সময়ের প্রতিবিম্ব-লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন, তীরটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা by এবিএম মূসা

ইংরেজিতে প্রবাদবাক্যটি হচ্ছে, ‘হোয়্যার অ্যাঞ্জলস ফিয়ার টু ট্রিড, ফুলস স্টেপ ইন।’ ভাবার্থ করলে বাংলায় বলা যায়, ‘যেখানে ফেরেশতারাও যেতে দ্বিধা বোধ করেন, সেখানে নির্বোধেরাই স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে।’ কথাগুলো বলছি প্রথম আলোতে আবুল মোমেনের নিয়মিত কলামের শিরোনাম ধার করে সংবিধান সংশোধন তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা


নিয়ে ‘যুক্তি-তর্ক-গপ্পো’ করার সুবাদে। আরও একটি বিষয় ব্যাখ্যা করতে চাই—আমার মতো সংবিধান বিষয়ে স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন অথবা নির্বোধ ব্যক্তি আজ কেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে লিখতে বসেছি; কেন বিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতদের আলোচনায় নাক গলিয়েছি? অপরদিকে কয়েক দিন আগে আমার অনুজ সাংবাদিক এনায়েত রাব্বি মোবাইল ফোনে খোঁচা মেরেছে, পত্রিকার কলামে আর টক শোতে এত কথা বলি, এখন বহুল আলোচিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-ব্যবস্থার পরিবর্তন অথবা শুদ্ধিকরণ বহাল রাখা বা বিলুপ্তি নিয়ে কিছু লিখছি না কেন? কিছু পাঠক এবং টক শোর শ্রোতা-দর্শকও একই প্রশ্ন করেছেন। তবে তাঁরা একটি মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, এত পণ্ডিতির কথা শুনছি, কিন্তু একটি কথা বুঝছি না। নির্বাচন তো আরও আড়াই বছর পরে হওয়ার কথা। এখন থেকেই কেন বিদ্যমান পদ্ধতিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে? ভাবলাম, এ দিকটি তো কেউ আলোচনা করেননি? এই প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য সন্দেহজনক উত্তরের পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, ‘নির্বাচন কি এগিয়ে আসছে?’ বিচারপতির পদোন্নতি তথা প্রধান বিচারপতির অবসর নিয়ে পদোন্নতিসংক্রান্ত বিভ্রান্তির অগ্রিম সমাধান কি আগাম নির্বাচন?
এত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে খোঁজাখুঁজির শেষ হবে না। আপাতত বিতর্কের পটভূমি হচ্ছে, যাঁরা পাঁচ মিনিটে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে বলে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় গলা ফাটিয়েছেন, তাঁরা বাস্তবে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার নামে এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করেছিলেন। এই অপকর্মটি অবশ্য তাঁরা ১৯৭৫ সালেও করেছিলেন। সেবার করেছিলেন রাইফেলের সঙিনের গুঁতোয়, পরে করেছেন মধ্যরাতের সংসদীয় ক্যুর মাধ্যমে। আমার ব্যাখ্যাটি আমি যে রাতে ক্যুটি হলো, তার পরদিনই ভোরের কাগজ-এ তখনকার নিয়মিত কলামে লিখেছিলাম। লিখেছিলাম, সংবিধানের ২-ক পরিচ্ছেদ ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ আসলে ‘মিসনোমার’ একটি ধোঁকাবাজি। দীর্ঘদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করল আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলনের ফসলটি যে সত্যিকার অর্থে বিএনপির তৎকালীন দলীয় রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের ঘরে উঠল, তখন তাঁরা বুঝেও বোঝেননি। বিলম্বিত বোধোদয় ঘটেছে কয়েকটি তত্ত্বাবধায়কীয় নির্বাচনের পর। তাই তখনকার মাথাব্যথা এখন যন্ত্রণা দিচ্ছে। অবশ্য আগেও যথাসময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিম তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞ, দূরদর্শী ও সৎসাহসী বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক আমলে একটি দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বিশ্বাস সাহেবের চালবাজিটি ভণ্ডুল করে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গটি একটু পরে আবার আলোচনা করব।
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ সম্পর্কে মহাজ্ঞানী সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক আলোচনায় আদালতে, বিতর্কে অথবা পরামর্শদাতা-বন্ধু তথা সম্মানিত অ্যামিকাস কিউরিরা আমার মনে হয়েছে, আসল কথাটি বলেননি। তাঁদের সবাই অতি প্রবীণ, নিশ্চয়ই ব্রিটিশ জামানার ‘সাধারণ ইতিহাস’ পড়েছেন। ইউরোপীয় ইতিহাসে ‘হলি রোমান এম্পায়ার’-এর বিষয়টির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘হট ওয়াজ নাইদার রোমান, নর হলি, নেভার অ্যান এম্পায়ার।’ রোমের তথাকথিত কোনো সাম্রাজ্য ছিল না, সেটির পবিত্রতা বা শুদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে না। ১৫ বছর আগে তখনকার ভোরের কাগজ-এ একটি নিবন্ধে আমি এই বক্তব্যটিও ব্যাখ্যা করেছিলাম। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত কি না, সেই প্রশ্ন করিনি; মূলনীতির পরিপন্থী নয়—এমনটি বলিনি। সংযোজন-পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগ নেতাদের শুধু বলেছিলাম, ‘কী পেয়েছেন, তা আগে বুঝে দেখুন।’ তারপর দুটি নির্বাচনে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর বিচারপতি লতিফুর রহমান, তারও আগে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ব্যক্তিটি আসলে কে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে অনেকে এখন অনেক কথা বলছেন। অনেক কিছু করতে চান আওয়ামী বিশেষজ্ঞরা, তবে সেই কাজটি নিজেরা করবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আদালতের তথা বিচার বিভাগের মাথায় কাঁঠালটি তুলে সংবিধান সংশোধন, বাহাত্তরে ফিরে যাওয়ার খোলস পরিয়ে, কাঁঠাল ভেঙে ভুসি আদালতের মাথায় রেখে কোয়াগুলো খাবেন বলে ভাবছেন। যা-ই হোক, প্রসঙ্গটি বিস্মৃতির পরিধিতে ব্যাপৃত করতে চাই না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অভাজনের কিছু বক্তব্য পেশ করছি।
প্রকৃত আলোচনায় একটু অতীতে যেতে চাই। সংসদে যেভাবে, যে কারণেই হোক, যে অনুচ্ছেদটি যুক্ত হলো, তার শিরোনাম হলো, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। আজকের আলোচক ও তার্কিকেরা কেউ বলছেন না, ২-ক-পরিচ্ছেদে ‘নির্দলীয়’ বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও ‘নিরপেক্ষ’ বলা হয়নি। এর কারণ বোধহয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের নিরপেক্ষতা-সম্পর্কীয় ধারণাটিই বলবৎ ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘পাগল ও শিশু’ ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না। এখন অবশ্য তাঁর দল পাগল-শিশুর সরকারব্যবস্থাকে জোর সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু কেন এই অবস্থানের পরিবর্তন, তা-ও কেউ ব্যাখ্যা করছেন না। অপরদিকে যাঁরা ১৯৯৬ সালে ‘পেয়েছি’ বলে লাফিয়েছিলেন, তাঁরা এত দিনে বুঝেছেন, ‘যা পেয়েছি, তা ভুল করে পেয়েছি।’ যাকগে অতীতের কথা! আমার মতো বোকাসোকা মানুষ কিছু মতামত দেবে। সেই প্রশ্নের ভিত্তি হবে পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাম্প্রতিক সব ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-সম্পর্কীয় কিছু অভিমত। এ জন্য আমি সাংবিধানিক ৫৮-খ থেকে ৫৮-ঙ ও সবচেয়ে সাংঘাতিক ও স্বৈরতান্ত্রিক চতুর্থ পরিচ্ছেদের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ নিয়ে অর্বাচীনসুলভ ব্যাখ্যা দেব।
একটির পর একটি আলোচনা করা যাক। নির্দলীয় হলেই যে নিরপেক্ষ হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা এই অনুচ্ছেদে নেই—এ কথাটি আগেই বলেছি। পরিচ্ছেদ ২-ক-৫৮-খ অনুচ্ছেদ, ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া দেয়ার পর বা অবসানের পর “যে তারিখ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রধান কার্য্যভার গ্রহণ করিবেন” সেই তারিখ থেকে নববিধানের সরকারটি কার্য্যকর হবে।’ এখানে যে তারিখ বলা হয়েছে, সেই তারিখটি কে কখন নির্ধারণ করবেন? অবশ্য ৫৮-গ (২) অনুচ্ছেদে ১৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ১৫ দিনে তাকে অনেক ছোটাছুটি করতে হবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে। সেই ‘বাছাই পদ্ধতি’র (৫৮-গ-৩-৬) সুযোগ নিয়েই তো ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ কালক্ষেপণ করে একটি সংকটের জন্ম দিলেন। সঠিক সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কাউকে পাওয়া গেল না—এই অজুহাতে নিজেই সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। রাষ্ট্রপতির গৃহীত ৫৮-গ অনুচ্ছেদের অনুচ্ছেদ-১ থেকে ৫ পর্যন্ত বর্ণিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সন্ধান ও সম্মতি লাভের অথবা সব দলের সঙ্গে কোনো সম্ভাব্য আলোচনা করে ব্যর্থ হয়েই কি তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক বনে গেলেন? বস্তুত ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আমার শেষ বক্তব্যে উল্লিখিত ফাঁকটুকুর সুবিধা নিয়ে নাতিদীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। পরিণতিতে পরোক্ষ সেনাশাসক তাঁকে অপসারণ করার অছিলাটি পেয়েছেন। সংবিধানের কোনো ধারাসম্মত উপায়ে নয়, কোথা থেকে যেন ধরে এনে ফখরুদ্দীনকে শিখণ্ডী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বানিয়ে দিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, পঞ্চম আর সপ্তম সংশোধনী আদালতে এল; কিন্তু দুই বছরের শাসনটি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ছিল কি না, সে প্রশ্নের মীমাংসা আদালতে হলো না।
যাকগে সেসব কথা। সর্বশেষ বিতর্ক হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির তত্ত্বাবধায়ক সময়কালীন সব ক্ষমতা কাটছাঁট করা নিয়ে প্রস্তাব এসেছে। তাই যদি হয়, তবে ‘নির্দলীয়’ উপদেষ্টা পরিষদ কার নিকট জবাবদিহি করবেন? যদি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ অংশটি সংশোধন করতে হয়, এই জটিল সমস্যা আদালতের বন্ধু অ্যামিকাস কিউরিদের সমাধান বাতলাতে হবে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি নিয়ে পরামর্শক ও আলোচকদের কাছে একটি প্রশ্নের জবাব প্রত্যাশা করি। তাঁরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। অনুচ্ছেদ ৫৮-গ-১২ বলছে, ‘নূতন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্য্যভার গ্রহণ করেন সেই তারিখে নির্দ্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।’ এখানে আমার একটি প্রশ্ন সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের কাছে—যদি কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন; তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাকে দায়িত্ব দিয়ে ‘বিলুপ্ত’ হবে?
আবার ২০০৭ সালে ফিরে যাই। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২-ক পরিচ্ছেদ ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিতে সত্যিই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন? অথবা উপ-অনুচ্ছেদ ৫৮-গ-৩-৪ অনুসরণে অন্যান্য বিচারপতিদের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন? পরোক্ষ একটি অসমর্থিত কিন্তু প্রত্যক্ষ সূত্র অনুযায়ী আমি জানতে পেরেছিলাম, বিচারপতি কে এম হাসানকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে পরবর্তী সময়ে সাক্ষাৎকারে আমি এই সম্পর্কীয় একটি প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি নিরুত্তর থেকেছেন। তবে এ সম্পর্কে যে বার্তাটি বাতাসে উড়ছিল, তা ছিল, ‘আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসান সম্পর্কে আওয়ামী লীগের আপত্তি জানিয়েছিল।’ বস্তুত বিদ্যমান সাংবিধানিক বিধান অনুসরণে ও নৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সেই অধিকার ছিল না। কারণ তারা তো সংবিধান (ত্রয়োদশ) যেভাবে ছিল, সেভাবেই মেনে নিয়েছিল।
তার পরও সময়ের প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন সরকার অথবা যেকোনো নাগরিক সেই ব্যবস্থার সংশোধন, এমনকি বিলুপ্তি দাবি করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই দাবিটি যাঁরা করছেন, তাঁরা কেন করছেন? আদি সংযোজককারীরা কেন বহাল রাখতে চান? এর পক্ষে-বিপক্ষে প্রদত্ত বিজ্ঞজনদের ব্যাখ্যা আইনজীবী আর পণ্ডিত সংবিধান ব্যাখ্যাকারীদের অনেক সুচারু বক্তব্য আদালতে পেশ করা হচ্ছে, সংবাদপত্রের পাতায় লেখালেখি হচ্ছে এবং টেলিভিশনে স্বল্প সময়ের আলোচনায় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সবার বক্তব্যের খুঁটিনাটি বোঝা আমাদের মতো অভাজনদের বোধগম্য নয়। তার পরও বোঝার চেষ্টা করেছি, বিজ্ঞজনোচিত পরামর্শ দেওয়া আমার জ্ঞানের পরিধির বাইরে। সেই চেষ্টার ফসলই আজকের এই প্রতিবেদনে পেশ করেছি নিজস্ব এলোমেলো ভাবনার প্রতিচ্ছায়ায়।
ভাবনার সর্বশেষ মূর্খজনোচিত মত হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে এত হুলস্থূল অবস্থার মূলে একটিমাত্র বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ভাবনাটি সাংবিধানিক গরমিল অথবা গণতন্ত্রের বর্তমান-ভবিষ্যৎ চিন্তাপ্রসূত নয়। নির্দলীয় ও অনুল্লেখিত নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি নয়। পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সংবিধান বিশুদ্ধিকরণ অথবা গণতন্ত্রকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার’ তথাকথিত আদর্শ প্রণোদিত নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা নিয়ে সবাই তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছেন একটি টার্গেট নিয়ে। লক্ষ্যবস্তু আসলে একটিই এবং সেটি হচ্ছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখলে বা বিলুপ্ত করলে অথবা কতখানি কীভাবে সংশোধন করলে আগামী নির্বাচনে জয়ের পথ সুগম হবে। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে এই ডামাডোলে আমাদের বিচার বিভাগকে কেন অহেতুক জড়ানো হবে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.