নতুন প্রজন্মের সচেতন উদ্যোগ প্রয়োজন-এসিড-সন্ত্রাস রোধে সমন্বিত উদ্যোগ

প্রথম আলোর বিশাল বাংলা পাতায় বুধবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত তিন বছরে শুধু নেত্রকোনা জেলায় ১০২ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন। এদের বেশির ভাগই নারী। এর আগে দিনাজপুর, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, খুলনাসহ আরও কয়েকটি জেলার অসহায় এসিডদগ্ধদের সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।


বখাটে ছেলেরা অনেক সময় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসিড ছুড়ে নারীর মুখ ঝলসে দেয়। শত্রুতা করেও অনেকে মেয়েদের মুখে এসিড ছুড়ে মারে। কোনো সভ্য সমাজে এটা কল্পনাও করা যায় না। এসিডদগ্ধ নারী কোনোভাবে বাঁচতে পারলেও তাঁকে জীবন্মৃত অবস্থায়, মাথা নিচু করে কোনোভাবে দিনাতিপাত করতে হয়।
বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় এসিড-সন্ত্রাস বেশি ঘটে। এসব এলাকায় পুলিশ ও প্রশাসনের সতর্ক উদ্যোগ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল। জেলায় জেলায় জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের কমিটি আছে, তাদের সভাও হয়, কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো প্রায় সময়ই ফাইলবন্দী হয়ে থাকে। ফলে এসডি-সন্ত্রাসের মাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য কিছুটা কমেছে। ২০০২ সালে সারা দেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ছিল ৩৬৭টি আর ২০১১ সালে ছিল মাত্র ৮৪টি। একদিকে সরকারের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা, পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন ও লেখালেখির মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য নাগরিক সমাজের সক্রিয় উদ্যোগ এখানে ভূমিকা পালন করেছে।
কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। যেখানেই এসিড-সন্ত্রাস, সেখানেই রুখে দাঁড়াতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা কার্যকর করলে এসিড-সন্ত্রাস আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। বছর খানেকের মধ্যে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অন্তত ৫০-এর নিচে নামিয়ে আনতে পারলে পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যাবে। এর পর দ্রুত এ সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে।
এ ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আধুনিক ও উন্নত চিন্তার তরুণেরাই পারেন সমাজকে এসিড-সন্ত্রাসের অভিশাপমুক্ত করতে। পাঠ্যবইয়ে এসিড-সন্ত্রাস রোধের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করলে কাজটি সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.