উজ্জ্বল বাতিঘর রবীন্দ্রনাথ by শেখ হাসিনা
তার জন্ম কলকাতায়। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাংলাদেশের পতিসর, শিলাইদহ আর শাহজাদপুরে। জমিদারি দেখাশোনার কাজে এলেও তিনি গরিব প্রজার কল্যাণে কাজ করেছেন। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন নদীমাতৃক গ্রামবাংলার প্রকৃতি আর আমাদের কৃষিনির্ভর গ্রামীণ সমাজকে।
সৃষ্টি করেছেন অসামান্য সব গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোটগল্প। পতিসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি সমবায়।
প্রবর্তন করেছিলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি
বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যতদিন থাকবে
ততদিন আমাদের মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন
রবীন্দ্রনাথ। তার সৃষ্টি, তার স্বপ্ন আর জীবনদর্শন এই
মহান মানুষটিকে শুধু বাঙালি বা ভারতীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ
রাখেনি। স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ আজ
বিশ্বজনীন, যথার্থ অর্থেই বিশ্বকবি। তার জন্মের দেড়শ'
বছর পরেও তিনি আজও আমাদের চেতনায়
জাগ্রত হয়ে আছেন
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানের সভাপতি,
সহকর্মীবৃন্দ,
আমাদের মাঝে উপস্থিত ভারতের মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব হামিদ আনসারি,
এবং সমবেত সুধীবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম,
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার ১৪০০ সাল কবিতায় বলেছিলেন_
'আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!'
আমাদের সংগ্রাম ও আন্দোলনের প্রেরণার আরেক উৎস বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরুর এ কবিতা পড়ে একই শিরোনামে তিনি লিখেছিলেন_
'আজি হতে শতবর্ষ আগে
কে কবি, স্মরণ তুমি, করেছিলে আমাদেরে
শত অনুরাগে
আজি হতে শতবর্ষ আগে!'
আজ ১৪১৮ বঙ্গাব্দে সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর এই শুভক্ষণে বাংলাদেশের সকল মানুষের পক্ষ থেকে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি।
রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি নন, লেখক নন, তিনি বাঙালির ব্যক্তি ও সমাজজীবনের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। আমাদের প্রেম ও বিরহ, দ্রোহ ও শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ থাকেন হৃদয়ের কাছের মানুষ হয়ে। তার সৃষ্টির ঝরনাধারায় আমরা সিক্ত হই প্রতিনিয়ত।
ছোটবেলায় আমার বাবা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভরাট উদাত্ত গলায় আবৃত্তি শুনতাম, 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...' অথবা 'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'।
আজ যখন আমরা রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি তখন আমার আব্বাকে বারবার মনে পড়ছে। তিনি সময় পেলেই আবৃত্তি করতেন তার প্রিয় পঙ্ক্তি_
"এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দন 'যেতে নাহি দিব'। হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।"
আমরা আপনজনদের আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই, কিন্তু সবাইকেই একদিন এই ধরণী ছেড়ে চলে যেতে হয়। থাকে শুধু তার স্মৃতি ও কীর্তি।
আমার রবীন্দ্রনাথ পাঠের হাতেখড়ি হয়েছিল আব্বার কাছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছিল আরও ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রনাথকে, তার সাহিত্যকে জানার।
বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের উনিশটি বছর কেটেছে জেলে। গ্রেফতারের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি আমার মা দিয়ে দিতেন তার জেলজীবনের প্রিয় সঙ্গী বইপত্রের সঙ্গে রবীন্দ্র রচনাবলীও।
সংকট ও প্রতিকূলতার প্রতিটি সময়ে রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছে মাথানত না করতে। বিশেষ করে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের নির্জন কারাবাসের সেই দিনগুলোতে সব সময়ের মতোই ফজরের নামাজ পড়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে দিন শুরু করতাম। সারাদিন কাটত বই পড়ে। সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেই আমি মানসিকভাবে উজ্জীবিত হতাম।
আজকের এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন ভারতের মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব মোহাম্মদ হামিদ আনসারি। আমাদের এই দুই রাষ্ট্রের মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সেতু হয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতও তারই রচনা।
তার জন্ম কলকাতায়। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাংলাদেশের পতিসর, শিলাইদহ আর শাহজাদপুরে। জমিদারি দেখাশোনার কাজে এলেও তিনি গরিব প্রজার কল্যাণে কাজ করেছেন। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন নদীমাতৃক গ্রামবাংলার প্রকৃতি আর আমাদের কৃষিনির্ভর গ্রামীণ সমাজকে। সৃষ্টি করেছেন অসামান্য সব গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোটগল্প। পতিসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি সমবায়। প্রবর্তন করেছিলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি।
সাম্প্রদায়িকতার ঊধর্ে্ব উঠে বিশ্বমানব হওয়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তাতেও রয়েছে শিলাইদহ তথা কুষ্টিয়া অঞ্চলের বাউলদের প্রভাব। বাউল গান, বিশেষভাবে লালন সাঁইয়ের গানে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন লোকজীবনে বহমান সম্প্রীতির ধারার পরিচয়। তিনি নিজে তার রচনা এবং বক্তৃতায় এর উলেল্গখ করেছেন।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। তা হলো, কলকাতা বা অন্য কোথাও নয়, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বিয়ে করেছিলেন এই বাংলাদেশেরই খুলনার দক্ষিণ ডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিনীকে; বিয়ের পর যাকে নতুন নাম দিয়েছিলেন মৃণালিনী।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমাদের সরকার শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংরক্ষণ করা হয়েছে শাহজাদপুর ও পতিসরের রবীন্দ্রস্মৃতি।
এছাড়াও আমরা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছি। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের সহযোগিতা আমাদের কাম্য।
আমার ভারত সফরকালীন যৌথ ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করছে।
এ উপলক্ষে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে যে বিশেষ ট্রেন চলবে তার নামকরণ করার অনুরোধ জানিয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে এলো আমার প্রিয় রবীন্দ্রকাব্যের পঙ্ক্তি, 'ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট এ তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি'। ট্রেনের নামকরণ করলাম 'সোনার তরী'। ভারত সরকার সেই নাম গ্রহণ করল। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে। তার সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাভাষাকে।
অন্যদিকে, ১৯৪৮ সালে সেদিনের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াই। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে সেই বাংলাভাষাকে আমরা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলাম। কয়েকজন দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাঙালি ও গত মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় একুশে ফেব্রুয়ারি আজ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আমাদের ভাষার লড়াই থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধিকারের লড়াই। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীতে তার সাহিত্য ও গানকে নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এই ভূখণ্ডের মানুষ। সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেছিলাম আমাদের হৃদয়ে, চেতনায় ও বিশ্বাসে। সেদিন যারা রবীন্দ্রসাহিত্য নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
মুক্তিসংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল দেশের জন্য জীবন দিতে। প্রেম ও প্রার্থনার রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন আমাদের রক্তাক্ত সংগ্রামের অন্যতম উৎসাহদাতা। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দেশকে ভালোবাসার আবেগ নিয়ে সৃষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'।
রবীন্দ্রনাথের সময়ের অচলায়তন সমাজব্যবস্থায় নারী যখন অবরোধবাসিনী, তখন রবীন্দ্রনাথ তার 'সবলা' কবিতায় লিখেছিলেন_
'নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার
হে বিধাতা?'
তার সৃষ্ট নারী চরিত্র রক্তকরবীর নন্দিনী, গোরার সুচরিতা, ঘরে-বাইরের বিমলা ও চারঅধ্যায়ের এলা আজও হার না মানা নারীর প্রতীক হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
দেশ ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার কারণেই জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ সেনাদের গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি বর্জন করেছিলেন। তার গোরা ও চার অধ্যায় উপন্যাসে উঠে এসেছিল ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের চিত্র। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটক সেদিনের তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে।
রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ। তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আজ বিশ্বস্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। কৃষি উন্নয়ন, চিকিৎসা, সমবায় ও কুটির শিল্প সংক্রান্ত তার ভাবনার ফসল হিসেবে শান্তিনিকেতনের পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীনিকেতন।
রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের স্বদেশ ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষামুক্ত স্বদেশ। যেখানে কৃষক এবং খেটে খাওয়া শ্রমিক পাবে মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে চলার স্বাধীনতা। নারী পাবে তার বেঁচে থাকার অধিকার।
একই স্বপ্নের পথচলায় বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই করে গেছেন এমন এক বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য, যে দেশের প্রতিটি নাগরিক উন্নত জীবনের অধিকারী হবে।
আমি বিশ্বাস করি, একটি দেশ বা অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র হলে তার মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সে দেশ বা জাতি মাথা উঁচু করে চলতে পারে না।
রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করে আমরা গড়ে তুলতে চাই একটি সমৃদ্ধ, আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি যথার্থ কল্যাণ রাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ার শতকোটি মানুষের প্রধান শত্রু দারিদ্র্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ে যাব।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ। তার সৃষ্টি, তার স্বপ্ন আর জীবনদর্শন এই মহান মানুষটিকে শুধু বাঙালি বা ভারতীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখেনি। স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ আজ বিশ্বজনীন, যথার্থ অর্থেই বিশ্বকবি। তার জন্মের দেড়শ বছর পরেও তিনি আজও আমাদের চেতনায় জাগ্রত হয়ে আছেন।
অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলতে হয়_
'রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম;
জানিলাম এ জগত
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ_
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম_
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন_
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে, মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে \'
সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
প্রবর্তন করেছিলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি
বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যতদিন থাকবে
ততদিন আমাদের মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন
রবীন্দ্রনাথ। তার সৃষ্টি, তার স্বপ্ন আর জীবনদর্শন এই
মহান মানুষটিকে শুধু বাঙালি বা ভারতীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ
রাখেনি। স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ আজ
বিশ্বজনীন, যথার্থ অর্থেই বিশ্বকবি। তার জন্মের দেড়শ'
বছর পরেও তিনি আজও আমাদের চেতনায়
জাগ্রত হয়ে আছেন
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানের সভাপতি,
সহকর্মীবৃন্দ,
আমাদের মাঝে উপস্থিত ভারতের মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব হামিদ আনসারি,
এবং সমবেত সুধীবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম,
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার ১৪০০ সাল কবিতায় বলেছিলেন_
'আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!'
আমাদের সংগ্রাম ও আন্দোলনের প্রেরণার আরেক উৎস বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরুর এ কবিতা পড়ে একই শিরোনামে তিনি লিখেছিলেন_
'আজি হতে শতবর্ষ আগে
কে কবি, স্মরণ তুমি, করেছিলে আমাদেরে
শত অনুরাগে
আজি হতে শতবর্ষ আগে!'
আজ ১৪১৮ বঙ্গাব্দে সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর এই শুভক্ষণে বাংলাদেশের সকল মানুষের পক্ষ থেকে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি।
রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি নন, লেখক নন, তিনি বাঙালির ব্যক্তি ও সমাজজীবনের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। আমাদের প্রেম ও বিরহ, দ্রোহ ও শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ থাকেন হৃদয়ের কাছের মানুষ হয়ে। তার সৃষ্টির ঝরনাধারায় আমরা সিক্ত হই প্রতিনিয়ত।
ছোটবেলায় আমার বাবা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভরাট উদাত্ত গলায় আবৃত্তি শুনতাম, 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...' অথবা 'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'।
আজ যখন আমরা রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি তখন আমার আব্বাকে বারবার মনে পড়ছে। তিনি সময় পেলেই আবৃত্তি করতেন তার প্রিয় পঙ্ক্তি_
"এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দন 'যেতে নাহি দিব'। হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।"
আমরা আপনজনদের আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই, কিন্তু সবাইকেই একদিন এই ধরণী ছেড়ে চলে যেতে হয়। থাকে শুধু তার স্মৃতি ও কীর্তি।
আমার রবীন্দ্রনাথ পাঠের হাতেখড়ি হয়েছিল আব্বার কাছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছিল আরও ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রনাথকে, তার সাহিত্যকে জানার।
বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের উনিশটি বছর কেটেছে জেলে। গ্রেফতারের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি আমার মা দিয়ে দিতেন তার জেলজীবনের প্রিয় সঙ্গী বইপত্রের সঙ্গে রবীন্দ্র রচনাবলীও।
সংকট ও প্রতিকূলতার প্রতিটি সময়ে রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছে মাথানত না করতে। বিশেষ করে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের নির্জন কারাবাসের সেই দিনগুলোতে সব সময়ের মতোই ফজরের নামাজ পড়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে দিন শুরু করতাম। সারাদিন কাটত বই পড়ে। সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেই আমি মানসিকভাবে উজ্জীবিত হতাম।
আজকের এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন ভারতের মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব মোহাম্মদ হামিদ আনসারি। আমাদের এই দুই রাষ্ট্রের মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সেতু হয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতও তারই রচনা।
তার জন্ম কলকাতায়। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাংলাদেশের পতিসর, শিলাইদহ আর শাহজাদপুরে। জমিদারি দেখাশোনার কাজে এলেও তিনি গরিব প্রজার কল্যাণে কাজ করেছেন। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন নদীমাতৃক গ্রামবাংলার প্রকৃতি আর আমাদের কৃষিনির্ভর গ্রামীণ সমাজকে। সৃষ্টি করেছেন অসামান্য সব গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোটগল্প। পতিসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি সমবায়। প্রবর্তন করেছিলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি।
সাম্প্রদায়িকতার ঊধর্ে্ব উঠে বিশ্বমানব হওয়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তাতেও রয়েছে শিলাইদহ তথা কুষ্টিয়া অঞ্চলের বাউলদের প্রভাব। বাউল গান, বিশেষভাবে লালন সাঁইয়ের গানে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন লোকজীবনে বহমান সম্প্রীতির ধারার পরিচয়। তিনি নিজে তার রচনা এবং বক্তৃতায় এর উলেল্গখ করেছেন।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। তা হলো, কলকাতা বা অন্য কোথাও নয়, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বিয়ে করেছিলেন এই বাংলাদেশেরই খুলনার দক্ষিণ ডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিনীকে; বিয়ের পর যাকে নতুন নাম দিয়েছিলেন মৃণালিনী।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমাদের সরকার শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংরক্ষণ করা হয়েছে শাহজাদপুর ও পতিসরের রবীন্দ্রস্মৃতি।
এছাড়াও আমরা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছি। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের সহযোগিতা আমাদের কাম্য।
আমার ভারত সফরকালীন যৌথ ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করছে।
এ উপলক্ষে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে যে বিশেষ ট্রেন চলবে তার নামকরণ করার অনুরোধ জানিয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে এলো আমার প্রিয় রবীন্দ্রকাব্যের পঙ্ক্তি, 'ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট এ তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি'। ট্রেনের নামকরণ করলাম 'সোনার তরী'। ভারত সরকার সেই নাম গ্রহণ করল। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে। তার সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাভাষাকে।
অন্যদিকে, ১৯৪৮ সালে সেদিনের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াই। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে সেই বাংলাভাষাকে আমরা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলাম। কয়েকজন দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাঙালি ও গত মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় একুশে ফেব্রুয়ারি আজ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আমাদের ভাষার লড়াই থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধিকারের লড়াই। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীতে তার সাহিত্য ও গানকে নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এই ভূখণ্ডের মানুষ। সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেছিলাম আমাদের হৃদয়ে, চেতনায় ও বিশ্বাসে। সেদিন যারা রবীন্দ্রসাহিত্য নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
মুক্তিসংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল দেশের জন্য জীবন দিতে। প্রেম ও প্রার্থনার রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন আমাদের রক্তাক্ত সংগ্রামের অন্যতম উৎসাহদাতা। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দেশকে ভালোবাসার আবেগ নিয়ে সৃষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'।
রবীন্দ্রনাথের সময়ের অচলায়তন সমাজব্যবস্থায় নারী যখন অবরোধবাসিনী, তখন রবীন্দ্রনাথ তার 'সবলা' কবিতায় লিখেছিলেন_
'নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার
হে বিধাতা?'
তার সৃষ্ট নারী চরিত্র রক্তকরবীর নন্দিনী, গোরার সুচরিতা, ঘরে-বাইরের বিমলা ও চারঅধ্যায়ের এলা আজও হার না মানা নারীর প্রতীক হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
দেশ ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার কারণেই জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ সেনাদের গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি বর্জন করেছিলেন। তার গোরা ও চার অধ্যায় উপন্যাসে উঠে এসেছিল ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের চিত্র। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটক সেদিনের তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে।
রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ। তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আজ বিশ্বস্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। কৃষি উন্নয়ন, চিকিৎসা, সমবায় ও কুটির শিল্প সংক্রান্ত তার ভাবনার ফসল হিসেবে শান্তিনিকেতনের পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীনিকেতন।
রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের স্বদেশ ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষামুক্ত স্বদেশ। যেখানে কৃষক এবং খেটে খাওয়া শ্রমিক পাবে মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে চলার স্বাধীনতা। নারী পাবে তার বেঁচে থাকার অধিকার।
একই স্বপ্নের পথচলায় বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই করে গেছেন এমন এক বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য, যে দেশের প্রতিটি নাগরিক উন্নত জীবনের অধিকারী হবে।
আমি বিশ্বাস করি, একটি দেশ বা অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র হলে তার মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সে দেশ বা জাতি মাথা উঁচু করে চলতে পারে না।
রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করে আমরা গড়ে তুলতে চাই একটি সমৃদ্ধ, আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি যথার্থ কল্যাণ রাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ার শতকোটি মানুষের প্রধান শত্রু দারিদ্র্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ে যাব।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ। তার সৃষ্টি, তার স্বপ্ন আর জীবনদর্শন এই মহান মানুষটিকে শুধু বাঙালি বা ভারতীয় পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখেনি। স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ আজ বিশ্বজনীন, যথার্থ অর্থেই বিশ্বকবি। তার জন্মের দেড়শ বছর পরেও তিনি আজও আমাদের চেতনায় জাগ্রত হয়ে আছেন।
অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলতে হয়_
'রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম;
জানিলাম এ জগত
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ_
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম_
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন_
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে, মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে \'
সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
No comments