পলাশে শীতলক্ষ্যার বুকে ক্ষমতাসীনদের বালুমহাল by মনিরুজ্জামান

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালুমহাল গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আশ্রাফ খানের কয়েকজন আত্মীয় ও ঘোড়াশাল পৌর মেয়রের পরিবারের সদস্যরা এই বালুমহাল গড়ে তুলেছে। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


আনোয়ারুল আশ্রাফ খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি দেখব। আর এমপি-মন্ত্রী হলে অনেকেই রেফারেন্স টানে। সবকিছু দেখে পারা যাবে না। আপনি (প্রতিবেদক) যাদের নাম বলেছেন, তাদের মধ্যে একজনকে চিনি, দুজনকে চিনি না। আর এই নদীর জায়গা দখল করে অনেকেই অনেক কিছু করছে, সেগুলো তো আপনারা দেখবেন না। খালি দেখবেন, এমপিরা কী করে।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই থেকে তিন বছর আগে ঘোড়াশাল রেলসেতুসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় রক্ষাকারী দেয়ালের (চাঁন মিয়ার গাইড ওয়াল) পাশ দখল করে আনোয়ারুল আশ্রাফের চাচাতো শ্যালক আলতাব হোসেন, আবদুল্লাহ মামুন ও ভাগনে ফয়সাল আহমেদ ইট, বালু, পাথর ও মাটি সরবরাহ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শীতলক্ষ্যা বালুমহাল’ গড়ে তোলেন। প্রথম দুজন স্থানীয় মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরীফুল ইসলামের ভাই। অন্যজন মেয়রের ভাগনে।
পাথর ও ইটের ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা দিলে এক বছর ধরে শুধু বালুর ব্যবসা করছেন। সম্প্রতি তাঁরা বালুমহাল সম্প্রসারণ করে নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০০ গজ নদীর ভেতরে নিয়ে গেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী-ভৈরব রেললাইনের সম্প্রসারণকাজের অংশ হিসেবে ঘোড়াশাল দ্বিতীয় রেলসেতুর কাজ চলছে। পাশেই নদীর পাড় ঘেঁষে খাসজমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল হক মার্কেট’। এর পেছনে নদীর ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বালুমহাল। এর ৫০০ গজ উত্তরে আরেকটি ছোট মহাল গড়া হচ্ছে।
বালুমহালের পরিচালক ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব জমি আমাদের বাপ-দাদার ছিল। আগে তাঁরা এখানে ব্যবসা করতেন। আর এখন আমরা করছি। পরে আমাদের জমির একাংশ রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। এখন আমরা রেলের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবসা করছি।’ তবে ইজারার কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
বালুমহালের আরেক পরিচালক ফয়সাল আহমেদ জানান, বাজার তৈরি করার জন্য নদী থেকে যে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল, পরে পলি পড়ে ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গিয়েছিল। পরে সেখানে বালুমহাল গড়ে তোলা হয়। নদীর ওপর বালুমহাল করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এই জায়গায় কিছু করা হয় না, তাই আমরা ব্যবসা শুরু করেছি।’
পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, যে যেভাবে পারছে, শীতলক্ষ্যা দখল করছে। আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
ঘোড়াশাল পৌরসভার তহশিলদার হাসেম মিয়া জানান, বালুমহাল করার সময় তাঁদের বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। একদিকে ব্যবস্থা নিলে অন্যদিকে তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবার শুরু করেন। কারণ, তাঁদের পেছনে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা রয়েছেন।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ওবায়দুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী দখলের বিষয়ে আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। সেখানে কাউকে খাসজমি ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই।

No comments

Powered by Blogger.