পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব হোক

খবরটি সুখের নয়। যখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন জরুরি, সে প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ_তখন বিদেশি বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তাদের ফিরে যাওয়ার খবর সুখবর হতে পারে না। কিন্তু ঠাঁই নেই ইপিজেডে। বিদেশি উদ্যোক্তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। এই বিদেশি উদ্যোক্তাদের পছন্দের জায়গা ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম।


কিন্তু সেখানে চাহিদামতো জায়গা না পেয়ে তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন। এটা দেশের জন্য কল্যাণকর নয়।
অনেক কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। বাংলাদেশকে তাঁদের পছন্দের তালিকায় রাখার প্রথম কারণটি বোধহয় সুলভ শ্রম। শ্রমিকদের মজুরি ও উৎপাদন খরচ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম। স্বাভাবিক কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হবেন। দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপন করলে দেশে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতো। একই সঙ্গে ওই সব শিল্পের সহযোগী আরো নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠত। কিন্তু সে সম্ভাবনা এখন আর থাকছে না। বিদেশিরা যখনই কোনো শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ করতে চাইবেন, তখন তাঁরা তাঁদের নিজস্ব কিছু পছন্দ থাকাটা স্বাভাবিক। তাঁরা চাইবেন তাঁদের বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। বিভিন্ন ব্যাপারে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেন তাঁদের শক্তি স্থাপনে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তা-ই নয়, উৎপাদনে যেন কোনো রকম ঝুঁকি না থাকে, সেদিকেও তাঁদের দৃষ্টি থাকবে। গত বছর আমাদের শিল্পক্ষেত্রে, বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে অস্থির অবস্থা ছিল। তার পরও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছিলেন_এটা আশার কথা। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত। তাইওয়ান, জাপান, হংকং, চীন, ডেনমার্ক ও কোরিয়ার একাধিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের শিল্প কারখানায় বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল। কিন্তু তাদের পছন্দের এলাকায় জায়গা দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে গেছে। এসব এলাকায় তাদের শিল্প স্থাপন করতে দিলে বাংলাদেশেই প্রস্তুত হতে পারত অনেক নতুন নতুন পণ্য। একই সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব একটি দেশ হিসেবে পরিচিত হতে পারত বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন আরো সহজ হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই বিনিয়োগকারীরা ফিরে গেছেন।
দেশের অন্যান্য স্থানে ইপিজেড নির্মাণ করে সেই স্থানগুলোর অবকাঠামোগত ও যোগাযোগসুবিধার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরা গেলেও তাঁরা আগ্রহী হবেন। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে মাত্র ৮০০ একর জমির জন্য ইপিজেড নির্মাণ করা সম্ভব নয়_এ অজুহাত কতটা যৌক্তিক, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তা ছাড়া ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের বাইরে এখন ইপিজেড নির্মাণ করতে গেলে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগবান্ধব একটি পরিবেশ আমাদের এখানে গড়ে তুলতে হবে। আকৃষ্ট করতে হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.