পাঁচ বছর আগের একদিন by আসিফ কবীর

পাঁচ বছর আগে ১৬ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজবন্দিত্ব বরণ করে কারান্তরীণ হন। এ অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অনুরণিত হয়ে 'হাসিনা গ্রেফতারে প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া' লিখেছিলাম ২৭ জুলাই ২০০৭। এতে বলা হয়, '...বেগম জিয়াও এর নিন্দায় বিবৃতি দিয়েছেন।


বি. চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিদের জন্য বিকল্প সাজার কথা ভাবতে আবেদন জানান। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মিনুর পত্নী ও বিএনপি নেত্রী সালমা শাহাদাতও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। এই রি-অ্যাকশনগুলো সমানুভূতিপ্রসূত বলে মনে হয়েছে। এ খবরে গোপালগঞ্জে ওই দিন দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা জরুরি আইন উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মুভমেন্ট করার সক্ষমতার ব্যাপারে গণমনস্তত্ত্বকে স্পষ্ট করে। নির্মল সেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু প্রমুখ ভিন্নমত ও আদর্শ অনুবর্তী রাজনীতিকরাও নিন্দা ও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আহূত কালো ব্যাজ ধারণ ও কর্মবিরতি মতাদর্শিক ভেদাভেদ ভুলে প্রায় সর্বাত্মকভাবে পালনের ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে গণমাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে।
'...শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর কোনো কোনো বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে খোলামেলা কথা বলে তার বন্দিত্বকে ত্বরান্বিত করেছেন। ... কিন্তু জনস্বার্থে স্পষ্ট বলার একজন মানুষ চলমান সময়ে অতীব দরকারি ছিল।
' ...অপরপক্ষে রাজনীতিবিদদের সাফল্য বলতে এখন একমাত্র ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হলেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিগত ১৫ বছরের জিডিপির গ্রোথরেট বৃদ্ধিসহ গণতন্ত্রের বদৌলতে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রবাহের সুবিধার কথা অনস্বীকার্যভাবে বলতেই হয়। আমরা কামনা করি, শুদ্ধি অভিযান নিষ্পন্ন রাজনীতিকরা আগামীতে কলুষমুক্ত রাজনীতি উপহার দেবেন। যেখানে তাদের সাফল্য যৎসামান্য (!) হবে না। আরও কামনা করি, শেখ হাসিনার গ্রেফতারে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়ায় যথাক্রমে আইনের শাসন সমুন্নত রাখা ও ষড়যন্ত্রের কথা এসেছে। এ দুই বক্তব্যের সত্যটি আসলে কী তা সময়েই প্রকাশিত হবে। আর বিপক্ষের বিশেষত হাসিনাপুত্র প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃত 'ষড়যন্ত্র' সত্য হলে তা হবে জাতির জন্য অপরিসীম দুর্ভোগের।'
এ লেখায় যে তথ্যটি আমি দিতে পারিনি সেদিন, সেটি হলো সদ্য প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী গ্রন্থ 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র মুখবন্ধ শেখ হাসিনা কারাগারে থেকেই রচনা করেন।
পিতা-কন্যার কী অসাধারণ আন্তঃমিল- কারাগারেই অমূল্য বইটির আধেয় প্রস্তুত হলো। দু'জনই রাজবন্দি থেকে বইটির কাজ করলেন। এ বইয়ের সূত্রে দেশবাসী জানতে পারল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট রচনায় বঙ্গবন্ধু কীভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি কেবল ১৯৫৫ সালের ইতিহাস বিবৃত করেছেন। পরের ১৬টি বছরের কথা জানতে পারতাম আমরা। কিন্তু ঘাতকরা সে সুযোগ দিল না।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নতুন মুখের মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীর কারাজীবনে নিজের সঙ্গে নিজের 'অন্তর্ব্যক্তিক' যোগাযোগেরই ফল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের জয়ই সূচিত হয়েছে। চাপিয়ে দিয়ে বা আরোপিত কিছু করে সুফল বয়ে আনা যায়নি। সেদিন আইনের শাসনের নামে মুখ্যত ষড়যন্ত্রই হয়েছিল_ তা সন্দেহাতীত। অপরপক্ষে তা মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা আজ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতির অভিভাবক। যে জাতি বড় বড় দাতাগোষ্ঠীর বিরূপতায় হাল না ছেড়ে আরও আত্মবিশ্বাসী ও সংগঠিত হয়ে ওঠে। যারা সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস রাখে জীবনে জয়ী হবে। ক্ষুদ্র স্বার্থবাদিতায় গুটিকয় লোক শুধু প্রত্যাশা করেন 'তৃতীয় শক্তি'র।
 

No comments

Powered by Blogger.