হরতালের নেতিবাচক প্রভাব by ইফতেখার আহমেদ টিপু
হরতালের কারণে জনদুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে রপ্তানি বাজারে পর্যন্ত পড়েছে হরতালের নেতিবাচক প্রভাব। বন্দর থেকে মাল ছাড় পাচ্ছে না। ব্যাংক-বীমা, বন্দর, আমদানি-রপ্তানিসহ পুঁজিবাজার ও পরিবহন ব্যবসা_কোনো কিছুই এর বাইরে ছিল না।
যানবাহন সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে। দেশব্যাপী হরতালের কারণে সবজি সরবরাহ কমে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। ফলে গত সপ্তাহের চেয়ে পাইকারি বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়ে গেছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সব খাতের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারাই হরতালে ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পেঁৗছানোর বাধ্যবাধকতা থাকে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নানা সংকট মোকাবিলা করে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে হয়। এর ওপর হরতালের উপদ্রব বেড়ে গেলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকবে না। হরতালের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ_সব স্থবির হয়ে পড়ে। সময়মতো বিমান এবং অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে পারে না বলে কোটি কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেই ক্ষতি ব্যক্তি পর্যায় ছাড়িয়ে জাতীয় ক্ষতির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়। শেয়ারবাজারের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই হরতালের কারণে। ঢাকা এবং এর বাইরে থেকে কাঁচামাল ও শাকসবজি আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকে। ফলে কৃষক ও সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
হরতালের আগের দিন ২১ এপ্রিল রাতে রাজধানীতে ১০টি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন দিয়ে চালককে পুড়িয়ে মারার ঘটনা। দীর্ঘ যাত্রার পর বাসচালক ও হেলপার এ সময় গাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগানোর পর হেলপার দ্রুত বেরিয়ে আসতে সমর্থ হলেও হতভাগ্য গাড়িচালক বের হতে পারেননি। হরতালের আগে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য যানবাহনে অগি্নসংযোগের ঘটনা দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। এটি সে ধরনের অপকৌশল বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। হরতালের আগে সন্ত্রাস সৃষ্টি যেন এর অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। একসময় হরতালের আগের রাতে ব্যাপকভাবে ককটেল ফুটিয়ে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করা হতো। বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠায় যানবাহনে অগি্নসংযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাস সৃষ্টি হরতালকারীদের রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনের হরতালের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং লেনদেনের ওপর। ব্যাংক-বীমা খোলা থাকলেও গ্রাহক উপস্থিতি ও লেনদেন কম হয়েছে। গ্রাহক উপস্থিতি না থাকায় কিছু কিছু ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়। হরতালের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে পেছনের দরজা দিয়ে। নিরাপত্তার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের সামনে পুলিশ মোতায়েন লক্ষ করা গেছে। শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ থাকায় মানুষকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় বিপদে। সরবরাহে ঘাটতি থাকায় রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে। আলুর দাম কেজিপ্রতি দু-তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০-২১ টাকায়। তেল নিয়ে যেকোনো সময় তেলেসমাতির আশঙ্কা করছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। মোটা চাল মিলছে ৩২ টাকায়। ডাল ও পোলাও চালের বাজার গত সপ্তাহে দাম বাড়ার রেকর্ড করেছে। তবে হরতালে দাম কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। হালিপ্রতি ক্রেতাকে ৩৬ টাকা গুনতে হলেও আপাতত ডিমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বাড়তি দাম দিয়েই ভোক্তাকে ডিমের স্বাদ নিতে হচ্ছে। বিরোধী দলের টানা তিন দিনের হরতালের কারণেই সবজির দাম বেড়েছে। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে চাল, তেল, চিনির মতো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
২০০৫ সালে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি এক গবেষণায় জানায়, বাংলাদেশে এক দিনের হরতালে ৫৫৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সংস্থাটির মতে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনেক বেশি। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হরতাল দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউএনডিপি ২০০৫ সালে যখন ওই গবেষণা করে, তখন বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল চার লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা প্রায় দ্বিগুণ। গত অর্থবছরে এর আকার ছিল সাত লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এক দিনে এখন মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। আকার দ্বিগুণ হলে ক্ষতিও প্রায় দ্বিগুণ হবে_এমনটিই ধরে নেওয়া যায়। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বিরোধী দল হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে_এমনটিই প্রত্যাশা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ; চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
chairman_ifadgroup
হরতালের আগের দিন ২১ এপ্রিল রাতে রাজধানীতে ১০টি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন দিয়ে চালককে পুড়িয়ে মারার ঘটনা। দীর্ঘ যাত্রার পর বাসচালক ও হেলপার এ সময় গাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা আগুন লাগানোর পর হেলপার দ্রুত বেরিয়ে আসতে সমর্থ হলেও হতভাগ্য গাড়িচালক বের হতে পারেননি। হরতালের আগে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য যানবাহনে অগি্নসংযোগের ঘটনা দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। এটি সে ধরনের অপকৌশল বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। হরতালের আগে সন্ত্রাস সৃষ্টি যেন এর অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। একসময় হরতালের আগের রাতে ব্যাপকভাবে ককটেল ফুটিয়ে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করা হতো। বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠায় যানবাহনে অগি্নসংযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাস সৃষ্টি হরতালকারীদের রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনের হরতালের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং লেনদেনের ওপর। ব্যাংক-বীমা খোলা থাকলেও গ্রাহক উপস্থিতি ও লেনদেন কম হয়েছে। গ্রাহক উপস্থিতি না থাকায় কিছু কিছু ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়। হরতালের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে পেছনের দরজা দিয়ে। নিরাপত্তার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের সামনে পুলিশ মোতায়েন লক্ষ করা গেছে। শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ থাকায় মানুষকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় বিপদে। সরবরাহে ঘাটতি থাকায় রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে। আলুর দাম কেজিপ্রতি দু-তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০-২১ টাকায়। তেল নিয়ে যেকোনো সময় তেলেসমাতির আশঙ্কা করছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। মোটা চাল মিলছে ৩২ টাকায়। ডাল ও পোলাও চালের বাজার গত সপ্তাহে দাম বাড়ার রেকর্ড করেছে। তবে হরতালে দাম কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। হালিপ্রতি ক্রেতাকে ৩৬ টাকা গুনতে হলেও আপাতত ডিমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বাড়তি দাম দিয়েই ভোক্তাকে ডিমের স্বাদ নিতে হচ্ছে। বিরোধী দলের টানা তিন দিনের হরতালের কারণেই সবজির দাম বেড়েছে। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে চাল, তেল, চিনির মতো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
২০০৫ সালে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি এক গবেষণায় জানায়, বাংলাদেশে এক দিনের হরতালে ৫৫৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সংস্থাটির মতে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি অনেক বেশি। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হরতাল দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউএনডিপি ২০০৫ সালে যখন ওই গবেষণা করে, তখন বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল চার লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা প্রায় দ্বিগুণ। গত অর্থবছরে এর আকার ছিল সাত লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এক দিনে এখন মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। আকার দ্বিগুণ হলে ক্ষতিও প্রায় দ্বিগুণ হবে_এমনটিই ধরে নেওয়া যায়। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বিরোধী দল হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে_এমনটিই প্রত্যাশা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ; চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
chairman_ifadgroup
No comments