গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী- বিটিভির চার যুগ পূর্তি অনুষ্ঠান উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমগুলোকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতা উপভোগের বিষয়। তবে এটা কিছু দায়বদ্ধতাও সৃষ্টি করে। ফলে সংশ্লিষ্ট সবার দায়বদ্ধতাও থাকতে হবে।
বর্তমান সরকার সংবাদপত্র, বেসরকারি টিভি ও রেডিও’র অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে জনগণ তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু গণমাধ্যমে দায়িত্বশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রায়াত্ত সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, বেসরকারী টেলিভিশনের সঙ্গে বিটিভিকে প্রতিযোগিতা করে চলতে হবে। এজন্য অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে হবে, গ্রহণযোগ্য করতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিটিভির অনুষ্ঠানের মান উন্নত করতে হবে। অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে নিয়মিত গবেষণার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং দেশের মানুষের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে বিটিভিকে সৃজনশীল অনুষ্ঠান তৈরি করতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) চার যুগ পূর্তির অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী যখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন তখন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রামপুরা বিটিভি ভবনের মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিটিভি ভবনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ছাড়াও গণভবনের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভির মহাপরিচালক ম হামিদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে সরকারী প্রচার মাধ্যমে সমাজ সংস্কার ও গঠনমূলক কর্মসূচী নেয়ারও পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। প্রচার মাধ্যমগুলোকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দায়িত্ব রয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বর্তমান সরকারের সময়ে প্রচার মাধ্যমগুলো পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীলও হতে হবে। একটা সংবাদ প্রচার করলে সমাজের ওপর কী প্রভাব পড়ে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাধীনতা দায়িত্ববোধও সৃষ্টি করে। সেদিকে সকলকে নজর দিতে হবে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসরকারী স্যাটেলাইট চ্যানেলের অনুমতি দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য পাওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে। সেদিকে খেয়াল রেখে এবং শিল্পীদের যেন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় তার জন্যই আমরা বেসরকারী চ্যানেলের অনুমতি দেই। এবার দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর সরকার ১৬টি নতুন টেলিভিশন এবং ৭টি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান। ১৯৭৫ সালে রামপুরায় বিটিভির কার্যক্রম শুরুর দিনটি স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি ও রেহানাসহ (শেখ রেহানা) সকলে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে বিটিভিকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। আমরা বিটিভির প্রযুক্তিগত বিকাশ, সৃজনশীলতায় উন্নয়ন এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
চার যুগ পূর্তিতে বিটিভির প্রতিটি কর্মীকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার নিরিখে বিটিভিকে আরও জনবান্ধব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারে বিটিভিকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। তিনি বলেন, বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় কর্মসূচী পালন করাই বাংলাদেশ টেলিভিশনের লক্ষ্য। বিনোদনের পাশাপাশি, সমাজ পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রেখেও অনুষ্ঠান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার বিটিভির স্যাটেলাইট সম্প্রচার সম্প্রসারিত এবং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। দেশের প্রায় সব স্থান থেকেই বিটিভির অনুষ্ঠান দেখা যায় এবং এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিটিভি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিটিভিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন অনুষ্ঠান যুক্ত করা হয়েছে। এতে বিটিভির মান বেড়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বিটিভির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিটিভি জাতীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে জনগণের কাছে তুলে ধরছে। তিনি বলেন, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারেও বিটিভি এগিয়ে রয়েছে এবং এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিটিভিকে মনোযোগী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিটিভির সাফল্যও কামনা করেন।
রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের অনুষ্ঠান থেকে বিটিভির আরও মানোন্নয়নে দিকনির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধনব্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রামে বাংলাদেশ টেলিভিশন সবসময় তাঁর পাশে থাকবে।
No comments