মন্ত্রী ও সচিবদের আপাতত সরিয়ে দিন-পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ

রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঠিক যে যুক্তিতে পদত্যাগ করেছিলেন, এবং সেটা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নীতিগত অবস্থান হয়ে থাকে, তাহলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের এখনই পদত্যাগ প্রত্যাশিত।
আমরা আশা করব, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে অস্বীকার করার চেষ্টার চেয়ে সরকার এই অভিযোগ


থেকে নিজেকে মুক্ত করার নতুন সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এসএনসি-লাভালিনের কাছে ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কানাডিয়ান তদন্ত দল এবং এখন তারা বাংলাদেশেও আসছে। উপরন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিবর্তিত অবস্থানকেও সরকার হালকাভাবে নিতে পারে না। যে দুদক দুর্নীতি না হওয়ার পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়েছিল, তারাই এখন নতুন করে অনুসন্ধানের পরিধি বাড়িয়েছে।
দুদকের চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেছেন যে এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে সরকারদলীয় এক হুইপ-ভ্রাতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অনুসন্ধানের বিষয়ে এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথম দিকে কানাডীয় পুলিশের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাবে দুদক। এ রকম প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ৪৭ মিলিয়ন ডলারের কাজ পাইয়ে দিতে এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য উদ্ঘাটিত হলো। এর সঙ্গে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের নাম নির্দিষ্টভাবে এসেছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুদকে বিশ্বব্যাংকের যে প্রতিবেদন জমা পড়েছে, তাতে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের’ সম্পৃক্ততার খবরও গণমাধ্যমে প্রচার পেয়েছে। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, পদ্মা সেতু প্রশ্নে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে এত দিন যেভাবে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে, সেই মনোভাব আমূল বদলাতে হবে। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এখনই যদি বদল করা হয় এবং সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক কতিপয় অপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী নীতিগত অবস্থান নতুন করে চাঙা হতে পারে।
সামনে সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি। বিরোধী দলের না হোক, সারা দেশে আওয়ামী লীগের সচেতন ও বিবেকবান নেতা-কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি ও মুখরক্ষার এটি একটি অসাধারণ সুযোগ। এবারই হয়তো আরেকটি পরীক্ষা দেওয়ার পালা যে ব্যক্তির চেয়ে দল ও দেশের স্বার্থ বড় কি না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিষয়টির চেয়ে বহুগুণে ও ব্যাপকতায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তাৎপর্যপূর্ণ। সে কারণে দুদকের তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আমলাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তা আওয়ামী লীগের মলিন হয়ে যাওয়া ভাবমূর্তির ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাংকের বিস্তারিত প্রতিবেদনের পরে প্রত্যাশা থাকবে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রশ্নে সরকার জনগণকে আরও বেশিকাল অন্ধকারে রাখার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসবে। আমরা স্মরণ করতে পারি, শেখ হাসিনা তাঁর বিগত সরকারের আমলে আলোচ্য মন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে এর চেয়ে তুলনামূলক লঘু অপরাধে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং, এ মুহূর্তের করণীয় বহুলাংশে সরকারপ্রধানের ওপরই বর্তায়।

No comments

Powered by Blogger.