চরাচর-সারের নাম গুটি ইউরিয়া by আবদুল হামিদ মাহবুব

জনসংখ্যার চাপে প্রতিবছর দেশের আবাদযোগ্য জমি কমছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টর। প্রতিবছর লোকসংখ্যা বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ। গত ১০ বছরে আমাদের গড় আয়ু ৬০ থেকে ৬৪ বছর বেড়েছে। স্বাধীনতার পর আমাদের ধান উৎপাদন ছিল এক কোটি টন। এখন ধান উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টন।


একদিকে কমছে চাষাবাদের জমি, অপরদিকে বাড়ছে উৎপাদন। স্বাধীনতার সময় দেশের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন ১৬ কোটির ওপরে। সবই আশ্চর্যের এবং গোলমেলে। তবে এটাই বাস্তব। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানী ও পরিশ্রমী কৃষক-কিষানিরা ফসল উৎপাদনে মহাবিপ্লব ঘটিয়ে চলছেন। ফসল উৎপাদন এখন কেবল প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল নয়। কৃষিও এখন আর কেবল জৈব সারনির্ভর নয়। কৃষিজমির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও কৃষকদের ব্যবহার করতে হয়। বলা যায়, দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকই কোনো না কোনোভাবে রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহার করেন। কিন্তু ঠিকভাবে না জেনে কৃষকরা সার ব্যবহার করায় সারের যেমন অপচয় হয়, অন্যদিকে জমিরও উর্বরা ক্ষমতা হ্রাস পায়। ধানের জমিতে বেশি পরিমাণে ব্যবহার হয় যে সার তার নাম ইউরিয়া। দানা আকারের ইউরিয়া সার কৃষকরা জমিতে ছিটিয়ে ব্যবহার করায়ই অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমান আধুনিক কৃষিতে বলা হচ্ছে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে ব্যবহার না করে মাটিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গভীরে পুঁতে ব্যবহার করার কথা। পুঁতে ব্যবহারের সুবিধার জন্য দানা ইউরিয়াকে বড় বড় গুটি ইউরিয়ায় রূপান্তর করে কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ সার সাশ্রয় হবে। এতে সার ক্রয় করতে অর্থ যেমন কম লাগবে, সেই সঙ্গে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ হওয়ায় ফলন হবে ভালো। কয়েক দিন আগে মিডিয়া ক্যাম্পেইনে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানালেন, ইউরিয়া সার তৈরি হয় প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। সারা দেশের সব কৃষক দানা ইউরিয়া ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে ইউরিয়া সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস সাশ্রয় হবে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ। তারা ৮০টি উপজেলায় গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহারের পরিসংখ্যান দিয়ে একটি হার দেখান। তাতে বলা হয়, এক টন ইউরিয়া তৈরিতে এক হাজার ১১৩ ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়। এই এক টন দানা ইউরিয়া যে পরিমাণ জমিতে ব্যবহার করা হতো, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে ঠিক সেই পরিমাণ জমিতে আরো অধিক পরিমাণ ফসল ফলবে এবং গ্যাসের সাশ্রয় হবে ৬৩৯ ঘনমিটার। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশের পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে বোরো ও আমন ধান উৎপাদন করা হয়েছে। ফলে তিন লাখ ৯৮ মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। চার লাখ পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। সারা দেশে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার নিশ্চিত হলে ধান উৎপাদনে ভবিষ্যতে আমরা নতুন চেহারা দেখব_এই আশাবাদ গুটি ইউরিয়া দেশের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় করতে যেসব কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন তাঁদের।
আবদুল হামিদ মাহবুব

No comments

Powered by Blogger.