কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে-গ্যাস-সংযোগ বন্ধ সমাধান নয়

মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আছে। যদিও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিন বছরে (২০০৮-১০) ২৮ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে। বর্ধিত চাহিদার তুলনায় এটিকে সামান্যই বলতে হবে।


দেশে বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২০০ কোটি ঘনফুট এবং চাহিদা ২৫০ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিনের ঘাটতি ৫০ কোটি ঘনফুট।
এই বিপুল ঘাটতি নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া কিংবা জনগণের চাহিদা মেটানো কঠিন। বছর খানেক আগে পেট্রোবাংলা নতুন আবাসিক ভবনে গ্যাস-সংযোগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বলা হয়েছিল, গ্যাসের উৎপাদন বাড়লে ফের সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সেই স্থগিতাদেশ স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবাসিক ভবনে নতুন সংযোগ না দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমানো হবে। অন্যদিকে পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। এটি কোনো সমাধান নয়। সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম কমানো হবে, ভালো কথা। পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি কী?
আবাসিক ভবনে গ্যাস-সংযোগ স্থগিত করা হয়েছিল শিল্প-কারখানায় সরবরাহ ঠিক রাখার দোহাই দিয়ে। কিন্তু এখন শিল্প-কারখানাগুলোরও বেহাল অবস্থা। নতুন শিল্প-কারখানায় সংযোগ দেওয়া দূরের কথা, পুরোনো কারখানায়ও রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
আবাসিক ভবনে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ থাকায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এর হাজার হাজার গ্রাহক বিপাকে পড়েছেন। অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হলেও তাঁরা উঠতে পারছেন না। এসব অ্যাপার্টমেন্টে নতুন সংযোগ দিলে যে বাড়তি গ্যাসের প্রয়োজন, সিস্টেম লস কমিয়ে তার সমন্বয় করা অসম্ভব নয়।
তবে এর সবটাই জোড়াতালি দেওয়া সমাধান। জ্বালানি সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য কেবল গ্যাসের ওপর নির্ভর না করে এর সব উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে বহুদিন ধরে। সরকার খসড়া কয়লানীতি প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত করছে না। আমরা মনে করি, যে পদ্ধতিতে দেশ ও জনগণ অধিক লাভবান হবে, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট সামাল দেওয়া যাবে, সেই পদ্ধতিতেই কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বৈকি।

No comments

Powered by Blogger.