সিপিসির সম্মেলন- অন্তরালেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) চলতি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলটির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে সিপিসির বিভিন্ন পদে মনোনয়নের পুরো প্রক্রিয়া বরাবরের মতো এবারও পর্দার অন্তরালেই সম্পন্ন হচ্ছে। প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যাপারে দলটির বিপ্লবী ইতিহাসের গৌরবময় ধারা অটুট রাখা হবে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।


ক্ষমতাসীন দল সিপিসির নতুন সাধারণ সম্পাদকের পদে চীনের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। সেই সুবাদে তিনিই দেশটির সম্ভাব্য নতুন প্রেসিডেন্ট। সম্ভবত আগামী মার্চেই তিনি ওই দায়িত্ব বুঝে নেবেন। সিপিসির ৬৩ বছরের দীর্ঘ শাসনকালে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বে এটিই হবে নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনের দ্বিতীয় নজির। এ ছাড়া দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। দলের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে সম্ভাব্য দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে অগ্রসর নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়াং কিশান, লি ইউয়ানচাও, ঝাং দেজিয়াং, ঝাং গাওলি, লিউ ইউনশান, ইউ ঝেংশেং, ওয়াং ইয়াং, লিউ ইয়ানদং, মেং জিয়ানঝু ও হু চুনহুয়া। পুরোনো নেতাদের মধ্যে ৬৮ বছরের বেশি বয়সীরা এবার অবসরে যাচ্ছেন। সিপিসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির নতুন নয় বা সাত সদস্যের নাম ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হলেও গোপন রাখা হয়েছে। ওই কমিটি নির্বাচন-প্রক্রিয়া অস্পষ্ট থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিগত তদবিরই বেশি গুরুত্ব পায়।
রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে আয়োজিত অষ্টাদশ সম্মেলনের প্রথম দিনে গত বৃহস্পতিবার সমবেত হন সিপিসির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। দলটির অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পেছনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল দলীয় প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি। নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাপারে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তেমন কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনে মূল আকর্ষণ ছিল প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের দেওয়া দেড় ঘণ্টাব্যাপী ভাষণ। দলটির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত নেতাদের নাম জানতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কমিটির নতুন নেতৃত্ব তখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হবে। পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নয়জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। এ ছাড়া পলিটব্যুরো কমিটিতে থাকেন ২৪ জন সদস্য। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২০৪ সদস্য ছাড়াও বিকল্প সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৬৭ জন। এ ছাড়া দুই হাজার ২১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দলের পঞ্চবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রতি ১০ বছর অন্তর বিশেষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ও প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও চীনকে টানা ১০ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন শি জিনপিং ও লি কেকিয়াং দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই দেখার বিষয়। সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের হয়তো দলের বিভিন্ন নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। চীনে নেতৃত্বের পালাবদলের প্রাক্কালে দেশটিতে বিদ্যমান চরম গণ-অসন্তোষের বিষয়টিকে বিশ্লেষকেরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিকে দেশের জন্য এক সন্ধিক্ষণ বলে জনগণের রাজনীতিসচেতন অংশটি মনে করছে। অর্থনীতির ধীরগতি এবং ঋণের বোঝা ক্রমেই বাড়তে থাকায় জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। এ ছাড়া পুরোপুরি গণতন্ত্র না হলেও মানুষ এখন সরকারের কাছে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আশা করছে। স্বাধীনতাকামী তিব্বতিদের বিক্ষোভ ও আত্মাহুতির মতো ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থায় সিপিসির নতুন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। তবে নেতৃত্বে একেবারে নতুনদের আসীন হওয়ার সম্ভাবনা অল্প বলেই মনে করেন চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের বিশেষজ্ঞ উইলি ল্যাম। তাঁর ভাষায়, সিপিসির চলতি সম্মেলনে তারুণ্যের নবজাগরণ হবে বলে ধারণা করা হলেও সম্ভবত বিপরীত ব্যাপারটিই ঘটতে যাচ্ছে। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.