নববর্ষ-বাংলা সনে অর্থবছর প্রবর্তন by গোলাম কিবরিয়া পিনু
বাংলা সন ও তারিখ যদি উলিল্গখিত পর্যায়ে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন আরও কাছের মনে হবে, বাঙালির ভিত্তিমূল আরও শক্তিশালী হবে, বাঙালির সংস্কৃতি আরও সম্মুখবর্তী হবে। সেই বিবেচনাবোধ থেকে আমাদের প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত নির্ধারিত করা হোক
দিন দিন বাংলা নববর্ষ আয়োজনের বিস্তৃতি ঘটছে। বাঙালির আপন উৎসব হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। এই উৎসব এখন বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের গৌরব নিয়ে দেদীপ্যমান। এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য গণমানুষের সমর্থনে আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন নগরে-শহরে-বন্দরে-পাড়ায়-মহল্লায় বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব হিসেবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিতজনের মতো গরিব কৃষক, মজুর ও অন্যান্য শ্রেণীর অনেকে বাংলা নববর্ষ উৎসবের আমেজে বরণ করতে পারেন না।
দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তাদের নিত্যদিনের জীবনপ্রবাহের সঙ্গে বাংলা সন ও তারিখ জীবন্ত। বিশেষত কৃষিজীবীরা বাংলা সন ও তারিখ নিজেদের ভেবে সারা বছর ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে সরকার, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণমাধ্যম, কবি-লেখক-শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছে বাংলা সন ও তারিখ অনেকাংশে মৃত এবং বছরের অন্যান্য সময় বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত! অথচ বাংলা সন ও তারিখ থেকে উৎসারিত বলেই বাংলা নববর্ষ আমরা গ্রহণ করছি আনন্দে ও উৎসবের আমেজে_ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, বিভিন্ন সামাজিক পরিসরে!
বাংলা সন ও তারিখ যুগ যুগ ধরে এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনপ্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আছে, সেই সন ও তারিখ বাঙালির জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গৌরবের সঙ্গে যুক্ত করতে পারিনি, যদিও বাঙালি হিসেবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, তারও চলি্লশ বছর পার হতে চলল! রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনের বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য সংহত করার সুযোগ পাওয়ার পরও আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি অনেক ক্ষেত্রে! আর সে কারণে বেশিরভাগ বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকার কথা থাকলেও বাংলা সন ও তারিখ আজও সরকারি উদ্যোগে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত নয়! আর সেই কারণে বাংলা সন ও তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও বাজেট প্রণয়ন, অর্থবছর, শিক্ষাবর্ষ ,অনুষ্ঠান-সভা-দিবস ইত্যাদি নির্ধারিত হয় না।
বাংলা সন ও তারিখ যদি উলিল্গখিত পর্যায়ে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন আরও কাছের মনে হবে, বাঙালির ভিত্তিমূল আরও শক্তিশালী হবে, বাঙালির সংস্কৃতি আরও সম্মুখবর্তী হবে। সেই বিবেচনাবোধ থেকে আমাদের প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র (১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নির্ধারিত করা হোক। এখন রয়েছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত, যা পরিবর্তনযোগ্য। পাকিস্তান ছাড়া আমাদের অতি পরিচিত আর কোনো দেশেই উলিল্গখিত সময়ে অর্থবছর হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। যেমন_ ভারত ও শ্রীলংকায় পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ, মালদ্বীপ ও ভুটানে পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর, নেপালে ২১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে পহেলা অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপান পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আমেরিকা অর্থবছর পরিবর্তন করেছে তাদের প্রাকৃতিক ও অন্যান্য বিষয়ে বিবেচনা করে, অন্যান্য দেশেও তাই।
পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নির্ধারিত অর্থবছরের সময়সীমা এখনও আমরা বহন করে চলছি! পাকিস্তানের ঋতু ও কালের সঙ্গে তাল রেখে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল, যা বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাঙালি সংস্কৃতির কোনো উপাদান এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়নি। বাংলাদেশের ঋতু, আবহাওয়া, কৃষিব্যবস্থা, ফসল তোলার সময়, দীর্ঘকালের গ্রামীণ অর্থব্যবস্থার হিসাব-নিকাশ, অর্থর্নৈতিক কর্মকাণ্ডে মুখ্য ভূূমিকা পালনকারী কৃষকের নিজস্ব বাংলা সন-তারিখ, সর্বোপরি বাংলা নববর্ষে বাঙালির জেগে ওঠার যে আত্মশক্তির উদ্বোধন হচ্ছে, সেসব বিবেচনায় এনে প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত নির্ধারিত করা হোক।
বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার, যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে অহঙ্কারবোধ করেন, তারা এ বিষয়ে ভূমিকা অনায়াসে গ্রহণ করতে পারেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জাতিসংঘে গিয়ে বাংলায় ভাষণ দেন, বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছেন, তখন আমরা উৎসাহিত হই_ এই সূত্র ধরেই তার কাছে আমাদের দাবি, প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে অর্থবছরের সময়কাল বৈশাখ-চৈত্র মাস অনুযায়ী নির্ধারিত করা হোক। এ জন্য তাকে কারও কাছে ধরনা বা দাবি তুলতে হবে না, এ জন্য দরকার বাঙালি হিসেবে তার মননধর্মী ও শিকড়স্পর্শী ইচ্ছাশক্তি আর কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পূর্তি ও রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবর্ষে অর্থবছরের সময় পরিবর্তন হলে তা হবে বাঙালির সংস্কৃতি বিকাশে একটি বড় ধরনের মৌলিক পরিবর্তন, যার দ্যোতনা ও প্রেষণা বাঙালির আপন পথচলাকে করবে আরও দৃঢ় ও লক্ষ্যমুখী।
ড. গোলাম কিবরিয়া পিনু : কবি ও প্রাবন্ধিক
দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তাদের নিত্যদিনের জীবনপ্রবাহের সঙ্গে বাংলা সন ও তারিখ জীবন্ত। বিশেষত কৃষিজীবীরা বাংলা সন ও তারিখ নিজেদের ভেবে সারা বছর ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে সরকার, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণমাধ্যম, কবি-লেখক-শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছে বাংলা সন ও তারিখ অনেকাংশে মৃত এবং বছরের অন্যান্য সময় বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত! অথচ বাংলা সন ও তারিখ থেকে উৎসারিত বলেই বাংলা নববর্ষ আমরা গ্রহণ করছি আনন্দে ও উৎসবের আমেজে_ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, বিভিন্ন সামাজিক পরিসরে!
বাংলা সন ও তারিখ যুগ যুগ ধরে এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনপ্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আছে, সেই সন ও তারিখ বাঙালির জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গৌরবের সঙ্গে যুক্ত করতে পারিনি, যদিও বাঙালি হিসেবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, তারও চলি্লশ বছর পার হতে চলল! রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনের বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য সংহত করার সুযোগ পাওয়ার পরও আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি অনেক ক্ষেত্রে! আর সে কারণে বেশিরভাগ বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকার কথা থাকলেও বাংলা সন ও তারিখ আজও সরকারি উদ্যোগে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত নয়! আর সেই কারণে বাংলা সন ও তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও বাজেট প্রণয়ন, অর্থবছর, শিক্ষাবর্ষ ,অনুষ্ঠান-সভা-দিবস ইত্যাদি নির্ধারিত হয় না।
বাংলা সন ও তারিখ যদি উলিল্গখিত পর্যায়ে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন আরও কাছের মনে হবে, বাঙালির ভিত্তিমূল আরও শক্তিশালী হবে, বাঙালির সংস্কৃতি আরও সম্মুখবর্তী হবে। সেই বিবেচনাবোধ থেকে আমাদের প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র (১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নির্ধারিত করা হোক। এখন রয়েছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত, যা পরিবর্তনযোগ্য। পাকিস্তান ছাড়া আমাদের অতি পরিচিত আর কোনো দেশেই উলিল্গখিত সময়ে অর্থবছর হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। যেমন_ ভারত ও শ্রীলংকায় পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ, মালদ্বীপ ও ভুটানে পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর, নেপালে ২১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে পহেলা অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপান পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আমেরিকা অর্থবছর পরিবর্তন করেছে তাদের প্রাকৃতিক ও অন্যান্য বিষয়ে বিবেচনা করে, অন্যান্য দেশেও তাই।
পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নির্ধারিত অর্থবছরের সময়সীমা এখনও আমরা বহন করে চলছি! পাকিস্তানের ঋতু ও কালের সঙ্গে তাল রেখে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল, যা বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাঙালি সংস্কৃতির কোনো উপাদান এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়নি। বাংলাদেশের ঋতু, আবহাওয়া, কৃষিব্যবস্থা, ফসল তোলার সময়, দীর্ঘকালের গ্রামীণ অর্থব্যবস্থার হিসাব-নিকাশ, অর্থর্নৈতিক কর্মকাণ্ডে মুখ্য ভূূমিকা পালনকারী কৃষকের নিজস্ব বাংলা সন-তারিখ, সর্বোপরি বাংলা নববর্ষে বাঙালির জেগে ওঠার যে আত্মশক্তির উদ্বোধন হচ্ছে, সেসব বিবেচনায় এনে প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত নির্ধারিত করা হোক।
বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার, যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে অহঙ্কারবোধ করেন, তারা এ বিষয়ে ভূমিকা অনায়াসে গ্রহণ করতে পারেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জাতিসংঘে গিয়ে বাংলায় ভাষণ দেন, বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছেন, তখন আমরা উৎসাহিত হই_ এই সূত্র ধরেই তার কাছে আমাদের দাবি, প্রচলিত অর্থবছর পরিবর্তন করে অর্থবছরের সময়কাল বৈশাখ-চৈত্র মাস অনুযায়ী নির্ধারিত করা হোক। এ জন্য তাকে কারও কাছে ধরনা বা দাবি তুলতে হবে না, এ জন্য দরকার বাঙালি হিসেবে তার মননধর্মী ও শিকড়স্পর্শী ইচ্ছাশক্তি আর কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পূর্তি ও রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবর্ষে অর্থবছরের সময় পরিবর্তন হলে তা হবে বাঙালির সংস্কৃতি বিকাশে একটি বড় ধরনের মৌলিক পরিবর্তন, যার দ্যোতনা ও প্রেষণা বাঙালির আপন পথচলাকে করবে আরও দৃঢ় ও লক্ষ্যমুখী।
ড. গোলাম কিবরিয়া পিনু : কবি ও প্রাবন্ধিক
No comments