ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিন-শ্রমিক অসন্তোষ

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষণার পর ধারণা করা হয়েছিল, এই শিল্পে শান্তি ও স্থিতি ফিরে আসবে। শ্রমিকেরা ন্যূনতম মাসিক মজুরি তিন হাজার টাকা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ঈদুল আজহা সামনে রেখে শিল্পাঞ্চল যে আবার সরগরম হয়ে উঠেছে, শনিবারে গাজীপুরে কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক


অসন্তোষ ও ভাঙচুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। শ্রমিক অসন্তোষের সাধারণ প্রবণতা হলো, একটি কারখানায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পাশের কারখানাগুলোতেও দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই শ্রমিক অসন্তোষের কারণগুলো অপসারণে কারখানার মালিকদের সচেষ্ট থাকতে হবে। শনিবার দিগন্ত সোয়েটার কারখানার অপ্রীতিকর ঘটনা সহজেই এড়ানো যেত, যদি মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি আগেভাগে সমাধানের চেষ্টা করত।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের উৎপাদন-মজুরি কম ধরা হয়েছে। সত্যি সত্যি মজুরি কম দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেসব না করে জোরজবরদস্তি করে কারখানা চালু করতে গিয়েই সমস্যা আরও জটিল করে ফেলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মালিকদের মনমানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা বলতে গেলে পেটে পাথর বেঁধে মালিকের কারখানা চালু রেখেছেন। গত ঈদের আগে নতুন মজুরি ঘোষণা করা হলেও নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এবারের ঈদেও তাঁরা নতুন মজুরিকাঠামোয় বেতন ও বোনাস পাবেন না। এর পরও শ্রমিকেরা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। তা ছাড়া চীনসহ কয়েকটি দেশ কম দামের পোশাক উৎপাদন বন্ধ রাখায় ক্রেতারা বাংলাদেশের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। অনেক বিখ্যাত কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য কিনতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশই কাম্য। শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে কোনো শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। তাঁদের কাছ থেকে বেশি সেবা ও শ্রম পেতে চাইলে ন্যূনতম মজুরি ও ভাতা প্রদানের পাশাপাশি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার তৈরি পোশাকশিল্পে শান্তি বজায় রাখতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করেও যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিই পারে শিল্পে শান্তি ও স্থিতি নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে শ্রমিকেরা যাতে দাবিদাওয়া আদায়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারেন, সে জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করারও সুযোগ দিতে হবে। অসংগঠিত বলেই শ্রমিকেরা অনেক সময়ে বিক্ষোভ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। শ্রমিকদের আইনানুগ সংগঠন থাকলে মালিকপক্ষেরও সুবিধা। ঈদের আগে সব তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। শিল্পমালিকদের যেমন ঈদ উদ্যাপনের অধিকার আছে, তেমনি আছে শ্রমিকদেরও।

No comments

Powered by Blogger.