বদলে যাও বদলে দাও মিছিল-নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধে করণীয় by সাঈদ চৌধুরী
বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ দেশের বিভিন্ন জরুরি সমস্যা ও নির্বাচিত তিনটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ নৌ-দুর্ঘটনার বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক সাঈদ চৌধুরীর দেশীয় বাস্তবতা ও সমাধানমূলক নির্দেশনা এবং রফিকুল ইসলাম-এর মালয়েশিয়ার নৌপথ-ব্যবস্থাপনা দেখার অভিজ্ঞতার লেখা ছাপা হলো। বেশির ভাগ নৌ-দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মূল কারণ থাকে দুটি। অধিক যাত্রী এবং যন্ত্রপাতি ঠিকমতো পরীক্ষা না করা এবং কোনো সময় চালকের অদক্ষতা। যখন কোনো সমস্যার সমাধান সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়, কিন্তু তার পরও সমস্যা থেকেই যায়, তখন মনে করতে হবে, এই সমস্যা থেকে নিশ্চয়ই কেউ লাভবান হচ্ছে। লাভবান কারা হচ্ছে? আমরা সবাই জানি, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, মালিকপক্ষ আর সরকারি প্রশাসন। এরাই মধুচক্র। আমরা সাধারণ মানুষ মরে যাচ্ছি, তাই আমাদের চিন্তা এখন আমাদেরই করতে হবে। ৩০০ যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবে গেল। দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হলো। বাকি মানুষগুলো কোথায় গেল, তার হিসাবও পাওয়া গেল না। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সমাধানে শুধু পেলাম তদন্ত কমিটি আর অবমাননাকর কিছু আর্থিক সাহায্য! এই জটিল রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই। ভেবে কোনো লাভও হয় না। বরং নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে এর যথাযথ সমাধানে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। প্রথমেই মোটা দাগে দু-তিনটি দাবি বাস্তবায়নে মাঠে নামতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম অতিসত্বর নৌপুলিশ বাহিনী ও টেকনিক্যাল পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করা, যারা প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী ও মালামাল ওঠানোর পরিমাণ, ইঞ্জিনের অবস্থা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলার আনুষঙ্গিক সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। দ্বিতীয়ত, বেশ কতগুলো দ্রুতগতির উদ্ধারকারী জাহাজ নদীতে সব সময়ের জন্য রাখতে হবে, যাতে খবর পাওয়া মাত্র দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ যেন দ্রুতগতিতে খবর পাঠাতে পারে, সে ব্যবস্থা করাও একান্ত প্রয়োজন। তৃতীয়ত, যে চালকগুলো অদক্ষ, কিন্তু বর্তমানে এই পেশার সঙ্গে জড়িত, তাদের স্বল্পমেয়াদি জরুরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কেননা, অদক্ষ চালকদের ছাঁটাই করলে চালক-সংকট পড়ে যেতে পারে। এ কারণেই দীর্ঘমেয়াদি না হলেও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, তাদের বন্ধুসভার উদ্যোগে ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এর ব্যানারে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক বড় মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে অবশ্যই জনসচেতনতা বাড়ছে এবং সরকারের দৃষ্টি কিছুটা হলেও এদিকে পড়বে। কিন্তু মানববন্ধন বা অন্যান্য কার্যক্রম প্রতিবাদের ভাষা হলেও এগুলো প্রতিরোধের জন্য কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে www.bodlejaobodledao.com ব্লগের মাধ্যমেই আমরা জনমত সংগ্রহ করে সরকারকে সেসব বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করতে পারি। সরকার অবশ্যই তখন এটা নিয়ে বেশি করে ভাবতে বাধ্য হবে। ভাবতে বাধ্য করানোটাই আমাদের কাজ। এই স্বজনহারানোর বেদনাগুলো ভুলে গেলে চলবে না। একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজই স্থায়ী সফলতা নিয়ে আসবে নৌ-দুর্ঘটনার।
সাঈদ চৌধুরী, aschowdhury88@gmail.com
No comments