ভাষা প্রতিযোগ-মেঘ দেখে কেউ করেনি ভয় by সুমনকুমার দাশ

চৈত্রের সকালের সূর্যের আলো হঠাৎ উধাও। মুহূর্তেই কালো মেঘে ছেঁয়ে যায় আকাশ। আচমকা প্রচণ্ড ধূলিঝড়। অনবরত মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানি। মিনিট তিরিশেক পর একসময় বড় বড় ফোঁটায় নামে বৃষ্টি। মৌসুমের এই প্রথম ‘কালবৈশাখী’র দেখা পেয়ে তরুণ প্রাণে জেগে ওঠে চাঞ্চল্য।


দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর হইহুল্লোড় আর চিৎকার-শোরগোলে যেন হারিয়ে যায় মেঘের গর্জন। কে শোনে কার কথা? কেউ গলা ছেড়ে গান ধরে ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’ কিংবা ‘আকাশ এত মেঘলা যেও নাকো একলা’। আবার কেউ কেউ বৃষ্টিতে ভিজে দাপাদাপি শুরু করে দেয়।
একসময় বৃষ্টি থামে। সূর্যের আলো উঁকি দেয় আকাশে। উপস্থাপক মাইকে আবৃত্তি করেন, ‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’। আবৃত্তি শুনে কাদা, ধুলা আর বৃষ্টি গায়ে মেখে নিজ নিজ আসনে বসে পড়ে শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ ২০১২-এর সিলেট অঞ্চলের আসর। নগরের নয়াসড়ক এলাকার কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ উৎসবে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট জেলার ৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
সকাল পৌনে ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল ইসলাম। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহাম্মদ দানীউল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামসুল ইসলাম বলেন, ‘মায়ের ভাষাকে মনের গভীর থেকে ভালোবাসতে হবে। বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা বাড়িয়ে এ ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে।’
উদ্বোধনের পরপর শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় ভাষা প্রতিযোগে। ৩০ মিনিট পরীক্ষা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। দেড় ঘণ্টা পর বৃষ্টি শেষ হলে বেলা একটার দিকে শুরু হয় প্রতিযোগের আকর্ষণীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্ব সঞ্চালন করেন ভাষা প্রতিযোগের সমন্বয়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তারিক মনজুর।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ছিল: বাংলা ভাষায় যদি বিরাম চিহ্ন না থাকত, তাহলে কী হতো?, আমড়াগাছি কড়া—এই বাগধারার অর্থ তোষামোদি করা, এটা কেন?
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহাম্মদ দানীউল হক, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক অরুণ বসু প্রমুখ।
পরে ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভাষা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ভাষাসংগ্রামী ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক অরুণ বসুর সঞ্চালনায় ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক মনজুর, প্রথম আলো বন্ধুসভা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান, এইচএসবিসির সহকারী কর্মকর্তা রাফাত শেফা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি এন ডি মিথুন। আলোচনার এক ফাঁকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দেওয়ান গোলাম রব্বানী চৌধুরীর হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন ভীষ্মদেব চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা পুলক ‘তোমরা একতারা বাজাইও না’সহ চারটি গান গেয়ে শোনান।
পুরস্কার পেয়েছে যারা: প্রতিযোগিতায় চারটি বিভাগে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রাথমিক বিভাগে প্রথম হয় মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কেজি হাইস্কুলের ইবনুর মুহতাদি শাহ, দ্বিতীয় সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাঁধন দেব এবং তৃতীয় হয়েছে দি ফ্লাওয়ার্স কেজি হাইস্কুলের আসওয়ান সিদ্দিকা নির্জন।
নিম্নমাধ্যমিক বিভাগে সেরা তিনজন হলো: সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাইরাতুবা মাইশা, কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বৃষ্টি কর্মকার ও সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ইশরাত জাহান ইমু।
মাধ্যমিক বিভাগে কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফারহানা আক্তার তানিয়া, মৌলভীবাজারের দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সবিতা সাহা ও সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পৃথিলা দত্ত পুরকায়স্থ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়।
উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অদিতি দে তিথি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে সিলেটের এমসি কলেজের এলিনা হক আনিকা ও সিলেট সরকারি কলেজের মিঠুন কান্তি দাস।

No comments

Powered by Blogger.