প্রথম পর্যায়ের তফসিল ঘোষণা-উপকূলীয় ৫৯৬ ইউপির নির্বাচন ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল

আগামী ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দিনে দেশের তিন বিভাগের উপকূলীয় ১২টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ৫৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এ তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ৫ মার্চ শনিবার। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ৬ ও ৭ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ থেকে ১৮ মার্চ।


একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের নির্বাচনযোগ্য বাকি প্রায় তিন হাজার ৮০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে শুরু হয়ে জুন মাসজুড়ে চলবে। আর মোট চার হাজার ৫০৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০৫টির মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায়, মামলার কারণে এবং সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত জটিলতায় আপাতত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা তফসিল ঘোষণার সময় জানান, ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের এ নির্বাচনে ৫৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের কোনটি কবে হবে তা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা ঠিক করে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেবেন। কমিশন শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার তারিখ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। অতীতেও এভাবে নির্বাচন হয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রথম পর্যায়ে ইউপি নির্বাচনের জন্য যে উপজেলাগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদেরই নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে এবার অষ্টমবারের মতো ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৯৭৩ সালে প্রথমবার ইউপি নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৭৭ সালের ১৩ থেকে ৩১ জানুয়ারি, ১৯৮৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সালে ২২ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ সালের ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে আগের সব নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয় শীতে বা শীতের কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রচণ্ড গরমে।
সিইসি এ বাস্তবতা প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেক ধরনের কর্মকাণ্ড হয়। নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও পাওয়া যায় না। এ কারণেই এবার কিছুটা প্রতিকূল সময়ে এ নির্বাচন দিতে হচ্ছে।
প্রার্থীদের হলফনামা দিতে হবে না: সিইসি জানান, দেশের সব নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে হলফনামা দেওয়ার বিধান থাকলেও ইউপি নির্বাচনে তা থাকছে না। তবে এ নির্বাচনের আইনে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে যে বিধান রয়েছে, তা কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হবে। এ-সংক্রান্ত তথ্য কেউ গোপন করলে তাকে রেহাই দেওয়া হবে না। চেয়ারম্যান পদে পাঁচ হাজার টাকা আর সদস্য পদে এক হাজার টাকা জামানত দিতে হবে। জামানতের টাকা নগদও জমা দেওয়া যাবে। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় পরিচালনার জন্য আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। মনোয়নপত্রে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর উল্লেখ করতে হবে। সদস্য পদে এর প্রয়োজন নেই। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোটার সংখ্যাভেদে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং সদস্য প্রার্থীরা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। নির্বাচনের ফল গেজেটে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রত্যেক প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যাঁরা তা করবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আর নির্বাচনে মিছিল, মিটিং এবং কোনো ধরনের শোডাউন পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে।
সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এ নির্বাচনের নির্দলীয় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বানও জানান
যে ৭২ উপজেলায় ইউপি নির্বাচন : যে ৭২ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেগুলো হলো বরিশাল বিভাগ : বরিশাল সদর উপজেলা, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। পটুয়াখালী জেলার সদর, দুমকি, বাউফল, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা। পিরোজপুর জেলার সদর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ, কাউখালী, জিয়ানগর, ভাণ্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া। বরগুনা জেলার সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী। ভোলা জেলার সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা। ঝালকাঠি জেলার সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া।
খুলনা বিভাগ : খুলনা জেলার রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, বাটিয়াঘাটা, তেরখাদা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও ডুমুরিয়া। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, আশাশুনি ও তালা। বাগেরহাট জেলার সদর, ফকিরহাট, মোল্লারহাট, কচুয়া, চিতলমারী, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা।
চট্টগ্রাম বিভাগ : কঙ্বাজার জেলার কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর এবং নেয়াখালী জেলার হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলা।

No comments

Powered by Blogger.