নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ by সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী ও মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষকে ব্যালান্সড প্রোটিনের জন্য বছরে ১০৪টি ডিম, ১৯ কেজি মাছ, প্রতিদিন ২০৫ গ্রাম মাংস ও ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ গ্রহণ করতে হয়। অথচ বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের পক্ষে এ ব্যালান্সড ফুড গ্রহণ করা বর্তমান সময়ে সত্যিই অসম্ভব বিষয়।
আর সেটা যদি হয় হতদরিদ্রদের বেলায়, তাহলে তো এই ব্যালান্সড ফুডের প্রসঙ্গ উত্থাপনই অনেকাংশে অবান্তর। মোটা দাগে এই দারিদ্র্যপীড়িত বিশাল জনগোষ্ঠীর পক্ষে এই ব্যালান্সড ফুড গ্রহণ করা অসম্ভব মূলত দুটি কারণে; জনসংখ্যার আধিক্যের সঙ্গে কর্মসংস্থান এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বর্তমান আয়ের মাত্রা সমান তালে পাল্লা দিয়ে না বাড়া। এত দিন শুধু এই দারিদ্র্যাশ্রিত মানুষগুলোর অসহায় মুখ শহরের চেয়ে গ্রামের কথাই বেশি করে মনে করিয়ে দিত; কিন্তু আজকের বাস্তব প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। অনেকেরই ধারণা, পল্লী অঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা শহরের তুলনায় অধিক। কিন্তু জীবনের এই আদিম 'দরিদ্র' শব্দটা এখন আর অজপাড়াগাঁয়ের নীরস কুপিবাতি জ্বালানো ঘরে বসবাস করতে নারাজ। সেটার প্রমাণ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১। সমীক্ষামতে, ২০০৫ সালে প্রত্যক্ষ ক্যালরি গ্রহণ (DCI) পদ্ধতিতে দারিদ্র্যের হার গ্রামে ৩৯.৫ শতাংশ আর শহরাঞ্চলে ছিল ৪৩.২ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্য গ্রামে ১৭.৯ শতাংশ এবং শহরে ছিল ২৪.৪ শতাংশ। বহমান এই বৈরী সময়ের ঘাড়ে চেপে দারিদ্র্য আজ আশ্রয় নিয়েছে কনক্রিটের এই শহর ও উপশহরের অলি-গলিতে। অতীতে দারিদ্র্যের যে স্বরূপ আমরা গ্রামাঞ্চলে দেখেছি, সামনের দিনগুলোতে তার চেয়েও ভয়ংকর ও বেগবান হয়ে আসতে পারে পাথর মোড়ানো নগরে 'এই দরিদ্র দানবটি'। চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও এ বিষয়টি স্বীকৃত আছে। এতে বলা হয়েছে, নগরের দারিদ্র্য পল্লী অঞ্চলের দারিদ্র্যের তুলনায় তীব্রতর ও ভয়ংকর।
আমরা জানি, নগরের এই দারিদ্র্যপীড়িত বানভাসি মানুষগুলোর অধিকাংশেরই আদি আশ্রয়স্থল ছিল গ্রাম। নদী ভাঙন, গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব কিংবা বিবিধ বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্যাহত এই মানুষগুলো জীবিকা অর্জনের প্রয়োজনে ছুটে আসে শহরে। কারো আবাস হয় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত শহরের কোনো ছোট্ট গলির টিনের ঝুপড়ি কিংবা ইটের স্যাঁতসেঁতে ছোট্ট ঘরে; কারো আবার সেখানেও হয় না। ঠাঁই হয় রেললাইন কিংবা হাইওয়ে রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে গড়ে ওঠা কোনো বস্তিতে। ইট-পাথরের শহরে আসার পর তারা শুধু উপযুক্ত জীবিকার ঝুঁকিতে নয়, পড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও। তাদের হরহামেশা স্থানচ্যুতি হলেও; হয়নি দারিদ্র্যচ্যুতি। এই দারিদ্র্যচ্যুতির জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত কিছু টেকসই উদ্যোগ। সে ক্ষেত্রে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ হতে পারে এই নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যে একটি ক্রসকাটিং ইস্যু। এ জন্য প্রয়োজন পৃথক যুগোপযোগী নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। নগরে চলমান এবং আগামী দিনে উন্নয়নমূলক সব কর্মসূচি, যেমন আয়বর্ধনমূলক কাজ (IGA), শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন এমনকি নগরে অপরাধ প্রবণতারোধ কর্মসূচিতেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
এই সত্যতা উপলব্ধি করে নগরকেন্দ্রিক বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে 'কর্মমুখী বা দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ' বিষয়টি অন্যতম হিসেবে ধরে নগর দারিদ্র্যহ্রাসকরণ কল্পে কাজ করা হচ্ছে। এমনই একটি প্রকল্প হলো 'নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্যহ্রাসকরণ প্রকল্প' (UPPRP)। বাংলাদেশ সরকার, ডিএফআইডি এবং ইউএনডিপির উদ্যোগে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌরসভাসহ মোট ৩০টি পৌর শহরে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। যার মাধ্যমে নগরের প্রায় তিন মিলিয়ন দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যহ্রাসকরণ সম্ভব হবে। নগরের বিশেষ করে দরিদ্র নারী, যারা অনুৎপাদন খাতে নিয়োজিত, তাদের আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ যেমন টেইলরিং, ব্লক-বাটিক, ওয়ালমেট, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, পাটজাত দ্রব্য তৈরি, চামড়াজাত পণ্য, ক্যান্ডল ও শো-পিচ তৈরি, ফুড প্রসেসিং, গার্মেন্ট সেক্টরে কাটিং, ডায়িং, সুইয়িং প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। যারা ঘরের কাছে কিংবা রাস্তার পাশে ছোট্ট ব্যবসা করতে চায় তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশিক্ষণ প্রদানমূলক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বল্প পুঁজি ঋণ হিসেবে প্রদান করতে পারে। যেটা ব্যক্তির দারিদ্র্যহ্রাসকরণে যেমন সহযোগিতা করবে অন্যদিকে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানেরও বিনিয়োগকৃত টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করবে। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নোবেল-লরিয়েট বলেছিলেন, 'ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দেশ থেকে দরিদ্রতাকে একদিন জাদুঘরে পাঠানো হবে।' আশাবাদী এই কথাটি আমাদের আরো আশান্বিত করবে যদি দরিদ্র জনগণ ঋণ হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ কোনো স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করতে পারে। এর নিশ্চয়তা কল্পেও চাই কর্মমুখী প্রশিক্ষণ।
তা ছাড়া উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের এককালীন কিছু শর্তসাপেক্ষে ব্লকগ্র্যান্ড হিসেবেও প্রদান করা যেতে পারে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে পতিত নগরের উঠতি বয়সী যুবকদের, যারা কিনা একাডেমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তাদের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল, মোবাইল সার্ভিসিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডম্যাট পেপার, ফ্লোর কাভার ম্যাট, মাশরুম চাষ, গাড়ি মেরামত, কার্পেন্টার, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এই নগরে আশ্রিত অসহায় মানুষগুলোর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে এসব কর্মমুখী প্রশিক্ষণ। তবে তার জন্য চাই নির্দিষ্ট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা। এই ক্ষেত্রে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
১. প্রথমে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা; যার প্রচারিতব্য বিষয় হবে 'কর্মমূখী প্রশিক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন'। ২. বেইসলাইন সার্ভে করার মাধ্যমে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত মানুষগুলোর 'প্রয়োজন' শনাক্তকরণ এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনার ভিত্তিতে টার্গেট সদস্যদের কাছাকাছি প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে এনপিআরসি স্থাপন। ৩. একটি এনপিআরসির অধীনে কমপক্ষে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি Task Force গঠন। ৪. একজন Task Force সদস্যের অধীনে কমপক্ষে পাঁচটি ২৫ সদস্যবিশিষ্ট 'যুব কর্মক্ষম দল' থাকবে।
এই NPRCটি এই মূল চারটি খুঁটির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। যার মূল ভিত্তিভূমি হবে একদল দক্ষ কর্মমুখী প্রশিক্ষক সঙ্গে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় উপকরণ। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তী সময়ে আলোচনার ইচ্ছা রইল।
এই প্রশিক্ষণ হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে শহর, বিশেষ করে উপশহরভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে; পাশাপাশি এই অধিকারবঞ্চিত মানুষগুলোর মৌলিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তাও বিধান করবে। তাই বলা হয় 'প্রশিক্ষণ' হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ক জ্ঞান, মানসিক ও আচরণিক এবং দক্ষতার ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি কার্যকর মহৌষধ; ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের এই দগদগে ঘা নিরাময়ে কোনো দেশ ও জাতি এই মহৌষধ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে। তা ব্যবহারে 'ব্যাধি' সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও কিছুটা হলেও যন্ত্রণার উপশম করবে, তা আজ জোর দিয়ে বলা যায়। তাই কর্মমুখী প্রশিক্ষণ হতে পারে নগর দারিদ্র্য বিমোচনে এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
লেখকদ্বয় : শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশিক্ষক, জবস আইরিস বাংলাদেশ।
shahdatmahbub@gmail.com
আমরা জানি, নগরের এই দারিদ্র্যপীড়িত বানভাসি মানুষগুলোর অধিকাংশেরই আদি আশ্রয়স্থল ছিল গ্রাম। নদী ভাঙন, গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব কিংবা বিবিধ বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্যাহত এই মানুষগুলো জীবিকা অর্জনের প্রয়োজনে ছুটে আসে শহরে। কারো আবাস হয় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত শহরের কোনো ছোট্ট গলির টিনের ঝুপড়ি কিংবা ইটের স্যাঁতসেঁতে ছোট্ট ঘরে; কারো আবার সেখানেও হয় না। ঠাঁই হয় রেললাইন কিংবা হাইওয়ে রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে গড়ে ওঠা কোনো বস্তিতে। ইট-পাথরের শহরে আসার পর তারা শুধু উপযুক্ত জীবিকার ঝুঁকিতে নয়, পড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও। তাদের হরহামেশা স্থানচ্যুতি হলেও; হয়নি দারিদ্র্যচ্যুতি। এই দারিদ্র্যচ্যুতির জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত কিছু টেকসই উদ্যোগ। সে ক্ষেত্রে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ হতে পারে এই নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যে একটি ক্রসকাটিং ইস্যু। এ জন্য প্রয়োজন পৃথক যুগোপযোগী নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। নগরে চলমান এবং আগামী দিনে উন্নয়নমূলক সব কর্মসূচি, যেমন আয়বর্ধনমূলক কাজ (IGA), শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন এমনকি নগরে অপরাধ প্রবণতারোধ কর্মসূচিতেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
এই সত্যতা উপলব্ধি করে নগরকেন্দ্রিক বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে 'কর্মমুখী বা দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ' বিষয়টি অন্যতম হিসেবে ধরে নগর দারিদ্র্যহ্রাসকরণ কল্পে কাজ করা হচ্ছে। এমনই একটি প্রকল্প হলো 'নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্যহ্রাসকরণ প্রকল্প' (UPPRP)। বাংলাদেশ সরকার, ডিএফআইডি এবং ইউএনডিপির উদ্যোগে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌরসভাসহ মোট ৩০টি পৌর শহরে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। যার মাধ্যমে নগরের প্রায় তিন মিলিয়ন দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যহ্রাসকরণ সম্ভব হবে। নগরের বিশেষ করে দরিদ্র নারী, যারা অনুৎপাদন খাতে নিয়োজিত, তাদের আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ যেমন টেইলরিং, ব্লক-বাটিক, ওয়ালমেট, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, পাটজাত দ্রব্য তৈরি, চামড়াজাত পণ্য, ক্যান্ডল ও শো-পিচ তৈরি, ফুড প্রসেসিং, গার্মেন্ট সেক্টরে কাটিং, ডায়িং, সুইয়িং প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। যারা ঘরের কাছে কিংবা রাস্তার পাশে ছোট্ট ব্যবসা করতে চায় তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশিক্ষণ প্রদানমূলক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বল্প পুঁজি ঋণ হিসেবে প্রদান করতে পারে। যেটা ব্যক্তির দারিদ্র্যহ্রাসকরণে যেমন সহযোগিতা করবে অন্যদিকে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানেরও বিনিয়োগকৃত টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করবে। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নোবেল-লরিয়েট বলেছিলেন, 'ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দেশ থেকে দরিদ্রতাকে একদিন জাদুঘরে পাঠানো হবে।' আশাবাদী এই কথাটি আমাদের আরো আশান্বিত করবে যদি দরিদ্র জনগণ ঋণ হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ কোনো স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করতে পারে। এর নিশ্চয়তা কল্পেও চাই কর্মমুখী প্রশিক্ষণ।
তা ছাড়া উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের এককালীন কিছু শর্তসাপেক্ষে ব্লকগ্র্যান্ড হিসেবেও প্রদান করা যেতে পারে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে পতিত নগরের উঠতি বয়সী যুবকদের, যারা কিনা একাডেমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তাদের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল, মোবাইল সার্ভিসিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডম্যাট পেপার, ফ্লোর কাভার ম্যাট, মাশরুম চাষ, গাড়ি মেরামত, কার্পেন্টার, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এই নগরে আশ্রিত অসহায় মানুষগুলোর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে এসব কর্মমুখী প্রশিক্ষণ। তবে তার জন্য চাই নির্দিষ্ট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা। এই ক্ষেত্রে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ নগরায়ণ দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
১. প্রথমে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা; যার প্রচারিতব্য বিষয় হবে 'কর্মমূখী প্রশিক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন'। ২. বেইসলাইন সার্ভে করার মাধ্যমে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত মানুষগুলোর 'প্রয়োজন' শনাক্তকরণ এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনার ভিত্তিতে টার্গেট সদস্যদের কাছাকাছি প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে এনপিআরসি স্থাপন। ৩. একটি এনপিআরসির অধীনে কমপক্ষে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি Task Force গঠন। ৪. একজন Task Force সদস্যের অধীনে কমপক্ষে পাঁচটি ২৫ সদস্যবিশিষ্ট 'যুব কর্মক্ষম দল' থাকবে।
এই NPRCটি এই মূল চারটি খুঁটির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। যার মূল ভিত্তিভূমি হবে একদল দক্ষ কর্মমুখী প্রশিক্ষক সঙ্গে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় উপকরণ। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তী সময়ে আলোচনার ইচ্ছা রইল।
এই প্রশিক্ষণ হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে শহর, বিশেষ করে উপশহরভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে; পাশাপাশি এই অধিকারবঞ্চিত মানুষগুলোর মৌলিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তাও বিধান করবে। তাই বলা হয় 'প্রশিক্ষণ' হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ক জ্ঞান, মানসিক ও আচরণিক এবং দক্ষতার ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি কার্যকর মহৌষধ; ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের এই দগদগে ঘা নিরাময়ে কোনো দেশ ও জাতি এই মহৌষধ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে। তা ব্যবহারে 'ব্যাধি' সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও কিছুটা হলেও যন্ত্রণার উপশম করবে, তা আজ জোর দিয়ে বলা যায়। তাই কর্মমুখী প্রশিক্ষণ হতে পারে নগর দারিদ্র্য বিমোচনে এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
লেখকদ্বয় : শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশিক্ষক, জবস আইরিস বাংলাদেশ।
shahdatmahbub@gmail.com
No comments