বিএনপি নেতাদের নিয়ে ব্যস্ত দুদক by হায়দার আলী
দুর্র্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মামলা নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই মামলাগুলো আছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ দলের বড় বড় প্রায় ৪৫ জন নেতার নামে। মামলাগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর বাকিগুলো বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মতো সব দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাগুলোর বেশির ভাগেরই তদন্ত প্রায় শেষ করে দুদক এখন চার্জশিট দেওয়ার অপেক্ষায়। অতি সম্প্রতি এ রকম তিন নেতার বিরুদ্ধে দুদক চার্জশিট দিয়েছে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর রায়ে নিম্ন আদালত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করলেও উচ্চ আদালত ওই সব মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। ফলে দুদকের সেসব মামলার কার্যক্রমে গতি কমে যায়। তবে দুদক উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি মামলায় লিভ টু আপিল করে। অনেক আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে আর এভাবে দুদকের কর্মকাণ্ডেও গতিশীলতা এসেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, দুদকের এই তৎপরতা সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ। তাঁরা যাতে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হয়, সে উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে। তা ছাড়া বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এসব মামলা করা হয়েছিল। তখন সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ে দুদক মাথা না ঘামালেও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম জোরদার করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশেই দুদক এখন দুর্নীতি দমনের নামে মূলত বিএনপি দমনের কাজে নেমেছে।
এ ব্যাপারে দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তাঁরা কোনো কাজ করছেন না। দুদক সূত্রে জানা যায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেবেন দুদকের কর্মকর্তারা। তারপর অনুমোদন পেলে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ খান সিদ্দিকী, বিএনপির সহসভাপতি ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, জমির উদ্দিন সরকার, সাদেক হোসেন খোকা, মওদুদ আহমদ, এ কে এম মোশারফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদসহ প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন মামলায় দুদকের অনুসন্ধানকাজ চলছে। দুদকের মামলাসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি বিগত সরকারের আমলে করা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৪টি, কোকোর বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলাগুলোর কিছু উচ্চ আদালত থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়, কিছু মামলার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
দুদকের কমিশনার মো. বদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় নিম্ন আদালত রায় ঘোষণা করলেও উচ্চ আদালত সেটিতে স্থগিতাদেশ দেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর আবার আমরা প্রতিটি মামলায় আপিল করি। সেই মামলাগুলো এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক মামলার অনুসন্ধানকাজ চলছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরই আলোকে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।' পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোনো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।
দুদকের লিগ্যাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, আইনি দুর্বলতার ফাঁকে কেউ সহজেই যেন পার না পেতে পারেন, সেই বিষয়ে দুদক সজাগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের আমলে দুটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়। সেসব মামলার তদন্তকাজ শেষে বেশির ভাগের চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মহজোট সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শেষে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, চার্জশিট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মূলত আমাদের জাতীয় নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে জন্যই সরকার পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।'
দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে বিরোধী দলকে হয়রানির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকার ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে দুদক। কিভাবে বিরোধী দলকে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা যায়, কিভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়, সেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তারা।
দুদকের মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানির জন্য করা হয়েছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ডিসিসির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বিএনপির যেসব নেতা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়, তখন তাঁদের দমন করতেই দুদকের মাধ্যমে এই পথ বেছে নিয়েছে সরকার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে, সেদিকে আপনাদের নজর নেই। যেগুলোতে আমরা জড়িত নই, সেসব ঘটনায় আমাদের ফাঁসাতে চাচ্ছেন, হয়রানি করছেন!'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, 'দুদক আওয়ামী লীগের নাটক বাস্তবায়ন করছে, এর জন্য তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উচ্চ আদালতে আমাদের মামলার স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে; কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় আপিল করে না। এটার জবাব তাদের দিতে হবে। ওরা ব্যাগ গুছিয়ে পালানোর পথ পাবে না।'
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা ১০টি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে মামলা আছে চারটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুটি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুদকের ১৪টি। আর বর্তমান সরকারের আমলে করা হয় ছয়টি। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা হয়েছে তিনটি মামলা। সাদেক হোসেন খোকার নামে ১০টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর আটটি, শমসের মবিন চৌধুরীর চারটি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দুটি, আমানউল্লাহ আমানের ২০টি, আবদুস সালামের একটি এবং যুবদলের আ ক ম মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। ১০টির বেশি মামলার বোঝা নিয়ে কারাবন্দি রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু ও নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। এর মধ্যে বেশির ভাগ মামলার তদন্ত করে দুদক প্রমাণও পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দুদকসহ একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুল হক মিলন, মজিবর রহমান সরোয়ার, নাদিম মোস্তফা, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, দুদকের এই তৎপরতা সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ। তাঁরা যাতে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হয়, সে উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে। তা ছাড়া বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এসব মামলা করা হয়েছিল। তখন সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ে দুদক মাথা না ঘামালেও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম জোরদার করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশেই দুদক এখন দুর্নীতি দমনের নামে মূলত বিএনপি দমনের কাজে নেমেছে।
এ ব্যাপারে দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তাঁরা কোনো কাজ করছেন না। দুদক সূত্রে জানা যায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেবেন দুদকের কর্মকর্তারা। তারপর অনুমোদন পেলে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ খান সিদ্দিকী, বিএনপির সহসভাপতি ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, জমির উদ্দিন সরকার, সাদেক হোসেন খোকা, মওদুদ আহমদ, এ কে এম মোশারফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদসহ প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন মামলায় দুদকের অনুসন্ধানকাজ চলছে। দুদকের মামলাসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি বিগত সরকারের আমলে করা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৪টি, কোকোর বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলাগুলোর কিছু উচ্চ আদালত থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়, কিছু মামলার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
দুদকের কমিশনার মো. বদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় নিম্ন আদালত রায় ঘোষণা করলেও উচ্চ আদালত সেটিতে স্থগিতাদেশ দেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর আবার আমরা প্রতিটি মামলায় আপিল করি। সেই মামলাগুলো এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক মামলার অনুসন্ধানকাজ চলছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরই আলোকে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।' পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোনো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।
দুদকের লিগ্যাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, আইনি দুর্বলতার ফাঁকে কেউ সহজেই যেন পার না পেতে পারেন, সেই বিষয়ে দুদক সজাগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের আমলে দুটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়। সেসব মামলার তদন্তকাজ শেষে বেশির ভাগের চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মহজোট সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শেষে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, চার্জশিট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মূলত আমাদের জাতীয় নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে জন্যই সরকার পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।'
দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে বিরোধী দলকে হয়রানির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকার ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে দুদক। কিভাবে বিরোধী দলকে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা যায়, কিভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়, সেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তারা।
দুদকের মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানির জন্য করা হয়েছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ডিসিসির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বিএনপির যেসব নেতা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়, তখন তাঁদের দমন করতেই দুদকের মাধ্যমে এই পথ বেছে নিয়েছে সরকার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে, সেদিকে আপনাদের নজর নেই। যেগুলোতে আমরা জড়িত নই, সেসব ঘটনায় আমাদের ফাঁসাতে চাচ্ছেন, হয়রানি করছেন!'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, 'দুদক আওয়ামী লীগের নাটক বাস্তবায়ন করছে, এর জন্য তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উচ্চ আদালতে আমাদের মামলার স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে; কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় আপিল করে না। এটার জবাব তাদের দিতে হবে। ওরা ব্যাগ গুছিয়ে পালানোর পথ পাবে না।'
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা ১০টি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে মামলা আছে চারটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুটি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুদকের ১৪টি। আর বর্তমান সরকারের আমলে করা হয় ছয়টি। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা হয়েছে তিনটি মামলা। সাদেক হোসেন খোকার নামে ১০টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর আটটি, শমসের মবিন চৌধুরীর চারটি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দুটি, আমানউল্লাহ আমানের ২০টি, আবদুস সালামের একটি এবং যুবদলের আ ক ম মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। ১০টির বেশি মামলার বোঝা নিয়ে কারাবন্দি রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু ও নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। এর মধ্যে বেশির ভাগ মামলার তদন্ত করে দুদক প্রমাণও পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দুদকসহ একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুল হক মিলন, মজিবর রহমান সরোয়ার, নাদিম মোস্তফা, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
No comments