বৈশাখ রাঙাতে এলো ন্যান্সির ‘রঙ’ by ফাহিম ফয়সাল
সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ন্যান্সির গান এখন মানুষের মুখে মুখে। ব্যক্তি জীবনে তিনি যতোটা সাধারণ, তার কণ্ঠের কারুকাজ আর গায়কী ঠিক ততোটাই অসাধারণ। প্লেব্যাক আর স্টেজ প্রোগ্রাম নিয়ে তুমুল ব্যস্ত এই গায়িকাকে অডিওতে খুঁজে পাওয়া যায় না তেমন।
সেই ২০০৯ সালের বৈশাখে বের হয়েছিল ন্যান্সির প্রথম একক অ্যালবাম ‘ভালোবাসা অধরা’। দীর্ঘ ৩ বছর পর গত ৪ এপ্রিল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেলো ন্যান্সির দ্বিতীয় একক অডিও অ্যালবাম ‘রঙ’। ন্যান্সির ‘রঙ’ অ্যালবামটির প্রকাশনা উপলক্ষে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত শল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ, হাবিব ওয়াহিদ, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডেডলাইন মিউজিকের সিইও তানভীর চৌধুরী ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ। এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলালিংক মিউজিক স্টেশনের মাধ্যমে অ্যালবামটি মুক্তি পায়। ন্যান্সি এবারের অ্যালবামটির সবগুলো গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় করেছেন হাবিব।
দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘রঙ’-এর আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচনের পর কথা হয় নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির সঙ্গে। নিজের গান, ব্যক্তি জীবন ও নানা বিষয় নিয়ে ন্যান্সি কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
বাংলালিংক মিউজিক স্টেশনের মাধ্যমে ‘রঙ’ বাজারে আসে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এবার এটি সিডি আকারে অডিও বাজারে রিলিজ পেয়েছে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অ্যালবাম রিলিজ দেওয়া প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘আজকাল প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব শিল্পীর অ্যালবাম শুরুতে মোবাইল ফোনে রিলিজ পায়। পরবর্তীতে এটি সিডি আকারে বাজারে আসে। দেশীয় সঙ্গীতকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য মোবাইল ফোন গুলোর এগিয়ে আসা সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। বাংলালিংকের মিউজিক স্টেশনে আমার দ্বিতীয় একক অ্যালবামটি প্রথমে রিলিজ পায়। মিউজিক স্টেশনে রিলিজের পর অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। তবে আমাদের দেশে এখনও শ্রোতারা সিডিতেই গান শুনতেই অভ্যস্ত। তাই শ্রোতাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সিডি আকারে অ্যালবামটি কবে বাজারে আসবে ? আর মিউজিক স্টেশনে অ্যালবাম প্রকাশের পর মনে এক ধরনের অতৃপ্তিও ছিল; কারণ সবশ্রেণীর শ্রোতারা চাইলেই আমার গান শুনতে পারতেন না। সিডি ফরম্যাটে অ্যালবামটি রিলিজ পাওয়ায় এটি এখন শ্রোতাদের কাছে পৌছে গেছে।
আপনাকে হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গেই বেশী কাজ করতে দেখা যায়, এর কারন কি ?
উত্তরে ন্যান্সি হাসলেন। বললেন, ‘আসলে হাবিব ভাইয়ের সাথে কাজ করতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তিনি আমার কণ্ঠ আর গায়কী খুব ভালো বোঝেন, পাশাপাশি উনার করা সুরও আমি স্বাচ্ছন্দে রপ্ত করতে পারি। তার সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা খুব ভালো। শ্রোতারাও আমাদের দু’জনের গানকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেন। এটাও বড় একটি বিষয়। তাছাড়া হাবিব ভাই এদেশের মানুষের মন কি চায় তা বুঝতে পরে। আর তিনি অসম্ভব মেধাবী একজন মিউজিশিয়ান।’
প্রথম অ্যালবামের পর দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘রঙ’ প্রকাশ করতে বেশ সময় নিলেন, এর কারণ কি? ‘আসলে অ্যালবাম করি করি করেও করা হয়ে উঠে না। আর শ্রোতাদের ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য নিজেও এবার ইচ্ছে করে একটু বেশি সময় নিয়েছি। অবশ্য এ অ্যালবামটি হাবিব ভাইয়ের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই এতো দ্রুত বের করা সম্ভব হতো না।’
অনেকদিন পর ভক্তরা আপনার কাছ থেকে নতুন অ্যালবাম পাচ্ছেন, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন ? এ প্রশ্নের জবাবে ন্যান্সি বললেন, ‘যদিও গত রোজার ঈদে আমার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠে নি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এবছর আমার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘রঙ’ সবার হাতে তুলে দিতে পারার আনন্দ সত্যি অন্য রকম।’
অ্যালবামের নাম ‘রঙ’ রাখা প্রসঙ্গে ন্যান্সি বললেন, ‘সামনে আসছে পহেলা বৈশাখ। বংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বাঙালীর এই প্রাণের উৎসবের দিনটিতে সর্বত্রই রঙ-এর ব্যাপক ছড়াছড়ি থাকে। নতুন বছরে রঙে রঙে আমাদের সবার জীবনকে রাঙিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই ‘রঙ’ নামটি বেছে নেওয়া।
স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ততার কথা জানতে চাইলে ন্যান্সি বলেন, ‘বর্তমানে স্টেজ প্রোগ্রামে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সবাই শুধু কমার্শিয়াল গান শুনতে চায়। এর মধ্যে আবার অধিকাংশই হতে হবে হিপহপ গান। অথচ একটা মেলোডিয়াস গান যে মানুষের মনে অনেক দিন স্থায়ী হয়, তা অনেকেই বুঝতে চান না। এটা আমদের সকলেরই বোঝা উচিত। স্টেজ শোতে সব ধরনের শিল্পীকেই সবধরনের গান পরিবেশনের সুযোগ দেওয়া উচিত।যার গানে শুধু মিউজিক শোনা যায়, আর গানের কথার কোনো অর্থ নেই এবং তার গানটি যদি হিপহপ হয় তাহলেই স্টেজ শোতে তিনি হিট। এটা ঠিক নয়। এ ধরনের অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত’।
আপনার প্রায় সবগানই মেলোডিয়াস। ভবিষ্যতে অন্য ধরনের গান গাওয়ার ইচ্ছা আছে কি? জবাবে ন্যান্সি বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় নজরুল সঙ্গীত শিখেছি। নজরুলসঙ্গীতের বেশকিছু অনুষ্ঠানও করছি। আমি এখন সব ধরনের গান করি। ভবিষ্যতে যদি অন্য ধরনের সুরে ভালো কাজের সুযোগ পাই, তাহলে তা অবশ্যই করবো।
শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে বলা হলে ন্যান্সি বললেন, শ্রোতাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ আসল সিডি কিনে শুনুন। অডিও শিল্পের অবস্থা এখন মোটেও ভালো নয়। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখুন। পাইরেসি হতে বিরত থাকুন।
‘রঙ’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় গায়ক ফেরদৌস ওয়াহিদ। ন্যান্সির গান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ন্যান্সি অনেক ভালো গায়। অসম্ভব সুরেলা তার গানের গলা। এ অ্যালবামেও সে তার যোগ্যতার প্রমান রেখেছে। সবগুলো গানই আমার ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ডুয়েট গানগুলো খুব ভালো হয়েছে।’ অ্যালবামটির সবগুলো গানের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হাবিব সম্পর্কে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘হাবিব তার কাজের মধ্য দিয়ে ১২টি স্বরের তারতম্য শ্রোতাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে। যার ফল এরই মধ্যে শ্রোতারা পেতে শুরু করেছেন। আশা করি হাবিব আগামীতে আরও ভালো কাজ শ্রোতাদের উপহার দিবে।’
rong
‘রঙ’ অ্যালবাম প্রসঙ্গে হাবিব বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি আমার সবটুকু মিউজিক সেন্স ব্যবহার করে এ অ্যালবামের সুর ও কম্পোজিশনের কাজগুলো শেষ করতে। জানিনা কতটুকু পেরেছি। আশাকরি শ্রোতারা অ্যালবামটি ভালোভাবে গ্রহণ করবেন। তাহলেই আমি স্বার্থক হব।’
ন্যান্সির ‘রঙ’ অ্যালবামে মোট গান রয়েছে নয়টি। নয়টি গান নয় রকমের। এর মধ্যে রয়েছে- ফোক, সুফী, বর্ষা, মায়াজালের গান, ভালোবাসা, আকাঙ্খা ও উপমা ভিত্তিক গান। গানগুলো হচ্ছে- ‘বিরহী পূর্ণিমা’, ‘ঝরা পাতা’, ‘মেঘ মাদল’, ‘বন্ধুর লাগিয়া’, ‘ডুবেছি’, ঝর্ণা পাহাড় নদী’, ‘পাশে তুমি নেই’, ‘ইচ্ছে’ ও ‘মায়া’। পাঁচটি গানের কথা লিখেছেন চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান ভোকাল সুমী। অন্য গানগুলো লিখেছেন- সুস্মিতা বিশ্বাস, মাহবুব মহসিন ও মোজাম্মেল। অ্যালবামের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি একটি গানে ন্যান্সির সাথে দ্বৈতভাবে কন্ঠ দিয়েছেন হাবিব ওয়াহিদ। ‘ঝরা পাতা’ ও ‘ডুবেছি’ শিরোনামের এই গান দু’টোতে যথাক্রমে ন্যান্সির সঙ্গে কন্ঠ দিয়েছেন হাবিব ও মিঠুন। অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ডেডলাইন মিউজিক’র ব্যানারে ন্যান্সির দ্বিতীয় অডিও অ্যালবাম ‘রঙ’ বাজারে এসেছে।
No comments