দোষীদের শাস্তি হোক, কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙুক-কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট

কয়েক দিন আগে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনলাইনে রেলওয়ের টিকিট বিক্রির উদ্বোধন করার পর জনমনে আশা জেগেছিল, এখন থেকে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি ও যাত্রী হয়রানি কমবে। কিন্তু বাস্তবে যে তার কোনো লক্ষণ নেই, তা জানা গেল বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে।


লাকসাম প্রতিনিধির এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেনের বেশির ভাগ টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা কাউন্টারে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পান না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁদের সাফ জানিয়ে দেন, টিকিট নেই। কিন্তু বাড়তি দাম দিলে কালোবাজারিদের কাছে ঠিকই টিকিট পাওয়া যায়। ১৩ জুন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৮টি টিকিটসহ স্টেশনের কর্মচারী জিয়াউল হক বমাল ধরা পড়েন। ট্রেন পাঁচ ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ায় যাত্রীরা সড়কপথে চলে যাওয়ায় তিনি টিকিটগুলো ফেরত দিতে এসেছিলেন কাউন্টারে।
টিকিট কালোবাজারির এই ঘটনা কেবল লাকসাম স্টেশনে ঘটলে দুশ্চিন্তা কম ছিল। দেশের প্রায় সব রেলওয়ে স্টেশনেই একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। রেলওয়ের এই ব্যাধি দীর্ঘদিনের হলেও তা উপসমের কোনো উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের নেই।
রেলওয়ের কালো বিড়াল ধরার কথা বলে সাবেক রেলমন্ত্রী নিজেই দপ্তর হারিয়েছেন। কিন্তু রেলওয়ে থেকে যে কালো বিড়াল দূর করা যায়নি, তার প্রমাণ টিকিট কালোবাজারি থেকে উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগদান।
নতুন যোগাযোগমন্ত্রী রেলওয়ের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার পর যাত্রীসেবার মান বেড়েছে, সেই দাবি করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। টিকিট কালোবাজারির পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের সময়সূচিও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আন্তনগর সার্ভিসসহ অধিকাংশ ট্রেনই এক থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে স্টেশন ছাড়ে বা গন্তব্যে পৌঁছায়। ১৩ জুন লাকসামে টিকিট কেলেঙ্কারির ঘটনাও ফাঁস হয়েছে নির্ধারিত ট্রেনটি পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে আসার কারণে।
রেলওয়ের সর্বত্র যে কালো বিড়ালের দৌরাত্ম্য চলছে, তা বন্ধের দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। দোষীদের শাস্তিই পারে রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি লোকসানের হাত থেকে এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে।

No comments

Powered by Blogger.