বিনিয়োগে আগ্রহী থাইল্যান্ড
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুনতর এক মাত্রা যুক্ত হলো থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে। গত শনিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককালে বাংলাদেশে থাই বিনিয়োগের ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো।
বৈঠকে থাই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবকাঠামো ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতেও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।থাইল্যান্ড বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ। এদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য রয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলে এই অবস্থার আরো উন্নতি হবে বলে সবার প্রত্যাশা। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, থাই প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খোলামনে, আন্তরিকতা সহকারে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা প্রদানের যে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তেমনি খোলামনে তাঁর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৈদেশিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ, পাট, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক শিল্প ও তৈজসপত্রের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় দু’টি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর হয়; এর একটি হলো- দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্যে এবং অপরটি কৃষি খাতে দু’দেশের বেসরকারী পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাপূর্ণ একটি দেশ। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশের সঙ্গে অনুকূল সম্পর্ক এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের সার্বিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব। দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। আর এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে সুনির্দিষ্টভাবে, গুরুত্বের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ামুখী করা প্রয়োজন। দেশগুলোর অবস্থান বাংলাদেশ থেকে খুব দূরে না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত স্বল্প খরচে তাদের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য চলতে পারে।
থাই প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে প্রথাগত বা রুটিন ভিজিট হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাঁর এই সফর সংক্ষিপ্ত ও স্বল্পস্থায়ী হলেও গুরুত্বের বিচারে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও জরুরী। তাঁর এই সফর বাংলাদেশের ব্যবসায় ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে যেমন অনুকূল প্রভাব ফেলবে তেমনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে অনুরূপ সম্পর্ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে অধিকতর অনুপ্রাণিত করবে; পাশাপাশি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশও বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায় ও বিনিয়োগ বাড়াতে আরো আগ্রহী হবে বলে আশা করা যায়।
No comments