পবিত্র কোরআনের আলো-হজরত ইবরাহিম (আ.) ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিলেন না

৬৪. ক্বুল ইয়া-আহ্লাল কিতা-বি তাআ'-লাও ইলা- কালিমাতিন ছাওয়া-য়িম্ বাইনানা- ওয়াবাইনাকুম আল্লা- না'বুদা ইল্লাল্লা-হা ওয়ালা- নুশরিকা বিহি শাইআন ওয়ালা- ইয়াত্তাখিযা বা'দ্বুনা- বা'দ্বান আরবা-বাম্ মিন দূনিল্লাহি; ফাইন তাওয়াল্লাও ফাক্বূলুশ্হাদূ বিআন্না- মুছলিমূন। ৬৫. ইয়া-আহ্লাল কিতা-বি লিমা তুহা-জ্জূনা ফী ইবরাহীমা ওয়ামা- উনযিলাতিত্ তাওরা-তু ওয়ালইনযীলু ইল্লা- মিম্ বা'দিহি আফালা- তা'কি্বলূন।


৬৬. হা-আনতুম হা-উলা-য়ি হা-জাজতুম ফীমা- লাকুম বিহি ই'লমুন ফালিমা তুহা-জ্জূনা ফীমা- লাইছা লাকুম বিহি ই'লমা; ওয়াল্লাহু ইয়া'লামু ওয়া আনতুম লা-তা'লামূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬৪-৬৬]
অনুবাদ : ৬৪. (হে নবী!) আপনি বলুন, হে আহলে কিতাব, এসো, আমরা এমন এককথায় উপনীত হই যেখানে তোমরা এবং আমরা এক। আর সে অভিন্ন পথটি হলো আমরা সবাই এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশীদার বানাব না; আর আমাদের মাঝেও একে অপরকে প্রভু বলে মেনে নেব না। অতঃপর তারা যদি এ অবস্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদের আপনি বলে দিন, তোমরা সাক্ষী থেকো আমরা আল্লাহর সামনে আনুগত্যের মাথানত করে নিয়েছি।
৬৫. (আপনি আরো বলুন) হে কিতাবধারীরা! তোমরা ইবরাহিম সম্পর্কে কেন তর্ক করো, অথচ তাওরাত ও ইনজিল তার অনেক পরে নাজিল করা হয়েছে। তোমরা কি সত্যটা বুঝতে পারছ না?
৬৬. হ্যাঁ, এর কয়েকটি বিষয়ে তোমাদের কিছু জানা ছিল এবং সে বিষয়ে তো তোমরা তর্ক করলে, কিন্তু যেসব বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, সেসব বিষয়ে তোমরা বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো কেন? আল্লাহ তায়ালা জানেন এবং তোমরা জানো না।
ব্যাখ্যা : ৬৪ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুসলমানদের ঐক্যের একটা মৌলিক সূত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বহুজাতিক মদিনা রাষ্ট্র গঠন করে রাসুল (সা.) মক্কার কোরাইশদের মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়েছিলেন। এই সম্পর্কের অগ্রগতি সাধন এবং পাশাপাশি ইসলামের প্রতি তাদের আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে এ আয়াতটি নাজিল হয়। এ আয়াতের শুরুতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মুসলমানদের সঙ্গে এমন একটা নীতিগত অবস্থানে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে তারা আগে থেকেই কমবেশি অবস্থান করছে। জায়গাটা হলো তারা সবাই এক আল্লাহর ইবাদত করে। মুসলমান এবং ইহুদি-খ্রিস্টান সবাই এক আল্লাহর ইবাদত করে, এখানে একটা ঐকমত্য আছে। তাদের এই জায়গায়ই আরো শক্ত অবস্থানে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ এখানে ঐকমত্য থাকলেও ইহুদিরা তাদের জাত্যাভিমান ও কায়েমি স্বার্থের কারণে আল্লাহর রাসুলকে স্বীকার করছে না এবং খ্রিস্টানরাও অনুরূপ কারণেই স্বীকার করছে না; উপরন্তু খ্রিস্টানরা আল্লাহর নবী ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে ফেলছে এবং তাঁর মা মারইয়ামকে বানাচ্ছে আল্লাহর স্ত্রী। এভাবে তারা বিভ্রান্তির পথে চলেছে আল্লাহর উপাসক হওয়া সত্ত্বেও। এ আয়াতের শেষাংশে তাদের ইসলামের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে অত্যন্ত কৌশলী ভাষায়। আর সেই সঙ্গে সমতাভিত্তিক নীতির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কারো ওপর কারো কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না।
৬৫ ও ৬৬ নম্বর আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে নিয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদিরা বলত হজরত ইবরাহিম (আ.) ইহুদি ছিলেন, খ্রিস্টানরা বলত তিনি খ্রিস্টান ছিলেন। অথচ তাদের কারো দাবিই সঠিক নয়। আল্লাহ বলেন, তাওরাত ও ইনজিল ইবরাহিমের অনেক পরে নাজিল হয়েছে। অতএব পরবর্তী সময়ের নবীদের ধর্মাবলম্বী তিনি কেমন করে হবেন? হজরত ইবরাহিম (আ.) যেহেতু তাওরাত ও ইনজিল নাজিলের আগে নবী ছিলেন, সেহেতু তাওরাত ও ইনজিলে তাঁর সম্পর্কে কিছু বর্ণনা হয়তো আছে_যেগুলো ইহুদি ও খ্রিস্টানরা জানে, কিন্তু তিনি ইহুদি ছিলেন নাকি খ্রিস্টান ছিলেন তা তো তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এ জন্যই আল্লাহ বলছেন, তোমরা যা জানো না তা নিয়ে তর্ক করছ। আসলে তোমরা এ বিষয়ে জানো না। একমাত্র আল্লাহ জানেন। অতএব তোমরা ইবরাহিম (আ.)-কে নিজেদের ধর্মে টানার জন্য তর্ক করো না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.