আহমদুল হাসান, রাশেদুর রহমান, নাহিদ কামাল, মেহেদী উল্লাহ, সৌমিত চন্দ্র জয়দ্বীপ-মুক্তমঞ্চে হামলা এবং একটি বিধ্বস্ত বিদ্যাপীঠ
বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে আমরা একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছিলাম। অজানাকে নতুন করে জানার বাসনা মনে জেগেছিল আমাদের এবং সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে যেকোনো শিক্ষার্থীর এই চিন্তা নিশ্চয়ই গুরুত্ব বহন করে।
আমরা চেয়েছিলাম, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের পরিবেশকে নিজেদের মতো করে দেখতে_সেটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, যেখান থেকে একটা সনদপত্র নিয়ে আমাদের কর্মক্ষেত্রে যেতে হবে, সেখান থেকে আলাদা কিছু শেখার স্বপ্ন দেখাটাই যথাযথ। আমরাও সেটারই যথার্থ উপস্থিতি খুঁজতে লাগলাম এ সবুজ ক্যাম্পাসে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম সেগুলো দিবাস্বপ্নের মতো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চিন্তার জগতে আধিপত্য কায়েম করছে রক্ষণশীল রাজনীতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। তার পরও আমরা রাজনীতিকে রক্ষণশীল বলছি। মূলত এই রক্ষণশীলতার চর্চা করে রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বা তাদের দিয়ে কেউ করায়। কি বিএনপি, কি আওয়ামী লীগ_যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ! তাদের দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলোও তাই। কেন রক্ষণশীল বলছি, সেটার কারণ আছে। বলে রাখা ভালো, এই যে আমরা লেখাটা লিখছি এর কারণ আমাদের 'পাবলিক' বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এর 'প্রকৃত মালিক' জনগণকে অবহিত করা। আমরা জানাতে চাই আমাদের অভিভাবকদের, যাঁরা নিজেদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিন-রাত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। দুশ্চিন্তায় থাকার কিছু কারণ তুলে দিচ্ছি। ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি_ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষ। ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত। ২০১০ সালের ৫ জুলাই_আল বেরুনী হলের চার তলা থেকে সহপাঠীকে ছুড়ে ফেলা। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি_সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর হামলা। এ রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হিংসাত্মক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ দেখা দিয়েছে কমপক্ষে ৫০ বার। আহত হয়েছে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী। এ লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য শেষের বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করা। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যে নৈরাজ্য ছাত্রলীগের ক্ষমতাবানরা সৃষ্টি করে চলেছে, তা আসলে 'দিনবদলের' স্লোগানের সঙ্গে যায় না। সন্ত্রাসীরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার যে সুষ্ঠু পরিবেশ, সেটার আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। ক্লাসে এসেও শিক্ষার্থীরা ভয় পাচ্ছে। এই যে ভীতিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত বসবাস, সেটা কি কোনো প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থার নিদর্শন? কোন ঐতিহ্যের বশবর্তী হয়ে তারা এ কাজগুলো করছে? নাকি তাদের কোনো উদ্দেশ্যবাদী মহল ব্যবহার করছে? তারাই তো একটা সময় প্রগতিশীল রাজনীতি করেছে। বাংলাদেশের বড় বড় ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রস্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে কেন আজ এ দুর্দশা? তবে কি দুর্দশার কারণ_ক্ষমতার মোহ! ক্ষমতার মোহ কাজ করে অর্থ লাভের জন্য। ছাত্রাবস্থায় এতটা অর্থমোহ। কর্মক্ষেত্রে না জানি কী হয়! ফলে দুর্নীতি কমানো যাবে দেশ থেকে?
তারা এখন কী করে? দৃশ্যত তারা মারামারি করে। চর দখলের মতো হলগুলো দখল করা তাদের অঘটন ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যের কারণ ক্ষমতা। এখনো যদি কাউকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, এই কয়টা হল তোমার দখলে থাকলে তুমি ক্যাম্পাসের নেতা_কোনো সন্দেহ নেই বর্বরতা অবশ্যম্ভাবী। ক্ষমতাসীন সংগঠনগুলো কী করে, এগুলো আমাদের খুব কাছ থেকে দেখা। তারা রাজনীতি করে না। রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করে। আদেশ নয়, অপচর্চাই তাদের ক্ষমতাচর্চার কেন্দ্রবিন্দু। হলের ক্ষমতা প্রদর্শন করাই তাদের মূল কাজ। চতুর্থ বর্ষে এসে কেউ যদি সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একটা সময় পরিপ্রেক্ষিত, সিনিয়রিটি, অর্থলগি্নর কারণে সে-ই হলের নেতা বনে যায়, তবে সেই রাজনীতিতে পচন ধরবেই। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের সব 'গুণে' প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র ও তল্পিবাহক প্রশাসন। আধিকারিকরা কথায় কথায় এটার বিরোধিতা করেন। ভালো কথা। তাহলে এরা সাহসটা পায় কোথা থেকে? সাহস দেখানোর পর সেটাকে দমন করার ব্যবস্থা রাষ্ট্র কেন নেয় না? রাজনীতি তো এভাবেই নষ্ট হচ্ছে।
অন্য রাজনৈতিক কর্মীদের হুমকি, জুনিয়রদের জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, হলে আটকে রাখা, ব্যক্তিবন্দনা, তুচ্ছ ঘটনায় তুলকালাম সৃষ্টি_এসব কি রক্ষণশীলতা নয়? দলকে ক্ষমতায় এনেছে কে? বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ তরুণ। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সুযোগ পেলেই এটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। কিন্তু কিছু নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ড কী সাক্ষ্য দেয়? তারাই কি দিনবদলের এমন স্বেচ্ছাচারী যোদ্ধা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যে আগ্রাসন চালানো হলো, সেটা প্রগতিশীলতার ওপর রক্ষণশীলতার আঘাত। যাদের এই 'রক্ষণশীল' ছাত্রলীগ রক্ষণশীল বলে, তাদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য কোথায়? আমরা দেখলাম, এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের দৃষ্টান্তযোগ্য পদক্ষেপ প্রশাসন নিতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অথচ অন্য যেকোনো তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থী যখন-তখন ঢুকে যাচ্ছে প্রশাসনের 'বহিষ্কার' যন্ত্রে। মুক্তমঞ্চে হামলা কি প্রশাসনের পক্ষে গেছে? বড়ই লজ্জা ও পরিতাপের বিষয়! এভাবেই আমরা দেখছি, আপনারাও দেখুন_আমরা বিশ্ববিদ্যালয় নামক সর্বোচ্চ 'বিধ্বস্ত' বিদ্যাপীঠের অংশ হয়ে লালিত স্বপ্নগুলো বিকিয়ে যাচ্ছি!
লেখকবৃন্দ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কর্মরত
তারা এখন কী করে? দৃশ্যত তারা মারামারি করে। চর দখলের মতো হলগুলো দখল করা তাদের অঘটন ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যের কারণ ক্ষমতা। এখনো যদি কাউকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, এই কয়টা হল তোমার দখলে থাকলে তুমি ক্যাম্পাসের নেতা_কোনো সন্দেহ নেই বর্বরতা অবশ্যম্ভাবী। ক্ষমতাসীন সংগঠনগুলো কী করে, এগুলো আমাদের খুব কাছ থেকে দেখা। তারা রাজনীতি করে না। রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করে। আদেশ নয়, অপচর্চাই তাদের ক্ষমতাচর্চার কেন্দ্রবিন্দু। হলের ক্ষমতা প্রদর্শন করাই তাদের মূল কাজ। চতুর্থ বর্ষে এসে কেউ যদি সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একটা সময় পরিপ্রেক্ষিত, সিনিয়রিটি, অর্থলগি্নর কারণে সে-ই হলের নেতা বনে যায়, তবে সেই রাজনীতিতে পচন ধরবেই। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের সব 'গুণে' প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র ও তল্পিবাহক প্রশাসন। আধিকারিকরা কথায় কথায় এটার বিরোধিতা করেন। ভালো কথা। তাহলে এরা সাহসটা পায় কোথা থেকে? সাহস দেখানোর পর সেটাকে দমন করার ব্যবস্থা রাষ্ট্র কেন নেয় না? রাজনীতি তো এভাবেই নষ্ট হচ্ছে।
অন্য রাজনৈতিক কর্মীদের হুমকি, জুনিয়রদের জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, হলে আটকে রাখা, ব্যক্তিবন্দনা, তুচ্ছ ঘটনায় তুলকালাম সৃষ্টি_এসব কি রক্ষণশীলতা নয়? দলকে ক্ষমতায় এনেছে কে? বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ তরুণ। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সুযোগ পেলেই এটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। কিন্তু কিছু নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ড কী সাক্ষ্য দেয়? তারাই কি দিনবদলের এমন স্বেচ্ছাচারী যোদ্ধা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যে আগ্রাসন চালানো হলো, সেটা প্রগতিশীলতার ওপর রক্ষণশীলতার আঘাত। যাদের এই 'রক্ষণশীল' ছাত্রলীগ রক্ষণশীল বলে, তাদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য কোথায়? আমরা দেখলাম, এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের দৃষ্টান্তযোগ্য পদক্ষেপ প্রশাসন নিতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অথচ অন্য যেকোনো তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থী যখন-তখন ঢুকে যাচ্ছে প্রশাসনের 'বহিষ্কার' যন্ত্রে। মুক্তমঞ্চে হামলা কি প্রশাসনের পক্ষে গেছে? বড়ই লজ্জা ও পরিতাপের বিষয়! এভাবেই আমরা দেখছি, আপনারাও দেখুন_আমরা বিশ্ববিদ্যালয় নামক সর্বোচ্চ 'বিধ্বস্ত' বিদ্যাপীঠের অংশ হয়ে লালিত স্বপ্নগুলো বিকিয়ে যাচ্ছি!
লেখকবৃন্দ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কর্মরত
No comments