জিন তাড়ানোর নামে গরম দায়ের ছ্যাঁকা

জিন তাড়ানোর নামে এক কিশোরীর জিব ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এক গ্রাম্য ফকির গরম দা দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার শরীয়তপুরের সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই কিশোরী এখন জেলা সদরের একটি ক্লিনিকের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সে কথা বলতে ও মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারছে না।


পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামের জয়নাল ছৈয়ালের মেয়ে ও আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা আক্তার (১৩) গত ২০ অক্টোবর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিবেশী আজিজুল পাঠান চিকিৎসার জন্য জসিম তালুকদার নামের এক গ্রাম্য ফকিরের সন্ধান দেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার চব্বিশরশি গ্রামে। জসিম মঙ্গলবার ওই কিশোরীর বাড়িতে এসে জানান, তার ওপর জিনের আসর পড়েছে।
একপর্যায়ে জিন তাড়ানোর জন্য চিকিৎসা দিতে কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের কাছে অনুমতি চান জসিম। অনুমতি পেয়ে রাত আটটা থেকে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি প্রথমে বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বেলে ওই কিশোরীর মুখে ছ্যাঁকা দেন। পরে দা গরম করে জিব, গলা, পায়ের পাতা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। পাঁচ ঘণ্টা এভাবে চিকিৎসা চালানোর পর ওই কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ফকির চলে যাওয়ার পর খাদিজার জ্ঞান ফেরে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাকে গত বুধবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খাদিজাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকায় স্বজনেরা তাকে শহরের মেট্রো ক্লিনিকে ভর্তি করে।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তফা খোকন জানান, দা দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ায় খাদিজার শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মেট্রো ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, একটি শয্যায় খাদিজা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জিবে গরম দা দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ায় কথা বলতে পারছে না। এ ঘটনার পর থেকে সে খাবারও খেতে পারছে না। খাদিজার মা মালেকা বেগম বলেন, ‘ফকির প্রথম বলেছিল, ঝাড়ফুঁক দিয়েই জিন তাড়ানো হবে। বুঝতে পারিনি মেয়েটিকে এভাবে নির্যাতন করা হবে। আমরা ভণ্ড ফকিরের শাস্তি চাই। ওই ফকিরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে।’
গতকাল শুক্রবার সকালে চব্বিশরশি গ্রামে গিয়ে জসিম তালুকদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাওয়া যায়নি।
আজিজুল পাঠান বলেন, ‘এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ফকিরের সন্ধান পেয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁকে এনেছিলাম। এমন পরিস্থিতি হবে জানতে পারলে এ কাজে জড়াতাম না।’
শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল আলম জানান, অপচিকিৎসার বিষয়ে এখনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.