সিট নাই মহিলা তুলিস না by সাবিনা ইয়াসমিন
তখন দুপুর। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেটে এসে থামল ৮ নম্বর বাস। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই নাজনীনকে বাসে উঠতে দেওয়া হলো না। কন্ডাক্টরের হাঁক, ‘মহিলা তুলিস না। বাসে মহিলা সিট নাই।’ এটা নাজনীনসহ কর্মজীবী নারীদের প্রতিদিনের ঘটনা, যাঁরা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন।
নাজনীন বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। সারা দিন অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থাকেন অসহায়ের মতো। একটা বাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন অফিস ফেরত নারীরা। জানলাম, এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। ‘মহিলা সিটে পুরুষ বসে থাকেন।’ তাহমিনা আখতারের কণ্ঠে আক্ষেপের সুর, ‘আমরা তো বাসে সিট চাই না, উঠতে চাই, দাঁড়িয়েই বাড়ি পৌঁছাতে পারব।’ তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে আফরোজা বেগম বলেন, ‘সিট নেই, এটা মেনে নিয়েই পথে বের হয়েছি। কিন্তু আমরা নারী, শুধু এ কারণে আমাদের বাসে উঠতে দেওয়া হবে না, এটা কেন?’ সব কথা-অনুযোগ থেমে যায় ৮ নম্বরের আরেকটি বাস দেখে। কিন্তু এবারও ভাগ্য খারাপ। বাদুড়ঝোলা মানুষের ভিড়ে বাসের পা-দানিতে পা রাখার জায়গাটুকুও পেলেন না তাহমিনা। অন্যদিকে, বাসায় দুই সন্তান একা— এই ভাবনায় অস্থির হয়ে ঘড়ি দেখেন নাজনীন। এ বিষয়ে নারীনেত্রী ও কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিরীন আখতার বলেন, ‘আমাদের দেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাতে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মজীবী নারীদের যাতায়াতের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মাঝে কয়েক দিন মহিলা বাসের নামে কিছু প্রহসনমূলক ব্যবস্থা হয়েছিল, যা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নারীদের জন্য বাসে যে কয়েকটা আলাদা আসন আছে, তা-ও পর্যাপ্ত নয়। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। আমি তো মনে করি, গণপরিবহনে নির্দিষ্ট আসনসংখ্যার বদলে ৫০ ভাগ আসনই নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত। সবকিছুর পর পুরুষদের সহমর্মী হতে হবে।’ সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে নতুন প্রজন্মের কর্মজীবী নারীদের মধ্যে। তাঁরা মনে করেন, পরিবেশটাই এমন হতে হবে, যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে বাসে উঠতে পারেন, যাতায়াত করতে পারেন।
মিরপুর এলাকা। সরকারি বাংলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর একদল শিক্ষার্থীকে দেখা গেল বাসের অপেক্ষায়। চারজন ছেলে নিজেদের উদ্যোগে বাসের দরজা খালি করে সহপাঠী মেয়েদের বাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপমহাব্যবস্থাপক খান কামাল উদ্দিন জানান, মহিলা বাস সার্ভিস শুধু সকালের জন্য। যদিও এটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
তাহলে কি এমন বাদুড়ঝোলা হয়েই প্রতিদিন নারীদের যাতায়াত করতে হবে?
মিরপুর এলাকা। সরকারি বাংলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর একদল শিক্ষার্থীকে দেখা গেল বাসের অপেক্ষায়। চারজন ছেলে নিজেদের উদ্যোগে বাসের দরজা খালি করে সহপাঠী মেয়েদের বাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপমহাব্যবস্থাপক খান কামাল উদ্দিন জানান, মহিলা বাস সার্ভিস শুধু সকালের জন্য। যদিও এটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
তাহলে কি এমন বাদুড়ঝোলা হয়েই প্রতিদিন নারীদের যাতায়াত করতে হবে?
No comments