মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই -দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-চা ফেরি করেন যুদ্ধাহত রশিদ by জয়নাল আবেদীন
পাকিস্তানি হানাদারদের ছোড়া গুলিতে জখম হওয়া পা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা আবদুর রশিদ। জীবিকার তাগিদে চা ফেরি করেন পথে পথে।
রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে শরীরে। কষ্টটা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায়, তখন ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হন অন্যের কাছে হাত পাততে।
ভোলার দৌলতখান থানার চরপাতা গ্রামের আবদুর রশিদ বাল্যকালেই গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায় কাজের সন্ধানে। একসময় মা-বাবা দুজনেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। রশিদ কাজ নেন পুরান ঢাকার একটি চায়ের দোকানে। কয়েক বছর পর ওয়াপদার কুষ্টিয়া কার্যালয়ে পিকআপ চালকের চাকরি পান তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রশিদের চেতনায়ও নাড়া পড়ে। চলে যান তিনি ভারতে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন। হাতে তুলে নেন আগ্নেয়াস্ত্র। খোন্দকার নুরুন্নবীর অধীনে যুদ্ধ করেন তিনি কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে।
একাত্তরের নভেম্বরের ঘটনা। কুষ্টিয়ার বাউন্দিতে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে চলছিল সম্মুখযুদ্ধ। দুই পক্ষের মধ্যে অনেক গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে রশিদের বাঁ পায়ে হাঁটুর ওপর বিদ্ধ হয় হানাদারদের দুটি গুলি। কোমরে বাঁধা গামছা দিয়ে শক্ত করে পা বেঁধে দেন সহযোদ্ধারা। সেদিন আর যুদ্ধ করা হলো না রশিদের। দুই দিন পর আবারও রণক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠেন রশিদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পা থেকে গুলি দুটি বের করা হয়।
স্বাধীন দেশে আবার জীবিকার সন্ধানে ছোটেন রশিদ। এবার কাজ পান মতিঝিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে গাড়িচালকের। কিন্তু সেখানেও চরম বঞ্চনার শিকার হন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর চাকরি করেও স্থায়ী হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ওই পদে স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে ১০ বছর পর অবসর নেন। কিন্তু নানা জটিলতায় বঞ্চিত হলেন পেনশন থেকে। চাকরিকালে জমানো ৫০ হাজার টাকার একাংশ দিয়ে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন; বাকি টাকা ভাগ করে দেন তিন ছেলের মধ্যে। বেকার রশিদের জীবনে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। ভাড়ায় অটোরিকশা চালান দুই বছর। এক পর্যায়ে শরীরের শক্তি কমে যাওয়ায় সেটাও আর হয় না। এবার শুরু হয় ফেরি করে চা বিক্রির পালা।
রশিদ বলেন, তিন ছেলে বিয়ে করে ঢাকার একটি বস্তিতে থাকেন। তাঁরা সবাই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাবার খোঁজ নেন না কেউ। তাই বাঁচার তাগিদে রশিদ এখন খেলার মাঠে, ফুটপাতে, রাস্তাঘাটে চা-ভর্তি ফ্লাস্ক নিয়ে ঘোরেন। ফজরের নামাজ সেরে বেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে রশিদের চা ফেরি করার কাজ। ১০০ থেকে ১৫০ টাকার চা বিক্রি হয় প্রতিদিন। এ দিয়ে কোনো মতে দু-বেলা দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থা হয়।
রাজধানীর ভাটারা থানার ছোলমাইদ এলাকায় থাকেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা। কখনো ভাতিজার বাসায়, কখনো অভাবী বোনের বাসায় রাত কাটে তাঁর। গত বৃহস্পতিবার ভাতিজার ভাড়া ঘরে বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাম পায়ের ক্ষতস্থানটি দেখিয়ে রশিদ বলেন, 'যুদ্ধের সময় আমার গুলিতেই মারা গেছে অনেক হানাদার। কিন্তু ওই হানাদারের গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েও পিছপা হইনি। ওদের গুলিতে জখম হওয়া এ স্থানটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে আজও কাঁদায় আমাকে।' তিনি আরো বলেন, 'জখম হওয়া এ জায়গায় খুব ব্যথা হয়। এ ছাড়া আছে শ্বাসকষ্ট। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কিন্তু ওষুধ খেতে পারি না। শরীর বেশি খারাপ লাগলে ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়ে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।'
ছোলমাইদ এলাকার বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই অনেকভাবে সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু রশিদ নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেননি। নুয়ে পড়া মানুষটির পা দুটি যেন আর চলতে চায় না।
ভোলার দৌলতখান থানার চরপাতা গ্রামের আবদুর রশিদ বাল্যকালেই গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায় কাজের সন্ধানে। একসময় মা-বাবা দুজনেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। রশিদ কাজ নেন পুরান ঢাকার একটি চায়ের দোকানে। কয়েক বছর পর ওয়াপদার কুষ্টিয়া কার্যালয়ে পিকআপ চালকের চাকরি পান তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রশিদের চেতনায়ও নাড়া পড়ে। চলে যান তিনি ভারতে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন। হাতে তুলে নেন আগ্নেয়াস্ত্র। খোন্দকার নুরুন্নবীর অধীনে যুদ্ধ করেন তিনি কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে।
একাত্তরের নভেম্বরের ঘটনা। কুষ্টিয়ার বাউন্দিতে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে চলছিল সম্মুখযুদ্ধ। দুই পক্ষের মধ্যে অনেক গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে রশিদের বাঁ পায়ে হাঁটুর ওপর বিদ্ধ হয় হানাদারদের দুটি গুলি। কোমরে বাঁধা গামছা দিয়ে শক্ত করে পা বেঁধে দেন সহযোদ্ধারা। সেদিন আর যুদ্ধ করা হলো না রশিদের। দুই দিন পর আবারও রণক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠেন রশিদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পা থেকে গুলি দুটি বের করা হয়।
স্বাধীন দেশে আবার জীবিকার সন্ধানে ছোটেন রশিদ। এবার কাজ পান মতিঝিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে গাড়িচালকের। কিন্তু সেখানেও চরম বঞ্চনার শিকার হন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর চাকরি করেও স্থায়ী হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ওই পদে স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে ১০ বছর পর অবসর নেন। কিন্তু নানা জটিলতায় বঞ্চিত হলেন পেনশন থেকে। চাকরিকালে জমানো ৫০ হাজার টাকার একাংশ দিয়ে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন; বাকি টাকা ভাগ করে দেন তিন ছেলের মধ্যে। বেকার রশিদের জীবনে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। ভাড়ায় অটোরিকশা চালান দুই বছর। এক পর্যায়ে শরীরের শক্তি কমে যাওয়ায় সেটাও আর হয় না। এবার শুরু হয় ফেরি করে চা বিক্রির পালা।
রশিদ বলেন, তিন ছেলে বিয়ে করে ঢাকার একটি বস্তিতে থাকেন। তাঁরা সবাই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাবার খোঁজ নেন না কেউ। তাই বাঁচার তাগিদে রশিদ এখন খেলার মাঠে, ফুটপাতে, রাস্তাঘাটে চা-ভর্তি ফ্লাস্ক নিয়ে ঘোরেন। ফজরের নামাজ সেরে বেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে রশিদের চা ফেরি করার কাজ। ১০০ থেকে ১৫০ টাকার চা বিক্রি হয় প্রতিদিন। এ দিয়ে কোনো মতে দু-বেলা দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থা হয়।
রাজধানীর ভাটারা থানার ছোলমাইদ এলাকায় থাকেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা। কখনো ভাতিজার বাসায়, কখনো অভাবী বোনের বাসায় রাত কাটে তাঁর। গত বৃহস্পতিবার ভাতিজার ভাড়া ঘরে বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাম পায়ের ক্ষতস্থানটি দেখিয়ে রশিদ বলেন, 'যুদ্ধের সময় আমার গুলিতেই মারা গেছে অনেক হানাদার। কিন্তু ওই হানাদারের গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েও পিছপা হইনি। ওদের গুলিতে জখম হওয়া এ স্থানটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে আজও কাঁদায় আমাকে।' তিনি আরো বলেন, 'জখম হওয়া এ জায়গায় খুব ব্যথা হয়। এ ছাড়া আছে শ্বাসকষ্ট। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কিন্তু ওষুধ খেতে পারি না। শরীর বেশি খারাপ লাগলে ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়ে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।'
ছোলমাইদ এলাকার বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই অনেকভাবে সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু রশিদ নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেননি। নুয়ে পড়া মানুষটির পা দুটি যেন আর চলতে চায় না।
No comments