একটি বুদ্ধমূর্তি ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন by লিটন বড়ূয়া
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর মুক্তিকামী আপামর জনগণ স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও ৩০ লাখ শহীদের তরতাজা জীবন এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে প্রাণ পাওয়া স্বপ্ন এখনও চোখের পাতার ভেতরেই রয়ে গেল।
আজ তীব্র দারিদ্র্য, গণদুর্নীতি, বেকারত্ব, অশিক্ষার অভিশাপ ইত্যাদি দুঃস্বপ্নের মেঘে ঢেকে গেছে বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিষ্ঠাকালীন স্বপ্ন। স্বাধীনতা-পরবর্তী স্বৈরশাসকদের নগ্ন থাবায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন প্রথম ক্ষত-বিক্ষত হয়। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার, আলবদর, প্রতিক্রিয়াশীলদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ উন্মোচিত হয়। এরপর গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করেনি, বরং ক্ষমতায় টিকে থাকার তাগিদে তারাও অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় মৌলবাদকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রজীবন এখন শেষ প্রান্তে। এ সময়ের ভেতর অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল উপাসনালয় প্রাঙ্গণের পাশে গৌতম বুদ্ধের অসমাপ্ত মূর্তির কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিসমাপ্তি দেখতে পেলাম না। যে ব্যক্তি সারাজীবন বিশ্ব মানবতার দর্শন প্রচার করে গেছেন, সেই ব্যক্তির প্রতিমূর্তি যখন বছরের পর বছর অর্ধ-নির্মিত অবস্থায় এবং তীব্র অবহেলায় ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে থাকে, তখন রাষ্ট্রীয় বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। ২০০৪-০৫ সালের দিকে এই বুদ্ধমূর্তির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। কিংবা নির্মাণ কাজে গত ৭ বছরে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন নেই। এ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে হল প্রশাসনের বক্তৃতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা খুবই লজ্জাজনক। এত বছর পরে হল প্রশাসন বরাবরের মতোই ব্যক্তি উদ্যোগের অনগ্রসরতার অবান্তর অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের মনে রাখা উচিত, এই বুদ্ধমূর্তি কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, যে ব্যক্তির ওপর এর নির্মাণ কাজ নির্ভর করবে বরং এই বুদ্ধমূর্তি জাতীয় সম্পত্তি এবং এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় দায়িত্বশীলতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের প্রগতিশীলতার তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যখন মানবতাবাদী দর্শনের পুরোধা মহামতি বুদ্ধের অর্ধ নির্মিত প্রতিমূর্তি ৭ বছর ধরে অবহেলায়-অযত্নে পাথরের আবর্জনায় পরিণত হয়, তখন এ প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক যে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন কি ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে?
স লিটন বড়ূয়া
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রজীবন এখন শেষ প্রান্তে। এ সময়ের ভেতর অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল উপাসনালয় প্রাঙ্গণের পাশে গৌতম বুদ্ধের অসমাপ্ত মূর্তির কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিসমাপ্তি দেখতে পেলাম না। যে ব্যক্তি সারাজীবন বিশ্ব মানবতার দর্শন প্রচার করে গেছেন, সেই ব্যক্তির প্রতিমূর্তি যখন বছরের পর বছর অর্ধ-নির্মিত অবস্থায় এবং তীব্র অবহেলায় ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে থাকে, তখন রাষ্ট্রীয় বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। ২০০৪-০৫ সালের দিকে এই বুদ্ধমূর্তির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। কিংবা নির্মাণ কাজে গত ৭ বছরে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন নেই। এ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে হল প্রশাসনের বক্তৃতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা খুবই লজ্জাজনক। এত বছর পরে হল প্রশাসন বরাবরের মতোই ব্যক্তি উদ্যোগের অনগ্রসরতার অবান্তর অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের মনে রাখা উচিত, এই বুদ্ধমূর্তি কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, যে ব্যক্তির ওপর এর নির্মাণ কাজ নির্ভর করবে বরং এই বুদ্ধমূর্তি জাতীয় সম্পত্তি এবং এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় দায়িত্বশীলতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের প্রগতিশীলতার তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যখন মানবতাবাদী দর্শনের পুরোধা মহামতি বুদ্ধের অর্ধ নির্মিত প্রতিমূর্তি ৭ বছর ধরে অবহেলায়-অযত্নে পাথরের আবর্জনায় পরিণত হয়, তখন এ প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক যে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন কি ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে?
স লিটন বড়ূয়া
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments