পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ-অতীত পেছনে রাখার আহ্বান হিনার

১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের বৈঠকে দীপু মনি এ আহ্বান জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অতীত পেছনে ফেলে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস এ কথা জানান।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলামাবাদে আসন্ন ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন। বিকেলে ঢাকা ছাড়ার আগে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
হিনা রাব্বানি খার গতকাল সকাল ১০টায় বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। এরপর সকাল ১১টার দিকে হিনা রাব্বানি খার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান ডা. দীপু মনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। ওই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষাৎকালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ডি-৮ সম্মেলন ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'পাকিস্তান জানিয়েছে, দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে ওই সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায় তারা।'
মিজারুল কায়েস বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী (দীপু মনি) পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, আমাদের নিশ্চয়ই সামনের দিকে এগোতে হবে। আমাদের সম্পর্ক প্রসারের ব্যাপারে বাংলাদেশও আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অমীমাংসিত কিছু বিষয় আছে, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া দরকার। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য পাকিস্তান এগিয়ে আসবে। একাত্তরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চয়ই একপর্যায়ে আসবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।'
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'যেহেতু এটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নয়, তাই ওই বিষয়গুলো নিয়ে বিশদ আলোচনার সুযোগ ছিল না। আমরা বলেছি, ওই অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা করে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে পারব।'
ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের মনোভাব জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'আমরা প্রত্যাশা করছি, অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা করে পাকিস্তান এগিয়ে আসবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৭৪ সালের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে তাঁদের রিগ্রেট (দুঃখ) ইত্যাদি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, পেছনকে ফেলে রেখে আমাদের সামনের দিকে যাওয়া উচিত।'
মিজারুল কায়েস বলেন, ভবিষ্যতে পররাষ্ট্রসচিবসহ সব ফোরামে অমীমাংসিত বিষয় ও নতুন নতুন ইস্যুতে আলোচনা হবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু ডি-৮-এর দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তাই ওই ফোরাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সুযোগে বাংলাদেশ তার দাবিগুলো তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করা এবং বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ছবি তোলার সুযোগ না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকরা জানতে চান, ক্ষমা না চাওয়ার কারণেই কি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি? জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তিনি একমত নন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরো জোরদার হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে সহযোগিতায় বিশ্বাস করে।
ভবিষ্যতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে যৌথ কমিশন গঠন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক নিয়েও দীপু মনি ও হিনা রাব্বানির মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মিজারুল কায়েস।
ডি-৮ সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সফর করবেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'নিমন্ত্রণপত্র তো আজ (শুক্রবার) হস্তান্তর হচ্ছে। আপনারা অপেক্ষা করুন। নিমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এটাই নিয়ম।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সফর করেছিলেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসে ডি-৮ সম্মেলনে তাঁর অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯ থেকে ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে ডি-৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উন্নয়নশীল আট জাতির জোটের এ সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় নেতারা বৈঠক করবেন ২২ নভেম্বর।

No comments

Powered by Blogger.