ঋণপত্রে কারসাজি হচ্ছে-বোতলজাত তেলে ঠকছেন ক্রেতারা by আবুল হাসনাত
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে দেশে নানা কারসাজি চলছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করছেন। সরকার দেখেও যেন তা দেখছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশে দাম কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন কয়েক দফা সুপারিশ করলেও তা আমলে নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে এখন দাম কমছে ভোজ্যতেলের। দেশীয় বাজারে তার কোনো প্রভাব তো পড়ছেই না, উল্টো আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে (ওভার ইনভয়েসিং) ঋণপত্র (এলসি) খোলার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীরা। এ কাজে কয়েকটি ব্যাংক সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এক সপ্তাহ আগে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩৩ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৬৬০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এখন এক লিটারের বোতল ১৩৫ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৬৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ, প্রায় দেড় মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এপ্রিলে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম যেখানে এক হাজার ৩১৫ ডলারে উঠেছিল, গত সোমবার তা বিক্রি হয় এক হাজার ১৩৪ ডলারে। অর্থাৎ, দেড় মাসে টনপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৮১ ডলার কমেছে। একইভাবে পাম তেলের দাম ২৮৭ ডলার কমে এখন প্রতি টনের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৪৩ ডলার।
আবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণেও সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা করছে না পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, যেখানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়ার কথা ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা, সেখানে ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৬৭০ টাকা। বোতলজাত করেই লাভ ৮০ টাকা। আর তাতে ঠকছেন ক্রেতারা। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১১৮ থেকে ১২০ টাকা এবং খোলা পাম তেল ৯৫ থেকে ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেশি মুনাফা বোতলে!: পরিবেশক-প্রথার আওতায় ভোজ্যতেলের দাম প্রথম নির্ধারিত হয় গত বছরের ২০ জুলাই। ওই সময় প্রতি লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছিল ১২১ টাকা। এরপর সাত দফায় লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ায় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ পাঁচ-ছয় দিন আগে বোতলজাত তেলের দাম প্রতি লিটারে দুই টাকা বাড়ানো হয়।
নিয়ম হচ্ছে, খোলা সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্যের সঙ্গে বোতল ও লেবেলিং খরচ যোগ করে বোতলজাত তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে, পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক লিটারের বোতলে ১৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলে ৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়। সে হিসাবে, এক লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়ার কথা ১২৩ থেকে ১২৫ টাকা। অথচ, এই বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আবার পাঁচ লিটারের খোলা তেলের দাম ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। বোতলসহ দাম পড়ে ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা। অথচ, বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৬৭০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেশি মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা।
তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, পাঁচ লিটারের তেলে বোতল বাবদ তাদের খরচ হয় ৬০ থেকে ৮৫ টাকা।
ঋণপত্রে কারসাজি: গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে এলসি খোলার অন্তত চারটি প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, ১০ মে ১৩ হাজার ৬৩৫ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির জন্য তিনটি ঋণপত্র খোলা হয়। ওই তিন ঋণপত্রের উল্লিখিত দামের (সিঅ্যান্ডএফ) গড় করলে প্রতি টন সয়াবিনের দাম পড়ে এক হাজার ৩৩২ ডলার। অথচ, রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ৯ মে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম (সিঅ্যান্ডএফ) ছিল এক হাজার ২১৬ দশমিক ৫৩ ডলার। এমন আরেকটি ঋণপত্রের সন্ধান মেলে গত ২৭ মে। ওই দিন তিন হাজার ৬৩৬ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয় এক হাজার ৩১৫ ডলার দরে। অথচ, ওই দিনের আন্তর্জাতিক বাজারদর হচ্ছে এক হাজার ১৮০ ডলার। এ রকম আরও কয়েকটি প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাম তেল আমদানিতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র বলছে, দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমানো ঠেকাতেই বেশি দাম দিয়ে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। যেন সরকার যখন দাম নির্ধারণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে গেলে তেল পরিশোধনকারীরা বেশি দামে আমদানির অজুহাত দেখাতে পারেন।
ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খোলায় কারসাজির বিষয়টি নজরে আসায় ১৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, দুটি বেসরকারি ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খুলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি তদন্ত করা এবং ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এক সপ্তাহ আগে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩৩ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৬৬০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এখন এক লিটারের বোতল ১৩৫ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৬৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ, প্রায় দেড় মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এপ্রিলে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম যেখানে এক হাজার ৩১৫ ডলারে উঠেছিল, গত সোমবার তা বিক্রি হয় এক হাজার ১৩৪ ডলারে। অর্থাৎ, দেড় মাসে টনপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১৮১ ডলার কমেছে। একইভাবে পাম তেলের দাম ২৮৭ ডলার কমে এখন প্রতি টনের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৪৩ ডলার।
আবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণেও সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা করছে না পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়ম অনুযায়ী, যেখানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়ার কথা ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা, সেখানে ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৬৭০ টাকা। বোতলজাত করেই লাভ ৮০ টাকা। আর তাতে ঠকছেন ক্রেতারা। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১১৮ থেকে ১২০ টাকা এবং খোলা পাম তেল ৯৫ থেকে ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেশি মুনাফা বোতলে!: পরিবেশক-প্রথার আওতায় ভোজ্যতেলের দাম প্রথম নির্ধারিত হয় গত বছরের ২০ জুলাই। ওই সময় প্রতি লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছিল ১২১ টাকা। এরপর সাত দফায় লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ায় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ পাঁচ-ছয় দিন আগে বোতলজাত তেলের দাম প্রতি লিটারে দুই টাকা বাড়ানো হয়।
নিয়ম হচ্ছে, খোলা সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্যের সঙ্গে বোতল ও লেবেলিং খরচ যোগ করে বোতলজাত তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে, পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক লিটারের বোতলে ১৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলে ৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়। সে হিসাবে, এক লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়ার কথা ১২৩ থেকে ১২৫ টাকা। অথচ, এই বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আবার পাঁচ লিটারের খোলা তেলের দাম ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। বোতলসহ দাম পড়ে ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা। অথচ, বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৬৭০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেশি মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা।
তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, পাঁচ লিটারের তেলে বোতল বাবদ তাদের খরচ হয় ৬০ থেকে ৮৫ টাকা।
ঋণপত্রে কারসাজি: গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে এলসি খোলার অন্তত চারটি প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, ১০ মে ১৩ হাজার ৬৩৫ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির জন্য তিনটি ঋণপত্র খোলা হয়। ওই তিন ঋণপত্রের উল্লিখিত দামের (সিঅ্যান্ডএফ) গড় করলে প্রতি টন সয়াবিনের দাম পড়ে এক হাজার ৩৩২ ডলার। অথচ, রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ৯ মে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম (সিঅ্যান্ডএফ) ছিল এক হাজার ২১৬ দশমিক ৫৩ ডলার। এমন আরেকটি ঋণপত্রের সন্ধান মেলে গত ২৭ মে। ওই দিন তিন হাজার ৬৩৬ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয় এক হাজার ৩১৫ ডলার দরে। অথচ, ওই দিনের আন্তর্জাতিক বাজারদর হচ্ছে এক হাজার ১৮০ ডলার। এ রকম আরও কয়েকটি প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাম তেল আমদানিতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র বলছে, দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমানো ঠেকাতেই বেশি দাম দিয়ে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। যেন সরকার যখন দাম নির্ধারণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে গেলে তেল পরিশোধনকারীরা বেশি দামে আমদানির অজুহাত দেখাতে পারেন।
ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খোলায় কারসাজির বিষয়টি নজরে আসায় ১৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, দুটি বেসরকারি ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খুলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি তদন্ত করা এবং ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
No comments