কাজটা সেবা ও মানবতার by সাখাওয়াত হোসেন

ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হবেন। কিন্তু কৃষক বাবার আর্থিক অভাবসহ বিভিন্ন কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।তবু সেবা ও কাজের সুযোগ একসঙ্গে—এই ভাবনা রয়ে গেছে মনে। তাই ভর্তি হয়ে গেলেন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সে।পরবর্তী সময়ে বিএসএসসি ইন নার্সিং কোর্সও সম্পন্ন করলেন।
বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কার্ডিয়াক হাসপাতালে কর্মরত আছেন। এভাবেই নার্সিং পেশায় আসার কথা জানালেন বগুড়ার মেয়ে খালেদা আক্তার। বললেন, ‘রোগীকে সেবা ও ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার কাজটা যে কত আনন্দের, আত্মতৃপ্তির তা শুধু নিবেদিতপ্রাণ নার্সরাই জানেন।’
খালেদা আক্তারের মতো যাঁরা কাজের মাধ্যমে মানবসেবা করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য রয়েছে চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিংয়ে পড়ার সুযোগ। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সম্প্রতি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সাতটি সরকারি কলেজের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
এ প্রসঙ্গে ঢাকা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ইরা দিব্রা জানান, ২০১০ সালের পর বিজ্ঞান শাখায় জীববিদ্যাসহ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই শুধু আবেদন করতে পারবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৬.০০ থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ২.৫০-এর কম গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।

আবেদনপত্র সংগ্রহ
আবেদনপত্রের জন্য ৩০ টাকা ও কেন্দ্র ফি বাবদ ৪০০ টাকা জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবেদনপত্রের সঙ্গে চার কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাসের সনদ এবং নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটার জন্য প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। ভর্তির সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ কলেজে জমা দিতে হবে, যা কোর্স শেষে ফেরত পাওয়া যাবে।

বাছাই প্রক্রিয়া
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই কোর্সের প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পাসের বছর, বয়স ইত্যাদি প্রাধান্য পায়। প্রতিটি কলেজে আসনসংখ্যা ১০০টি। অর্থাৎ মোট ৭০০ জন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।এর মধ্যে ১০ শতাংশ আসন পুরুষ প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত।

যা পড়ানো হয়
ইরা দিব্রা জানান, এই কোর্সে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও ক্লিনিক্যাল—তিনটি বিষয়ে নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে তাত্ত্বিকে শিক্ষার্থীদের এনাটমি, ফিজিওলজি, ফান্ডামেন্টাল অব নার্সিং, প্রফেশনাল নার্সিং, মেডিকেল সার্জিকেল নার্সিং, কমিউনিটি হেলথ নার্সিং, পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য, ফার্মাকোলজি, মিডওয়াইফারি, গাইনি, নার্সিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টসহ আরও কিছু বিষয়ে পড়তে হয়।

সুযোগ-সুবিধা
এ প্রসঙ্গে সেবা পরিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তাছলিমা বেগম জানান, এই কোর্সে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে হাতে কলমে কাজ শেখানো হয়। প্রতিটি কলেজে নারী শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে থাকার সুযোগ আছে। রয়েছে পাঠাগার ও ব্যবহারিক শিক্ষার উপকরণ। এ ছাড়া কোর্স চলাকালীন প্রথম বছরে প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা ও দ্বিতীয় বছরে ৯০০, তৃতীয় বছরে ৯৫০ ও চতুর্থ বছরে এক হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়।

কাজের ক্ষেত্র
তাছলিমা বেগম আরও জানা, দিন দিন নার্সিং পেশার চাহিদা বাড়ছে। তাই পাস করে কারও বসে থাকার আশঙ্কা নেই। বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এ পেশার যথেষ্ট চাহিদা আছে।
বেসরকারি ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (নার্স) রোকসানা সুলতানা জানান, এই কোর্স সম্পন্ন করলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ার কারণে নার্সদেরও কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে নার্সের ১৭ হাজারের বেশি পদ খালি আছে। বিশ্বের ১৩টি দেশে এক হাজার ৩০০ জনের অধিক বাংলাদেশি নার্স কর্মরত আছেন। দেশে এখন আট হাজার লোকের বিপরীতে মাত্র একজন নার্স রয়েছেন। এসব থেকে বোঝা যায়, দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই নার্সের চাহিদা রয়েছে।

বিস্তারিত জানা যাবে
এ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে দেশের সাতটি নার্সিং কলেজ থেকে। এগুলো হচ্ছে: ঢাকা নার্সিং কলেজ, ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ, চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ, রাজশাহী নার্সিং কলেজ, বরিশাল নার্সিং কলেজ, সিলেট নার্সিং কলেজ, রংপুর নার্সিং কলেজ।এ ছাড়া যোগাযোগ করতে পারেন সেবা পরিদপ্তর, ১৪/১৫ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ইস্পাহানী ভবন, ঢাকা। ফোন: ৯৫৫২১৮২, ওয়েবসাইট: www.dns.org.bd

No comments

Powered by Blogger.