চরাচর-শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মাহাত্ম্য by লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী
যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই জগন্নাথ। ভগবান জগন্নাথদেব হলেন, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর রূপে প্রকাশিত। সংস্কৃত ভাষায় জগৎ অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে ঈশ্বর। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর।
একদা দ্বারকায় মহীষীগণ রোহিনী মাতাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে কৃষ্ণকে এত সেবা করার পরও তিনি যেন শ্রীদাম-সুদাম, কখনো মা যশোদা-নন্দবাবা, কখনো ব্রজবাসীগণ বলতে বলতে মূর্ছা যান। তার কারণ কী? তখন কৃষ্ণ বলরামের অজান্তে সুভদ্রা দেবীকে একটি কক্ষের দ্বারে রেখে নিভৃত কক্ষাভ্যন্তরে রোহিনী মাতা মহীষীদের কাছে ব্রজবাসীদের কৃষ্ণ বিরহের কথা বর্ণনা করতে শুরু করলেন যে, বৃন্দাবনের বৃক্ষরাজি, তরুলতা কৃষ্ণ বিরহে ফুলে-ফুলে সুশোভিত হয় না। গো, গো-বৎস এবং সখাগণ অনাহারে অনিদ্রায় কালাতিপাত করছে। মা যশোদা, পিতা নন্দ প্রতিদিন ছানা মাখন নিয়ে গোপাল গোপাল বলে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেছেন। কৃষ্ণ বিরহে ব্রজগোপীগণ প্রাণান্তপ্রায়। এদিকে ভগিনী সুভদ্রা দেবীকে একটি কক্ষের দ্বারে দেখতে পেয়ে কৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁর কাছে এসে দাঁড়ালেন। কক্ষাভ্যন্তর থেকে ভেসে আসা ধ্বনি, রোহিনী মাতা কর্তৃক বর্ণিত ব্রজবাসীগণের কৃষ্ণ বিরহ কথা শ্রবণ করতে করতে কৃষ্ণ, বলরাম এবং সুভদ্রা বিকারগ্রস্ত হতে লাগলেন। তাঁদের হস্ত-পদ শরীরাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হতে লাগল। চক্ষুদ্বয় বিস্ফোরিত হতে লাগল। এমতাবস্থায় সেখানে নারদমুনি উপস্থিত হয়ে সেই রূপ দর্শন করলেন। তখন নারদমুনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করলেন, হে ভগবান আমি আপনার যে রূপ দেখলাম, যে ভক্তবিরহে আপনি স্বয়ং বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকেন, এ করুণার মূর্তি জগৎবাসীর কাছে প্রকাশ করুন। নারদমুনির প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, দারুব্রহ্ম (জগন্নাথ) রূপে শ্রীক্ষেত্রে বা পুরীতে আমি এই রূপে আবির্ভূত হবো।
পরবর্তী কালে রাজা এক অজ্ঞাত বৃদ্ধ ভাস্করের পরিচয় পেয়ে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি তৈরি করতে অনুরোধ করলেন। ভাস্করটি এ কার্যভার গ্রহণ করলেও একটি শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ২১ দিন সম্পূর্ণ গোপনীয়তা পালনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। রাজা সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে উঠেন। অবশেষে ১৫ দিন পরেই ভাস্করের কর্মশালায় গিয়ে তিনি দৃষ্টিক্ষেপ করা মাত্রই ভাস্কর অদৃশ্য হলেন। পরে থাকল শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব-বলদেব-সুভদ্রাদেবীর অসম্পূর্ণ মূর্তি। মূর্তি দেখে অনুশোচনা করতে লাগলেন যে, কেন আমি ভাস্করের কথামতো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলাম না।
ব্রজবাসীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর বাল্য লীলাস্থলী বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। ব্রজবাসীগণ শ্রীকৃষ্ণকে বৃন্দাবনের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্রজের বেশে দেখতে উন্মুখ হলেন। তখন ব্রজবাসীগণ কৃষ্ণ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর রথের ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথ টানতে টানতে বৃন্দাবনে নিয়ে গেলেন।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ পৃথিবীর সব নগরাদি ও গ্রামে রথযাত্রা উৎসব পৌঁছে দেন।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জ্বল ও দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করে সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে এ উৎসব বিশেষ ভূমিকা রাখুক- এই কামনা করি। দেশবাসীকে রথযাত্রা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী
পরবর্তী কালে রাজা এক অজ্ঞাত বৃদ্ধ ভাস্করের পরিচয় পেয়ে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি তৈরি করতে অনুরোধ করলেন। ভাস্করটি এ কার্যভার গ্রহণ করলেও একটি শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ২১ দিন সম্পূর্ণ গোপনীয়তা পালনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। রাজা সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে উঠেন। অবশেষে ১৫ দিন পরেই ভাস্করের কর্মশালায় গিয়ে তিনি দৃষ্টিক্ষেপ করা মাত্রই ভাস্কর অদৃশ্য হলেন। পরে থাকল শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব-বলদেব-সুভদ্রাদেবীর অসম্পূর্ণ মূর্তি। মূর্তি দেখে অনুশোচনা করতে লাগলেন যে, কেন আমি ভাস্করের কথামতো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলাম না।
ব্রজবাসীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর বাল্য লীলাস্থলী বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। ব্রজবাসীগণ শ্রীকৃষ্ণকে বৃন্দাবনের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্রজের বেশে দেখতে উন্মুখ হলেন। তখন ব্রজবাসীগণ কৃষ্ণ, বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর রথের ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথ টানতে টানতে বৃন্দাবনে নিয়ে গেলেন।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ পৃথিবীর সব নগরাদি ও গ্রামে রথযাত্রা উৎসব পৌঁছে দেন।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জ্বল ও দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করে সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে এ উৎসব বিশেষ ভূমিকা রাখুক- এই কামনা করি। দেশবাসীকে রথযাত্রা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী
No comments