ভারত-পাকিস্তান- সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে দিল্লিকেই by কুলদীপ নায়ার
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে অবদানের জন্য এ বছর মাদার তেরেসা পুরস্কার গ্রহণ করার সময় আমি আনন্দিত ছিলাম এই ভেবে যে আমার অবদানের এই স্বীকৃতির নিশ্চয়ই কিছু দৃশ্যমান প্রমাণ আছে।
সত্যিই, দুই দেশের মধ্যে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে: চিকিৎসক, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও খেলোয়াড়দের আসা-যাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
আমার মনে পড়ে, আজ থেকে ২০ বছর আগে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম উদ্যাপনের জন্য ১৪-১৫ আগস্টের রাতে ওয়াগা সীমান্তে প্রথমবারের মতো যখন মোমবাতি জ্বালাই, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৫ জন মানুষ। এই বছর দেখলাম সীমান্তের এই পারে জনসমুদ্র আর পাকিস্তান অংশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। পাকিস্তান এই উদ্যাপন শুরু করেছে তিন বছর আগে থেকে। দুই দেশের মধ্যে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়ছিল দ্রুতগতিতে। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছিল।
তারপর পাকিস্তান থেকে এলেন একজন রেহমান মালিক। তিনি এসে সবকিছু প্রায় লন্ডভন্ড করে দিলেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে ইসলামাবাদের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে তার সবকিছুই তিনি করলেন। আমাদের রাজধানীতে তিনি থাকলেন মাত্র তিন দিন, কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই জ্বালিয়ে দিলেন সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ঘৃণার আগুন। দুই দেশের চরমপন্থীরাও বোধ হয় এর চেয়ে বেশি চায়নি।
প্রথমে তিনি বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে তুলনা করলেন মুম্বাইয়ের বোমা হামলার সঙ্গে। তিনি বললেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজটি হিন্দুদের আর মুম্বাই হামলা (২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর) মুসলমানদের। ভারত বিভাগের সময়কার রক্তপাতের স্মৃতি তিনি উসকে দিলেন। আবার তুললেন দ্বিজাতিতত্ত্বের কথা, খোদ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহই স্বাধীনতার পর যে তত্ত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
তারপর রেহমান মালিক তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিলেন ক্যাপটেন সৌরভ কালিয়ার বাবার দুঃখবেদনাকে। কারগিল যুদ্ধে নিহত ক্যাপটেন সৌরভের লাশ তাঁর বাবা পেয়েছিলেন মৃত্যুর ২০ দিন পর। নির্যাতনের চিহ্নময় লাশটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল কাটা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাপটেন সৌরভের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটার কথা অস্বীকার করেছিল, কিন্তু ভারতের সন্দেহ নিরসনের স্বার্থে হলেও তারা বিষয়টি তদন্ত করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। রেহমান মালিককে চেপে ধরা হলে তিনি জানালেন, তাঁর মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকের আছে কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
যা হোক, রেহমান মালিকের এই ভারত সফর এবং লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান সৈয়দ আজহারের ভূমিকা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা কেউ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেনি। মালিক এমন কথাও বলেছেন যে সৈয়দ আজহারকে কখনোই মুম্বাই হামলার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এতে নয়াদিল্লি কেবলই ক্ষুব্ধ হয়েছে। ক্ষোভ এতই গভীর ছিল যে রেহমান মালিকের সফর শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে বা একটি যৌথ বিবৃতি দিতেও নয়াদিল্লি রাজি হয়নি। কিন্তু সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যে হিন্দু চরমপন্থী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল এবং মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও টাউনের একটি মসজিদে যে বোমা পেতেছিল, নয়াদিল্লি তাকে গ্রেপ্তার করার কৃতিত্ব নিতে পারত।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন, রেহমান মালিকের ওই ক্ষতিকর সফরের ফলে তা কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট পাকিস্তানি চিকিৎসক খলিল চিশতিকে মুক্তি দেন। তাঁর পরিবারের ভারতীয় অংশের একজন সদস্য খুন হওয়ার সময় তিনি ভারতে তাঁদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন বলে ওই ঘটনার সঙ্গে ভুল করে তিনি জড়িয়ে পড়েন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মুক্তি দিলেও সরকারের আচরণ ছিল অনড় এবং অতিমাত্রায় আইনানুগ। অনেক মানবাধিকারকর্মী সরকারকে বলেছিলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে খলিল চিশতির যদি কোনো ভূমিকা থেকে থাকে তবে তা এতই সামান্য যে ধর্তব্য নয়।
প্রথম দিকে রাজস্থানের সরকার মানবাধিকারকর্মীদের এই বক্তব্যকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছিল এবং চিশতিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য গভর্নরের কাছে সুপারিশ করেছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর শিবরাজ পাতিল সেই সময় রাজস্থানের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ছিলেন অনড়, রাজস্থান রাজ্যসরকারের সুপারিশ তিনি নাকচ করে দেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট ও আমি তখন চণ্ডীগড়ে শিবরাজ পাতিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি; আমরা তাঁকে বলি, খলিল চিশতির বয়স ৮০ বছর, তিনি একজন হূদেরাগী, তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। কিন্তু গভর্নরের মন গলে না, তিনি বরং পাল্টা যুক্তি দেখান যে খলিল চিশতি জামিনে ছিলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁকে কিছু সময় কারাগারে বাস করতে হবে।
রেহমান মালিক নয়াদিল্লি সফরের সময় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের ভিসার প্রয়োজন হবে না এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানপ্রক্রিয়া সহজতর করা হবে। এই চুক্তির বাস্তবায়নের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ছোটখাটো ছাড়ও অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এই উদ্যোগকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে উভয় দেশের আরও বেশিসংখ্যক মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাবে; আগের বিধানে এটা সীমাবদ্ধ ছিল তিনটি শহরের মধ্যে, এখন তা করা হয়েছে পাঁচটি শহরের জন্য। প্রীতি ও শুভেচ্ছার এই কাফেলা আরও এগিয়ে যাবে যখন সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। নয়াদিল্লি তিন হাজার পাকিস্তানিকে ভিসা দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমার মতে, ভিসা দেওয়া উচিত কমপক্ষে ১০ হাজার ব্যক্তিকে।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ভারতের সংবাদমাধ্যম যতটা গুরুত্বের সঙ্গে তা প্রচার করে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ততটা করে না। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, তখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কারণেই বিজেপি তার মুখ লুকাতে পারেনি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজনৈতিকভাবে যতই শক্তিশালী হোন না কেন, ২০০২ সালের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা হওয়ার কৃতিত্বও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। তাঁর মামলাগুলোর রায়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের একটি পরিবর্তন আমি দেখতে পাই। দুই সরকারের নির্বিকার মনোভাব সত্ত্বেও উভয় দেশের জনসাধারণ কখনোই বৈরিতা চায়নি। এখন তারা তাদের অঙ্গীকারে সাহসী হয়ে উঠেছে; দেশ বিভাগের সময় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানির জন্য তারা এখন অনুতপ্ত। উভয় দেশের জনসাধারণকে যা করতে হবে, তা হলো নিজ নিজ সরকারকে সামরিক ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য করা। এমনকি মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্যয়ও যদি কমানো হয়, তাহলে বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলোর জন্য কোটি কোটি রুপির সাশ্রয় হবে।
পৃথিবীর মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারত ও পাকিস্তানে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটলে উভয় পক্ষের সামরিক বাজেট হ্রাস করা সম্ভব হবে। উদ্যোগটা শুরু করতে হবে নয়াদিল্লিকে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
আমার মনে পড়ে, আজ থেকে ২০ বছর আগে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম উদ্যাপনের জন্য ১৪-১৫ আগস্টের রাতে ওয়াগা সীমান্তে প্রথমবারের মতো যখন মোমবাতি জ্বালাই, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৫ জন মানুষ। এই বছর দেখলাম সীমান্তের এই পারে জনসমুদ্র আর পাকিস্তান অংশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। পাকিস্তান এই উদ্যাপন শুরু করেছে তিন বছর আগে থেকে। দুই দেশের মধ্যে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়ছিল দ্রুতগতিতে। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছিল।
তারপর পাকিস্তান থেকে এলেন একজন রেহমান মালিক। তিনি এসে সবকিছু প্রায় লন্ডভন্ড করে দিলেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে ইসলামাবাদের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে তার সবকিছুই তিনি করলেন। আমাদের রাজধানীতে তিনি থাকলেন মাত্র তিন দিন, কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই জ্বালিয়ে দিলেন সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ঘৃণার আগুন। দুই দেশের চরমপন্থীরাও বোধ হয় এর চেয়ে বেশি চায়নি।
প্রথমে তিনি বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে তুলনা করলেন মুম্বাইয়ের বোমা হামলার সঙ্গে। তিনি বললেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজটি হিন্দুদের আর মুম্বাই হামলা (২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর) মুসলমানদের। ভারত বিভাগের সময়কার রক্তপাতের স্মৃতি তিনি উসকে দিলেন। আবার তুললেন দ্বিজাতিতত্ত্বের কথা, খোদ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহই স্বাধীনতার পর যে তত্ত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
তারপর রেহমান মালিক তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিলেন ক্যাপটেন সৌরভ কালিয়ার বাবার দুঃখবেদনাকে। কারগিল যুদ্ধে নিহত ক্যাপটেন সৌরভের লাশ তাঁর বাবা পেয়েছিলেন মৃত্যুর ২০ দিন পর। নির্যাতনের চিহ্নময় লাশটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল কাটা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাপটেন সৌরভের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটার কথা অস্বীকার করেছিল, কিন্তু ভারতের সন্দেহ নিরসনের স্বার্থে হলেও তারা বিষয়টি তদন্ত করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। রেহমান মালিককে চেপে ধরা হলে তিনি জানালেন, তাঁর মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকের আছে কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
যা হোক, রেহমান মালিকের এই ভারত সফর এবং লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান সৈয়দ আজহারের ভূমিকা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা কেউ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেনি। মালিক এমন কথাও বলেছেন যে সৈয়দ আজহারকে কখনোই মুম্বাই হামলার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এতে নয়াদিল্লি কেবলই ক্ষুব্ধ হয়েছে। ক্ষোভ এতই গভীর ছিল যে রেহমান মালিকের সফর শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে বা একটি যৌথ বিবৃতি দিতেও নয়াদিল্লি রাজি হয়নি। কিন্তু সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যে হিন্দু চরমপন্থী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল এবং মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও টাউনের একটি মসজিদে যে বোমা পেতেছিল, নয়াদিল্লি তাকে গ্রেপ্তার করার কৃতিত্ব নিতে পারত।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন, রেহমান মালিকের ওই ক্ষতিকর সফরের ফলে তা কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট পাকিস্তানি চিকিৎসক খলিল চিশতিকে মুক্তি দেন। তাঁর পরিবারের ভারতীয় অংশের একজন সদস্য খুন হওয়ার সময় তিনি ভারতে তাঁদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন বলে ওই ঘটনার সঙ্গে ভুল করে তিনি জড়িয়ে পড়েন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মুক্তি দিলেও সরকারের আচরণ ছিল অনড় এবং অতিমাত্রায় আইনানুগ। অনেক মানবাধিকারকর্মী সরকারকে বলেছিলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে খলিল চিশতির যদি কোনো ভূমিকা থেকে থাকে তবে তা এতই সামান্য যে ধর্তব্য নয়।
প্রথম দিকে রাজস্থানের সরকার মানবাধিকারকর্মীদের এই বক্তব্যকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছিল এবং চিশতিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য গভর্নরের কাছে সুপারিশ করেছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর শিবরাজ পাতিল সেই সময় রাজস্থানের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ছিলেন অনড়, রাজস্থান রাজ্যসরকারের সুপারিশ তিনি নাকচ করে দেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট ও আমি তখন চণ্ডীগড়ে শিবরাজ পাতিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি; আমরা তাঁকে বলি, খলিল চিশতির বয়স ৮০ বছর, তিনি একজন হূদেরাগী, তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। কিন্তু গভর্নরের মন গলে না, তিনি বরং পাল্টা যুক্তি দেখান যে খলিল চিশতি জামিনে ছিলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁকে কিছু সময় কারাগারে বাস করতে হবে।
রেহমান মালিক নয়াদিল্লি সফরের সময় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের ভিসার প্রয়োজন হবে না এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানপ্রক্রিয়া সহজতর করা হবে। এই চুক্তির বাস্তবায়নের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ছোটখাটো ছাড়ও অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এই উদ্যোগকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে উভয় দেশের আরও বেশিসংখ্যক মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাবে; আগের বিধানে এটা সীমাবদ্ধ ছিল তিনটি শহরের মধ্যে, এখন তা করা হয়েছে পাঁচটি শহরের জন্য। প্রীতি ও শুভেচ্ছার এই কাফেলা আরও এগিয়ে যাবে যখন সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। নয়াদিল্লি তিন হাজার পাকিস্তানিকে ভিসা দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমার মতে, ভিসা দেওয়া উচিত কমপক্ষে ১০ হাজার ব্যক্তিকে।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ভারতের সংবাদমাধ্যম যতটা গুরুত্বের সঙ্গে তা প্রচার করে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ততটা করে না। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, তখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কারণেই বিজেপি তার মুখ লুকাতে পারেনি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজনৈতিকভাবে যতই শক্তিশালী হোন না কেন, ২০০২ সালের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা হওয়ার কৃতিত্বও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। তাঁর মামলাগুলোর রায়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের একটি পরিবর্তন আমি দেখতে পাই। দুই সরকারের নির্বিকার মনোভাব সত্ত্বেও উভয় দেশের জনসাধারণ কখনোই বৈরিতা চায়নি। এখন তারা তাদের অঙ্গীকারে সাহসী হয়ে উঠেছে; দেশ বিভাগের সময় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানির জন্য তারা এখন অনুতপ্ত। উভয় দেশের জনসাধারণকে যা করতে হবে, তা হলো নিজ নিজ সরকারকে সামরিক ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য করা। এমনকি মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্যয়ও যদি কমানো হয়, তাহলে বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলোর জন্য কোটি কোটি রুপির সাশ্রয় হবে।
পৃথিবীর মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারত ও পাকিস্তানে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটলে উভয় পক্ষের সামরিক বাজেট হ্রাস করা সম্ভব হবে। উদ্যোগটা শুরু করতে হবে নয়াদিল্লিকে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
No comments