নর্থ সাউথে শাহজাহানের সাম্রাজ্যে ধসের অপেক্ষা-রাষ্ট্রপতির কাছে ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

শেষ পর্যন্ত আর টিকতে পারছেন না নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। যে ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে চ্যালেঞ্জে গিয়েছিলেন, সেই ট্রাস্টি বোর্ডই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। গঠন করা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি। ফলে ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে আর থাকতে পারছেন না মো. শাহজাহান।


এর আগে গত ৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সরকারের কোনো নিয়মনীতি না মানার ঘোষণা দিয়েছিলেন মো. শাহজাহান। এর ১৩ দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা হিসেবে পুরো ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে নতুন প্রশাসকের নাম প্রস্তাব করেছে।
জানা গেছে, ভূমি আপিল বোর্ডের সাবেক এক চেয়ারম্যানকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রশাসক (চেয়ারম্যান) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চ্যান্সেলরের দপ্তরে (রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) প্রস্তাব পাঠিয়েছে গতকাল বুধবার। মনোনীত এই নতুন প্রশাসক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। নর্থ সাউথের আজীবন সদস্য ইফতেখারুল আলম, নুরুল হোসেন খান ও ড. এস এ সামাদকে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হলে চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হয়। এ জন্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চ্যান্সেলরের দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনার সঙ্গে এনএসইউ-সংক্রান্ত ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের একটি সারসংক্ষেপও পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আগামী সপ্তাহেই এনএসইউয়ের নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এদিকে মো. শাহজাহান এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ইউনিভার্সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে না। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটিতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যার কারণে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে আপনি অভিযুক্ত হয়েছেন- এ রকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এগুলো বাজে কথা। ওরা (তদন্ত কমিটি) না বুঝে এসব কথা লিখে দিয়েছে।'
সরকার যখন ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিচ্ছে, ঠিক তখনই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড। আজ বৃহস্পতিবার নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য বৈঠক ডেকেছেন মো. শাহজাহান।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী কালের কণ্ঠকে বলেন, নর্থ সাউথকে আগেই বলা হয়েছে রুটিন কাজ ছাড়া কোনো কিছুই করা যাবে না। এমনকি ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনও না। তবু যদি তারা নতুন কমিটি গঠন করে, তাহলে সেটি হবে অবৈধ।
এর জবাবে মো. শাহজাহান বলেছেন, 'বৃহস্পতিবার নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। কমিটি গঠনও আমাদের রুটিন কাজ। অযাচিতভাবে সরকার আমাদের এভাবে না করতে পারে না।'
উল্লেখ্য, এনএসইউয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা তদন্তে গত ২৭ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটির প্রণয়ন করা ২৭১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। এতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও চারজন সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। গত ৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসক নিয়োগ এবং পুরো বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা স্তরের প্রভাবশালী ব্যক্তির তদবিরের চাপে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা দেরি হয় বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.