চাঞ্চল্যকর!- নিহত হওয়ার ২০ দিন পর ফিরে এল সুমি! by মোহসিন কবির
মেয়ের বস্তাবন্দী লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফনের প্রায় ১৮ দিন পর জীবিত অবস্থায় তাকে ফিরে পাওয়ায় হতবাক পিতা মোশাররফ সরকার। তার মেয়ে সুমি (১০) নিখোঁজ হওয়ার ২ দিন পর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। লাশ তিনি দাফন করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে সে জীবিত অবস্থায় বাবার কাছে ফিরে এসেছে।
এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে লালবাগ থানায়। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, উদ্ধারকৃত বস্তাবন্দী সেই লাশটি তাহলে কার?
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সুমি প্রথমে ওয়ারী থানার ১৮/২ গোয়ালঘাট লেনের যে বাড়িতে কাজ করতো সেই নূর হোসেনের বাড়িতে ফিরে আসে। এ সময় নুর হোসেনের পরিবার প্রথমে কিছুটা আতংকিত হয়ে পড়ে। যার লাশ দাফনের জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, লাশের ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে গ্রামে পাঠানো, কুলখানির খরচ, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সবই দিতে হয়েছে, সেই সুমিকে জীবিত অবস্থায় দেখেই নূর হোসেনের স্ত্রী লুনা ভূত দেখার মতো আঁৎতকে উঠে অজ্ঞান হয়ে যান। নূর হোসেনের মাকে গিয়ে ভাবি বলে জড়িয়ে ধরে সুমি। এ সময় সে ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং কাঁদতে থাকে।
লুনার জ্ঞান ফিরে এলে স্বামী নূর হোসেনকে খবর দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সেখানে ভীড় করে আশেপাশের প্রতিবেশীরা। নূর হোসেনও হতবাক! সঙ্গে সঙ্গে ওয়ারী থানায় জানান বিষয়টি। কারণ এই সুমির জন্য বিগত ২০টি দিন তার পরিবারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং মানসিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নূর হোসেনের পরিবার।
অভিযোগ ওঠে নূর হোসেনের পরিবারের লোকজন সুমিকে খুন করেছে।
সুমিকে খুনের দায়ে নূর হোসেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের খুনের আসামি করারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাই তাকে পেয়ে যেন তিনি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। খবর দেন সুমির বাবা মোশাররফ হোসেনকে। তিনিও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সুমিকে ফিরে পাওয়ার পর নূর হোসেন পুনরায় ওয়ারী থানায় ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন যার নং ১২৮১, তারিখ: ৩১/০৫/১২। এরপর তার বাবা মোশাররফ সরকার যে এলাকায় থাকেন ওই এলাকার চেয়্যারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে সুমিকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে নূর হোসেনের পরিবার।
যেভাবে ফিরে এলো সুমি:
সুমি জানিয়েছে, গত ১১ মে শুক্রবার সে যখন ধনেপাতা আনতে দোকানে যায়, সেখান থেকে তাকে এক মহিলা হাত ধরে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। গলির মধ্যে কেউ না থাকায় তাকে ওই মহিলা তার বাড়িতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাকে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে এবং তাকে দিয়ে বাড়ির যাবতীয় কাজ করায় এবং কাজে সামান্য ভুল হলে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। সুমি জানায়, ওই মহিলার নাম শারমিন। গতকাল দুপুরে তাকে সিঁড়ি মোছার জন্য বললে সে এই সুযোগে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসে সরাসরি নূর হোসেনের বাড়িতে চলে আসে।
সুমি জানায়, নূর হোসেনের পরিবারের লোকেরা যথেষ্ট আদর-যত্ন করতো তাকে। কখনো মারধর করতো না। তারা তাকে মেয়ের মতো জানতো।
তবে যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল, সে বাড়ির নম্বর সে বলতে পারেনি। সে জানায়, তাকে সেখানে নিয়ে গেলে সে বাড়িটি চিনবে। তাকে যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল, সেটি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে:
সুমি গত ১১ মে শুক্রবার ১৮/২, গোয়ালঘাট লেন, ধোলাইখাল এলাকার নূর হোসেনের বাড়ি থেকে ধনেপাতা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখোজির পর সুমির পরিবারের কাছে বিষয়টি জানান নূর হোসেন। তিনি এবং তার স্ত্রী লুনা কেরানীগঞ্জে সুমির বাবা মোশাররফ হোসেনের কাছে যান। মোশাররফ হোসেন কেরানীগঞ্জের কাঠুরিয়ায় আবু জমিদারের বাড়িতে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন সুমির মামা শাহিন সরদার। শাহিন সরদার নূর হোসেনকে বিষয়টি থানায় না জানানোর জন্য বলেন। তিনি নূর হোসেনের কাছে সুমিকে খুঁজতে মাইকিংয়ের জন্য টাকা চান। টাকা না দিয়ে নূর হোসেন তাকে মাইক, রিকশাসহ যাবতীয় কিছু সরবরাহ করে দেওয়ার কথা বললে শাহিন চলে যান। পরে তাকে নূর হোসেন ফোন দিলে বারবার বলেন, একটু পরে আসছি।
পরদিন রোববার ১৩ মে শাহিন পুলিশ নিয়ে নূর হোসেনের দোকানে আসেন এবং তাকে বলা হয় যে সুমিকে পাওয়া গেছে, এই বলে তাকে মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক তাকে জানান, লালবাগ ভূমি অফিসের সামনে থেকে সুমির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পিতা তার লাশ শনাক্ত করেছেন। এখন আমরা তার লাশ তার পিতার কাছে হস্তান্তর করবো।
এ ব্যাপারে সুমির বাবাকে বাদী করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ সময় তার কাছ থেকে আলাদা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।
নূর হোসেন কথিত সুমির লাশের ময়নাতদন্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্স খরচ, যাতায়াত খরচ, তিন দিনের খরচসহ যাবতীয় খরচপাতি দিয়ে লাশ নিয়ে মোশাররফ হোসেনকে পটুয়াখালীতে তার নিজ গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সুমির বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, তাকে সুমির মামা লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জানায়। সেখানে থেকে আমি লাশ নিয়ে গ্রামে চলে যাই।
উদ্ধার হওয়া লাশটি তাহলে কার?
এদিকে সুমি ফিরে ঘটনার ইউর্টার্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুলিশ। গত ১২ তারিখে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী লাশটি তাহলে কার, তা নিয়ে নতুন করে হিসেব কষতে হচ্ছে লালবাগ থানা পুলিশকে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের জট। পুলিশ এ বিষয়ে নতুন করে তদন্তে নামছে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক।
এদিকে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্টে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী লাশটি ১৭/১৮ বছরের এক তরুণীর বলে জানিয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এদিকে সুমির বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, সেদিন তাকে পুলিশ লাশ দেখতে দেয়নি। লাশ দেখলে সে ভয় পাবে এই অজুহাতে তাকে তখন লাশ দেখানো হয়নি। এমনকি নূর হোসেনের পরিবারের কাউকেই লাশ দেখতে চাইলেও দেখানো হয়নি। তিনি জানান, আমি বারবার লাশ দেখতে চাইলেও আমাকে লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি।
কে এই শাহিন?
ঘটনার পরপরই সুমির মামা পরিচয় দেওয়া শাহিনের আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তিনি নূর হোসেনকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
টাকা না দিলে নূর হোসেনকে বস্তাবন্দী লাশের আসামি করা হবে বলে তাকে হুমকি দেন এবং তার কাছ থেকে মোট ৩ লাখ টাকা আদায় করেন। লাশ গ্রামে নেওয়ার সময়ও নূর হোসেনের কাছে আরও টাকা দাবি করেন। সর্বশেষ গত ৩০ মে তাকে ফোন করে আরও ৬/৭ লাখ টাকা দাবি করেন। নইলে বস্তাবন্দী লাশের আসামি করার হুমকি দেন। এসব বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে কিছু না বলতে নিষেধ করেন এবং লাশ পোস্টমর্টেমের দিন তাকে শাহিন সরদার কড়া পাহাড়ায় রাখেন। শুরু থেকেই শাহিনের আচরণ ছিল সন্দেহজনক।
এদিকে বস্তাবন্দী লাশের সাথে শাহিনসহ পুলিশের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৮ বছরের একটি তরুণীর লাশ ১০ বছর বলে চালিয়ে দেওয়া, সুমির বাবাকে এবং নূর হোসেনকে লাশ না দেখানো এবং সর্বপরি নূর হোসেনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের ঘটনায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে তবে কি দুর্ভাগা সেই যুবতী যাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে? তার খুনিরা কি তাহলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সুমি প্রথমে ওয়ারী থানার ১৮/২ গোয়ালঘাট লেনের যে বাড়িতে কাজ করতো সেই নূর হোসেনের বাড়িতে ফিরে আসে। এ সময় নুর হোসেনের পরিবার প্রথমে কিছুটা আতংকিত হয়ে পড়ে। যার লাশ দাফনের জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, লাশের ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে গ্রামে পাঠানো, কুলখানির খরচ, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সবই দিতে হয়েছে, সেই সুমিকে জীবিত অবস্থায় দেখেই নূর হোসেনের স্ত্রী লুনা ভূত দেখার মতো আঁৎতকে উঠে অজ্ঞান হয়ে যান। নূর হোসেনের মাকে গিয়ে ভাবি বলে জড়িয়ে ধরে সুমি। এ সময় সে ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং কাঁদতে থাকে।
লুনার জ্ঞান ফিরে এলে স্বামী নূর হোসেনকে খবর দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সেখানে ভীড় করে আশেপাশের প্রতিবেশীরা। নূর হোসেনও হতবাক! সঙ্গে সঙ্গে ওয়ারী থানায় জানান বিষয়টি। কারণ এই সুমির জন্য বিগত ২০টি দিন তার পরিবারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং মানসিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নূর হোসেনের পরিবার।
অভিযোগ ওঠে নূর হোসেনের পরিবারের লোকজন সুমিকে খুন করেছে।
সুমিকে খুনের দায়ে নূর হোসেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের খুনের আসামি করারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাই তাকে পেয়ে যেন তিনি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। খবর দেন সুমির বাবা মোশাররফ হোসেনকে। তিনিও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সুমিকে ফিরে পাওয়ার পর নূর হোসেন পুনরায় ওয়ারী থানায় ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন যার নং ১২৮১, তারিখ: ৩১/০৫/১২। এরপর তার বাবা মোশাররফ সরকার যে এলাকায় থাকেন ওই এলাকার চেয়্যারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে সুমিকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে নূর হোসেনের পরিবার।
যেভাবে ফিরে এলো সুমি:
সুমি জানিয়েছে, গত ১১ মে শুক্রবার সে যখন ধনেপাতা আনতে দোকানে যায়, সেখান থেকে তাকে এক মহিলা হাত ধরে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। গলির মধ্যে কেউ না থাকায় তাকে ওই মহিলা তার বাড়িতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাকে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে এবং তাকে দিয়ে বাড়ির যাবতীয় কাজ করায় এবং কাজে সামান্য ভুল হলে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। সুমি জানায়, ওই মহিলার নাম শারমিন। গতকাল দুপুরে তাকে সিঁড়ি মোছার জন্য বললে সে এই সুযোগে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসে সরাসরি নূর হোসেনের বাড়িতে চলে আসে।
সুমি জানায়, নূর হোসেনের পরিবারের লোকেরা যথেষ্ট আদর-যত্ন করতো তাকে। কখনো মারধর করতো না। তারা তাকে মেয়ের মতো জানতো।
তবে যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল, সে বাড়ির নম্বর সে বলতে পারেনি। সে জানায়, তাকে সেখানে নিয়ে গেলে সে বাড়িটি চিনবে। তাকে যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল, সেটি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে:
সুমি গত ১১ মে শুক্রবার ১৮/২, গোয়ালঘাট লেন, ধোলাইখাল এলাকার নূর হোসেনের বাড়ি থেকে ধনেপাতা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখোজির পর সুমির পরিবারের কাছে বিষয়টি জানান নূর হোসেন। তিনি এবং তার স্ত্রী লুনা কেরানীগঞ্জে সুমির বাবা মোশাররফ হোসেনের কাছে যান। মোশাররফ হোসেন কেরানীগঞ্জের কাঠুরিয়ায় আবু জমিদারের বাড়িতে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন সুমির মামা শাহিন সরদার। শাহিন সরদার নূর হোসেনকে বিষয়টি থানায় না জানানোর জন্য বলেন। তিনি নূর হোসেনের কাছে সুমিকে খুঁজতে মাইকিংয়ের জন্য টাকা চান। টাকা না দিয়ে নূর হোসেন তাকে মাইক, রিকশাসহ যাবতীয় কিছু সরবরাহ করে দেওয়ার কথা বললে শাহিন চলে যান। পরে তাকে নূর হোসেন ফোন দিলে বারবার বলেন, একটু পরে আসছি।
পরদিন রোববার ১৩ মে শাহিন পুলিশ নিয়ে নূর হোসেনের দোকানে আসেন এবং তাকে বলা হয় যে সুমিকে পাওয়া গেছে, এই বলে তাকে মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক তাকে জানান, লালবাগ ভূমি অফিসের সামনে থেকে সুমির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পিতা তার লাশ শনাক্ত করেছেন। এখন আমরা তার লাশ তার পিতার কাছে হস্তান্তর করবো।
এ ব্যাপারে সুমির বাবাকে বাদী করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ সময় তার কাছ থেকে আলাদা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।
নূর হোসেন কথিত সুমির লাশের ময়নাতদন্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্স খরচ, যাতায়াত খরচ, তিন দিনের খরচসহ যাবতীয় খরচপাতি দিয়ে লাশ নিয়ে মোশাররফ হোসেনকে পটুয়াখালীতে তার নিজ গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সুমির বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, তাকে সুমির মামা লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জানায়। সেখানে থেকে আমি লাশ নিয়ে গ্রামে চলে যাই।
উদ্ধার হওয়া লাশটি তাহলে কার?
এদিকে সুমি ফিরে ঘটনার ইউর্টার্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুলিশ। গত ১২ তারিখে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী লাশটি তাহলে কার, তা নিয়ে নতুন করে হিসেব কষতে হচ্ছে লালবাগ থানা পুলিশকে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের জট। পুলিশ এ বিষয়ে নতুন করে তদন্তে নামছে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক।
এদিকে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্টে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী লাশটি ১৭/১৮ বছরের এক তরুণীর বলে জানিয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এদিকে সুমির বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, সেদিন তাকে পুলিশ লাশ দেখতে দেয়নি। লাশ দেখলে সে ভয় পাবে এই অজুহাতে তাকে তখন লাশ দেখানো হয়নি। এমনকি নূর হোসেনের পরিবারের কাউকেই লাশ দেখতে চাইলেও দেখানো হয়নি। তিনি জানান, আমি বারবার লাশ দেখতে চাইলেও আমাকে লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি।
কে এই শাহিন?
ঘটনার পরপরই সুমির মামা পরিচয় দেওয়া শাহিনের আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তিনি নূর হোসেনকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
টাকা না দিলে নূর হোসেনকে বস্তাবন্দী লাশের আসামি করা হবে বলে তাকে হুমকি দেন এবং তার কাছ থেকে মোট ৩ লাখ টাকা আদায় করেন। লাশ গ্রামে নেওয়ার সময়ও নূর হোসেনের কাছে আরও টাকা দাবি করেন। সর্বশেষ গত ৩০ মে তাকে ফোন করে আরও ৬/৭ লাখ টাকা দাবি করেন। নইলে বস্তাবন্দী লাশের আসামি করার হুমকি দেন। এসব বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে কিছু না বলতে নিষেধ করেন এবং লাশ পোস্টমর্টেমের দিন তাকে শাহিন সরদার কড়া পাহাড়ায় রাখেন। শুরু থেকেই শাহিনের আচরণ ছিল সন্দেহজনক।
এদিকে বস্তাবন্দী লাশের সাথে শাহিনসহ পুলিশের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৮ বছরের একটি তরুণীর লাশ ১০ বছর বলে চালিয়ে দেওয়া, সুমির বাবাকে এবং নূর হোসেনকে লাশ না দেখানো এবং সর্বপরি নূর হোসেনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের ঘটনায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে তবে কি দুর্ভাগা সেই যুবতী যাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে? তার খুনিরা কি তাহলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই।
No comments