বগুড়ায় সরকারি ভবনে জামায়াতের রাজত্ব by লিমন বাসার
বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি ভবনের প্রায় পুরোটাই ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলেছে জামায়াত। নবাববাড়ি সড়কে অবস্থিত এই ভবনের বেশির ভাগ অংশ তারা ২২ বছর ধরে অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছে। তবে জামায়াতকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও আজ পর্যন্ত ভবনটিকে তাদের দখলমুক্ত করা যায়নি। এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে আইনি জটিলতায়।
ভবনটি গণপূর্ত বিভাগের। তিন তলা এই ভবনের নিচতলায় বগুড়া শহর জামায়াতের প্রধান কার্যালয়। দোতলাজুড়ে রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার কার্যালয়। তৃতীয় তলার একাংশে একটি পরিবার অনেক দিন আগে থেকে বসবাস করে আছে। এই তলার বাকিটা এবং ছাদের কিছু অংশে গড়ে তোলা কক্ষগুলো জামায়াতের নেতা-কর্মীরাই ব্যবহার করেন নানা কাজে।
নবাববাড়ি সড়কে আইন কলেজ-সংলগ্ন এই ভবনটি সিদ্দিক আমিন ভবন নামেই পরিচিত। সিদ্দিক আমিন ছিলেন একজন অবাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে এটিকে সংরক্ষিত পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে জেলা প্রশাসন। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। গণপূর্ত বিভাগ ওই ভবনে তাদের মূল অফিস থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট নামের একটি শাখা স্থানান্তর করে।
বগুড়ার ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (আরডিসি) শরিফুল হক এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৭৯ সালে বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শহিদুল আলমের সময় জামায়াতে ইসলামী এই ভবনের নিচতলার একাংশ মাসিক ভাড়ায় বরাদ্দ নিয়ে সেখানে কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলার ঘরগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৮৯ সালের দিকে এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য জাহানারা হাসিব নামের এক মহিলা ভাড়া হিসেবে বরাদ্দ নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলায় বসবাস শুরু করেন। পরে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে তিনি স্থায়ী বরাদ্দের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও সেটি অনুমোদন করা হয়নি। কারণ হিসেবে শরিফুল হক জানান, ১৯৮৪ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালায় (স্মারক নং-৫/১ ২৬/৮৩/৮৩০) কোনো পরিত্যক্ত বাড়ি বা সম্পত্তি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকায় স্থায়ী বরাদ্দের কোনো সুযোগ ছিল না। এ কারণে ১৯৯০ সালে জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি/বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এই ভবনে অবস্থানকারী সবার লিজ বাতিল করে এটি গণপূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আগেই ভবনের নিচতলার একাংশে থাকা গণপূর্ত বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ অফিসটি সরিয়ে নেওয়া হলে ওই অংশটিও জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত জোট সরকারের সময় ভবনটির দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ জামায়াতের নিজস্ব প্রকাশনা হিসেবে পরিচালিত দৈনিক সাতমাথার কাছে লিজ দেওয়া হয়। পত্রিকাটির প্রকাশক-সম্পাদক এই লিজের জন্য গণপূর্ত বিভাগে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি দৈনিক সাতমাথার কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এই ভবন ভাড়া দেওয়া হলো। বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের প্রধান সহকারী মিনহাজ উদ্দিন জানান, দৈনিক সাতমাথার জন্য বরাদ্দ করা কক্ষগুলোর ভাড়া ছিল মাসিক ২১০ টাকা। এই ভাড়ার টাকা তারা রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে তাঁদের কাছে রসিদ দিয়ে যেত। তিনি আরো জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেআইনিভাবে এই লিজ প্রদানের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর (স্মারক নং-২২/২১০/১৯/১৩২১) দৈনিক সাতমাথার নামে বরাদ্দ করা কক্ষগুলোর লিজ বাতিল করা হয়। পরে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাড়ির দখল গণপূর্ত বিভাগের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যও পত্রিকার সম্পাদকের কাছে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন ঘটেনি।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগ থেকে নোটিশ পাওয়ার পরপরই দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৯ নম্বর রুল-এর ১ ও ১৫১ ধারায় ওই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে দৈনিক সাতমাথার পক্ষে একটি মামলা করা হলে আদালত সেখানে স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত এই মামলা এবং স্থিতাবস্থার ব্যাপারে আদালতে কোনো শুনানি হয়নি। তবে আদালতের আদেশের সুযোগ নিয়ে ভবনটি এখনো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে জামায়াত।
বগুড়ার সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে জেলা প্রশাসন কিংবা গণপূর্ত বিভাগ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পাঁচ বছরে শুনানি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটা একটা মিস্টিরিয়াস (রহস্যময়) ব্যাপার। আমি জিপি নিযুক্ত হয়েছি ২০০৯ সালের এপ্রিলে। শুধু এই সময়ের মধ্যেই যতবার তারিখ পড়েছে, ততবারই শুনানির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এরপর আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতের কাছে শুনানি এবং তার তারিখ এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনবার আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পাঁচ বছর ধরে শুনানিবিহীনভাবে এই মামলা এবং স্থগিতাদেশের জবাব পড়ে রয়েছে। আগামী তারিখ রয়েছে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জানি না তখন কী হবে।'
জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি/বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কমিটির সদস্যসচিব এবং গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল গাফফার সরকারি ভবন জামায়াতের অবৈধ দখলে থাকার বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে জানান, এটা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা থাকলে সেটা তাঁর জানার কথা। অন্তত গত দুই বছরে আদালতের নোটিশ আসতে দেখেননি তিনি। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি এই কার্যালয়ে যোগদান করেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গোলাম কবীর জানান, তিনি এই দপ্তরে নতুন যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে এই অবৈধ দখলদারি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু করার থাকলে তিনি তা অবশ্যই করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির এবং দৈনিক সাতমাথার প্রকাশক ও সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে খোঁজ নিয়েও তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ায় পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলারই আসামি হওয়ায় তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দৈনিক সাতমাথার বার্তা সম্পাদক এফ শাহজাহান জানান, তাঁদের কার্যালয়ের ভবনটি আগে অবৈধ আখ্যায়িত করে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। তবে পরে তিনি শুনেছেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন করে লিজ নবায়ন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তাঁর জানা নেই।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল এ বিষয়ে বলেন, 'অন্যায় নোটিশের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে গিয়েছি। তবে এখনো বিষয়টি নিয়ে শুনানি হয়নি। আদালত ন্যায়সংগত রায় দিলে আমরা সেটা মেনে নেব। আর রায়ের নামে প্রহসন করা হলে মানব না। সে ক্ষেত্রে জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের কার্যালয় রক্ষা করব।'
একনজরে
* ২২ বছর ধরে অবৈধ দখলেরেখেছে জামায়াত
* '৭৯ সালে এ ভবনে কার্যক্রম শুরু করে
* ৫ বছর ধরে মামলার শুনানি হচ্ছে না
নবাববাড়ি সড়কে আইন কলেজ-সংলগ্ন এই ভবনটি সিদ্দিক আমিন ভবন নামেই পরিচিত। সিদ্দিক আমিন ছিলেন একজন অবাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে এটিকে সংরক্ষিত পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে জেলা প্রশাসন। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। গণপূর্ত বিভাগ ওই ভবনে তাদের মূল অফিস থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট নামের একটি শাখা স্থানান্তর করে।
বগুড়ার ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (আরডিসি) শরিফুল হক এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯৭৯ সালে বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শহিদুল আলমের সময় জামায়াতে ইসলামী এই ভবনের নিচতলার একাংশ মাসিক ভাড়ায় বরাদ্দ নিয়ে সেখানে কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলার ঘরগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৮৯ সালের দিকে এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য জাহানারা হাসিব নামের এক মহিলা ভাড়া হিসেবে বরাদ্দ নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলায় বসবাস শুরু করেন। পরে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে তিনি স্থায়ী বরাদ্দের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও সেটি অনুমোদন করা হয়নি। কারণ হিসেবে শরিফুল হক জানান, ১৯৮৪ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালায় (স্মারক নং-৫/১ ২৬/৮৩/৮৩০) কোনো পরিত্যক্ত বাড়ি বা সম্পত্তি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকায় স্থায়ী বরাদ্দের কোনো সুযোগ ছিল না। এ কারণে ১৯৯০ সালে জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি/বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এই ভবনে অবস্থানকারী সবার লিজ বাতিল করে এটি গণপূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আগেই ভবনের নিচতলার একাংশে থাকা গণপূর্ত বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ অফিসটি সরিয়ে নেওয়া হলে ওই অংশটিও জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত জোট সরকারের সময় ভবনটির দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ জামায়াতের নিজস্ব প্রকাশনা হিসেবে পরিচালিত দৈনিক সাতমাথার কাছে লিজ দেওয়া হয়। পত্রিকাটির প্রকাশক-সম্পাদক এই লিজের জন্য গণপূর্ত বিভাগে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি দৈনিক সাতমাথার কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এই ভবন ভাড়া দেওয়া হলো। বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের প্রধান সহকারী মিনহাজ উদ্দিন জানান, দৈনিক সাতমাথার জন্য বরাদ্দ করা কক্ষগুলোর ভাড়া ছিল মাসিক ২১০ টাকা। এই ভাড়ার টাকা তারা রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে তাঁদের কাছে রসিদ দিয়ে যেত। তিনি আরো জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেআইনিভাবে এই লিজ প্রদানের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর (স্মারক নং-২২/২১০/১৯/১৩২১) দৈনিক সাতমাথার নামে বরাদ্দ করা কক্ষগুলোর লিজ বাতিল করা হয়। পরে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাড়ির দখল গণপূর্ত বিভাগের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যও পত্রিকার সম্পাদকের কাছে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন ঘটেনি।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগ থেকে নোটিশ পাওয়ার পরপরই দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৯ নম্বর রুল-এর ১ ও ১৫১ ধারায় ওই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে দৈনিক সাতমাথার পক্ষে একটি মামলা করা হলে আদালত সেখানে স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত এই মামলা এবং স্থিতাবস্থার ব্যাপারে আদালতে কোনো শুনানি হয়নি। তবে আদালতের আদেশের সুযোগ নিয়ে ভবনটি এখনো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে জামায়াত।
বগুড়ার সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে জেলা প্রশাসন কিংবা গণপূর্ত বিভাগ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পাঁচ বছরে শুনানি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটা একটা মিস্টিরিয়াস (রহস্যময়) ব্যাপার। আমি জিপি নিযুক্ত হয়েছি ২০০৯ সালের এপ্রিলে। শুধু এই সময়ের মধ্যেই যতবার তারিখ পড়েছে, ততবারই শুনানির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এরপর আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতের কাছে শুনানি এবং তার তারিখ এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনবার আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পাঁচ বছর ধরে শুনানিবিহীনভাবে এই মামলা এবং স্থগিতাদেশের জবাব পড়ে রয়েছে। আগামী তারিখ রয়েছে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জানি না তখন কী হবে।'
জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি/বাড়িঘর ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কমিটির সদস্যসচিব এবং গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল গাফফার সরকারি ভবন জামায়াতের অবৈধ দখলে থাকার বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে জানান, এটা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা থাকলে সেটা তাঁর জানার কথা। অন্তত গত দুই বছরে আদালতের নোটিশ আসতে দেখেননি তিনি। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি এই কার্যালয়ে যোগদান করেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গোলাম কবীর জানান, তিনি এই দপ্তরে নতুন যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে এই অবৈধ দখলদারি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু করার থাকলে তিনি তা অবশ্যই করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির এবং দৈনিক সাতমাথার প্রকাশক ও সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে খোঁজ নিয়েও তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ায় পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলারই আসামি হওয়ায় তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দৈনিক সাতমাথার বার্তা সম্পাদক এফ শাহজাহান জানান, তাঁদের কার্যালয়ের ভবনটি আগে অবৈধ আখ্যায়িত করে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। তবে পরে তিনি শুনেছেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন করে লিজ নবায়ন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তাঁর জানা নেই।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল এ বিষয়ে বলেন, 'অন্যায় নোটিশের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে গিয়েছি। তবে এখনো বিষয়টি নিয়ে শুনানি হয়নি। আদালত ন্যায়সংগত রায় দিলে আমরা সেটা মেনে নেব। আর রায়ের নামে প্রহসন করা হলে মানব না। সে ক্ষেত্রে জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের কার্যালয় রক্ষা করব।'
একনজরে
* ২২ বছর ধরে অবৈধ দখলেরেখেছে জামায়াত
* '৭৯ সালে এ ভবনে কার্যক্রম শুরু করে
* ৫ বছর ধরে মামলার শুনানি হচ্ছে না
No comments