গণজাগরণে নতুন সমীকরণ-মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির প্রভাব কমছে ইরানের বাড়ছে by ইব্রাহীম বিন হারুন
মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই আরব দেশগুলোতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। যেসব দেশে কয়েক দশকেও একটি সরকারবিরোধী মিছিল হয়নি, সেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ স্বৈরশাসকের পতন দাবিতে রাস্তায় নেমে আসছে। গণ-আন্দোলনের মুখে ইতিমধ্যে তিউনিসিয়া ও মিসরের একনায়ক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আরো বেশ কয়েকজন জনগণের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
নিরুপায় হয়ে রাজনৈতিক সংস্কারেরও আশ্বাস দিয়েছেন কয়েকজন একনায়ক।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এ আন্দোলন ও পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, এ আন্দোলনের মাধ্যমে কেবল একেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিরই পরিবর্তন হচ্ছে না, পরিবর্তন আসছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও। মিত্র একনায়করা চাপে পড়ায় শক্তি খর্ব হচ্ছে অঞ্চলটির দীর্ঘদিনের 'বড় ভাই' সৌদি আরবের। বিপরীতে প্রভাব বাড়ছে পশ্চিমাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে থাকা ইরানের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ একনায়কই পশ্চিমা আশীর্বাদপুষ্ট। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। ইরানকে চাপে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এসব আঞ্চলিক শক্তি। গণ-আন্দোলনের কারণে এ সমীকরণে পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ফ্লিন্ট লেভারেট যেমন বলেছেন, 'বিক্ষোভের মাধ্যমে এসব দেশের সরকারে যদি জনগণের নূ্যনতম প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আমেরিকাকে আগের মতো বিনাবাক্যে সাহায্য করতে রাজি হবেন না।' তাঁর মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট এখন আমেরিকার বিপক্ষে যাচ্ছে।
ধারণা করা হয়, ইসরায়েলকে রক্ষা এবং ইরান ও ইসলামী চরমপন্থীদের দমনে মিসর, সৌদি ও জর্দানকে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করে পশ্চিমারা। এ তিনটি দেশই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিপক্ষ হিসেবে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু চলমান আন্দোলন এ বলয়ের শক্তি ও প্রভাব ক্ষয় করেছে। আন্দোলনের মুখে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ নিজের দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে ইরানের প্রতিপক্ষ হিসেবে অঞ্চলটিতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে সৌদি আরব। কোনো জোরালো আন্দোলন না হলেও সৌদি সরকারও এখন অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছে। বুধবার বাদশাহ আবদুল্লাহ সমাজকল্যাণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে এ চাপের প্রমাণ দিয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির চেয়েও এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সৌদি। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ আলী রেজা নাদের বলেন, 'সীমান্তঘেঁষা দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে সৌদির উদ্বেগ থাকাই স্বাভাবিক। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এখন অস্থিতিশীল। বাহরাইনের অবস্থাও অনিশ্চয়তাপূর্ণ।' নাদের বলেন, 'সৌদি এ অস্থিতিশীলতাকে ইরানের জন্য লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণ ইরান আগেও প্রমাণ করেছে, তারা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিতে সক্ষম।' সৌদির উদ্বেগের আরেকটি কারণ, আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শিয়া মতাবলম্বীরা শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি বাহরাইনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সরাসরিই ইরানের ইন্ধনের অভিযোগ তুলেছে। ৭০ ভাগ শিয়া মতাবলম্বীর দেশটিতে ১৮ শতক থেকেই সুনি্ন শাসক রয়েছেন। কিন্তু চাপের মুখে এখন শিয়া নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
ইরান বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ সাহিমির মতে, ইরাক ও লেবানন এখন স্পষ্টভাবে ইরানের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আছে। সিরিয়া, কাতার এবং ওমানের সঙ্গেও দেশটির সম্পর্ক ভালো। এ পরিস্থিতিতে মিসর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনে সরকার পরিবর্তন হওয়া মানেই ইরানের লাভ। উদাহরণ দিয়ে সাহিমি বলেন, 'মিসরে নতুন যে সরকারই আসুক, হামাসের প্রতি মুবারকের মতো কঠোর হবে না। ফলে ইরানের প্রভাব বাড়বে। কারণ হামাসকে সরাসরি সমর্থন দেয় দেশটি।' আরব দেশগুলোতে গণ-আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগতও জানিয়েছে ইরান। সাহিমি বলেন, '৯/১১-তে টু-ইন টাওয়ার হামলার পর থেকেই ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ছে। নিজেদের অজান্তে 'শত্রু' দেশটির এ প্রভাব বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। দেশটি আফগানিস্তান থেকে তালেবান ও ইরাক থেকে সাদ্দাম হোসেনকে বিতাড়িত করেছে। এ দুই পক্ষ ছিল ইরানের শক্ত আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ এখন দুটি দেশেই ইরানের শক্ত প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে।'
বিশ্লেষকদের দাবি, ক্ষমতার ভারসাম্যে জোরাল অবস্থানে আসার প্রভাব দেখাতেও শুরু করেছে ইরান। গত সপ্তাহে দেশটির দুটি রণতরী সুয়েজ খাল অতিক্রম করেছে। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর এই প্রথম সুয়েজ খাল পেরোল কোনো ইরানি রণতরী। আন্তর্জাতিক বিরোধিতার মুখেও মিসরের নতুন সেনা কর্মকর্তারা রণতরী দুটিকে সুয়েজ খাল পার হওয়ার অনুমতি দেন। এর আগে গত মাসেই লেবাননে নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট হিজবুল্লাহর মাধ্যমে পশ্চিমাপন্থী সাদ হারিরি সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতার জোর দেখিয়েছে ইরান। নাদেরের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বৃদ্ধির ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে পশ্চিমাদের অবরোধ দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশটির আত্মবিশ্বাসও অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এ আন্দোলন ও পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, এ আন্দোলনের মাধ্যমে কেবল একেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিরই পরিবর্তন হচ্ছে না, পরিবর্তন আসছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও। মিত্র একনায়করা চাপে পড়ায় শক্তি খর্ব হচ্ছে অঞ্চলটির দীর্ঘদিনের 'বড় ভাই' সৌদি আরবের। বিপরীতে প্রভাব বাড়ছে পশ্চিমাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে থাকা ইরানের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ একনায়কই পশ্চিমা আশীর্বাদপুষ্ট। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। ইরানকে চাপে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এসব আঞ্চলিক শক্তি। গণ-আন্দোলনের কারণে এ সমীকরণে পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ফ্লিন্ট লেভারেট যেমন বলেছেন, 'বিক্ষোভের মাধ্যমে এসব দেশের সরকারে যদি জনগণের নূ্যনতম প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আমেরিকাকে আগের মতো বিনাবাক্যে সাহায্য করতে রাজি হবেন না।' তাঁর মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট এখন আমেরিকার বিপক্ষে যাচ্ছে।
ধারণা করা হয়, ইসরায়েলকে রক্ষা এবং ইরান ও ইসলামী চরমপন্থীদের দমনে মিসর, সৌদি ও জর্দানকে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করে পশ্চিমারা। এ তিনটি দেশই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিপক্ষ হিসেবে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু চলমান আন্দোলন এ বলয়ের শক্তি ও প্রভাব ক্ষয় করেছে। আন্দোলনের মুখে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ নিজের দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে ইরানের প্রতিপক্ষ হিসেবে অঞ্চলটিতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে সৌদি আরব। কোনো জোরালো আন্দোলন না হলেও সৌদি সরকারও এখন অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছে। বুধবার বাদশাহ আবদুল্লাহ সমাজকল্যাণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে এ চাপের প্রমাণ দিয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির চেয়েও এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সৌদি। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ আলী রেজা নাদের বলেন, 'সীমান্তঘেঁষা দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে সৌদির উদ্বেগ থাকাই স্বাভাবিক। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এখন অস্থিতিশীল। বাহরাইনের অবস্থাও অনিশ্চয়তাপূর্ণ।' নাদের বলেন, 'সৌদি এ অস্থিতিশীলতাকে ইরানের জন্য লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণ ইরান আগেও প্রমাণ করেছে, তারা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিতে সক্ষম।' সৌদির উদ্বেগের আরেকটি কারণ, আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শিয়া মতাবলম্বীরা শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি বাহরাইনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সরাসরিই ইরানের ইন্ধনের অভিযোগ তুলেছে। ৭০ ভাগ শিয়া মতাবলম্বীর দেশটিতে ১৮ শতক থেকেই সুনি্ন শাসক রয়েছেন। কিন্তু চাপের মুখে এখন শিয়া নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
ইরান বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ সাহিমির মতে, ইরাক ও লেবানন এখন স্পষ্টভাবে ইরানের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আছে। সিরিয়া, কাতার এবং ওমানের সঙ্গেও দেশটির সম্পর্ক ভালো। এ পরিস্থিতিতে মিসর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনে সরকার পরিবর্তন হওয়া মানেই ইরানের লাভ। উদাহরণ দিয়ে সাহিমি বলেন, 'মিসরে নতুন যে সরকারই আসুক, হামাসের প্রতি মুবারকের মতো কঠোর হবে না। ফলে ইরানের প্রভাব বাড়বে। কারণ হামাসকে সরাসরি সমর্থন দেয় দেশটি।' আরব দেশগুলোতে গণ-আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগতও জানিয়েছে ইরান। সাহিমি বলেন, '৯/১১-তে টু-ইন টাওয়ার হামলার পর থেকেই ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ছে। নিজেদের অজান্তে 'শত্রু' দেশটির এ প্রভাব বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। দেশটি আফগানিস্তান থেকে তালেবান ও ইরাক থেকে সাদ্দাম হোসেনকে বিতাড়িত করেছে। এ দুই পক্ষ ছিল ইরানের শক্ত আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ এখন দুটি দেশেই ইরানের শক্ত প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে।'
বিশ্লেষকদের দাবি, ক্ষমতার ভারসাম্যে জোরাল অবস্থানে আসার প্রভাব দেখাতেও শুরু করেছে ইরান। গত সপ্তাহে দেশটির দুটি রণতরী সুয়েজ খাল অতিক্রম করেছে। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর এই প্রথম সুয়েজ খাল পেরোল কোনো ইরানি রণতরী। আন্তর্জাতিক বিরোধিতার মুখেও মিসরের নতুন সেনা কর্মকর্তারা রণতরী দুটিকে সুয়েজ খাল পার হওয়ার অনুমতি দেন। এর আগে গত মাসেই লেবাননে নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট হিজবুল্লাহর মাধ্যমে পশ্চিমাপন্থী সাদ হারিরি সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতার জোর দেখিয়েছে ইরান। নাদেরের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বৃদ্ধির ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে পশ্চিমাদের অবরোধ দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশটির আত্মবিশ্বাসও অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি।
No comments