপক রওনক জাহান । এর আগে ডায়ালগে অংশ নেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। ব্রিফিংয়ের আগে 'বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ রিপোর্ট ২০০৯: কেমন চলছে স্বাস্থ্যখাতের পরিচালনা' শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশনার উদ্বোধন করেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেন, দণি এশিয়ার প্রতিটি দেশে অভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা বিরাজ করছে। মৌখিক কোন ফমর্ুলা দিয়ে এর সমাধান দেয়া সম্ভব হবে না। থাকতে হবে সরকারী ও বেসরকারী বহুমুখী উদ্যোগ ও তার যথাযথ বাসত্মবায়ন। আর এ েেত্র জনগণের আগ্রহ জেনে-বুঝে নিতে হবে সিদ্ধানত্ম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন আনয়নে অর্থনৈতিক অবস্থা একটি বড় বিষয়। অর্থ থাকলে ভাল চিকিৎসা পাওয়া আজ অসম্ভবের কিছুই নয়। কিন্তু টাকা না থাকলে ভাল চিকিৎসা ও চিকিৎসক না পাওয়া যেন আজ সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে। নানাদিক থেকে আলোচনা করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটাতে হবে বলে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মনে করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতির বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতা করা ঠিক কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনকল্যাণমূলক কিছু থাকলে বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতা থাকলেও তা হবে ন্যায্যতার প্রতি অবহেলা। ইন্দো-বাংলা ডায়ালগের মাধ্যমে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই দু'দেশের সম্পর্কে দূরত্ব থাকলে তা কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে এমন সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ডায়ালগের ওপর নির্ভর করে না। দু'দেশের ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় এনে সংশিস্নষ্ট বিষয়গুলোর ওপর ডায়ালগ ও সমঝোতায় আসতে হবে বলে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন মনে করেন। এর আগে ডায়ালগ অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সামাজিক ব্যবসার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সমন্বিত সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। একমাত্র মুনাফা লাভ নয়, সামাজিক ব্যবসার মধ্যে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
অন্যদিকে, 'বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ রিপোর্ট ২০০৯: কেমন চলছে স্বাস্থ্যখাতের পরিচালনা' শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে এখনও সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। স্বাস্থ্যসেবা সংশিস্নষ্ট গুরম্নত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সংবিধিবদ্ধ কাঠামোয় গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব রয়েছে। আর অব্যাহত রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে কার্যকর এবং অনেকটাই মতাহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীর অধিকার রার বিষয়টি অবহেলিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যখাতে পেশাগত নৈতিকতাও সম্পর্কিত শিকদের েেত্রও অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। চলছে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধ বিক্রির আগ্রাসী তৎপরতা। শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ সরকারী স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান ভাল নয়।
No comments