সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে
সম্প্রতি রাজধানীতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী জাতীয় সম্মেলন’ ২০১২। দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক এ সম্মেলনের ডাক দেন।
দেশে যে মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বিনষ্টের উদ্যোগ নিয়েছে; ঠিক সেই সময়ে কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষের এ মহৎ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই মহৎ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তাঁরা মূলত জাতির চেতনাকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ধীরে ধীরে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল সারাদেশে বিস্তার করেছে। অতীতে সামরিক স্বৈরাচারী সরকারগুলো আমাদের পবিত্র সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে কলঙ্কিত করে। সে ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আবার জোরদার হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা অপেক্ষা করছে, কবে বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর হবে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্য জামায়াত দেশব্যাপী জঙ্গী হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও তা-বের সূচনা করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির প্রতি নৈতিক সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দলও। এর ফলে বিএনপির দ্বিমুখী চরিত্র সবার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবার জঙ্গী ক্যাডাররা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তাদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। সুতরাং এসব সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা।
এবার সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী জাতীয় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী আনতে হবে। সংশোধনীতে তারা জামায়াতসহ সকল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিষিদ্ধের আহ্বান জানান। সরকার দেশে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এসব দাবি বিবেচনা করছে বলে তারা মনে করেন। দেশকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কবল থেকে রক্ষার জন্য সরকারকে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। জামায়াত বেশ কিছুকাল ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদোহের কাজ। পুলিশ বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে মূলত দেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়। তাই স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
No comments