পাঁচ শিল্পী ও চার ব্যান্ডের গান-শুধু এবিসি রেডিওতে by মেহেদী মাসুদ

পত্রিকায় খবরটা অনেকেই পড়েছেন—এবিসি রেডিও এফএম ৮৯ দশমিক ২-এর সঙ্গে পাঁচ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আর চারটি ব্যান্ডের একটি চুক্তি হয়েছে। বাপ্পা মজুমদার, অর্ণব, হাবিব ওয়াহিদ, বালাম ও হূদয় খান এবং ব্যান্ড ওয়ারফেজ, দলছুট, আর্টসেল ও নেমেসিসের গান এখন থেকে পুরো একটি বছর শোনা যাবে শুধু এবিসি রেডিওতে। দুই পক্ষ এই চুক্তির শিরোনাম করেছেন ‘এক্সক্লুসিভ আর্টিস্ট অ্যাগ্রিমেন্ট’।


ব্যাপারটা কী? কী আছে এই চুক্তিতে? আর এখন কেন এমন একটি চুক্তি করতে হলো? শিল্পীরা কী ভাবছেন?—এমনই কিছু প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছি চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, ব্যান্ডের সদস্য, এবিসি রেডিওর কর্মকর্তা আর আইনজীবীকে।
আড্ডার শুরুতে এই চুক্তিকে স্বাগত জানান সবাই। এমন একটি চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী হওয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয় এবিসি রেডিওর কর্তৃপক্ষকে।
হাবিব বললেন, ‘এখানে আমরা মাত্র কয়েকজন বসেছি। কিন্তু এই চুক্তি সবার জন্য একটি মেসেজ। আমরা মনে করি, যাঁর কাছে গানের স্বত্ব রয়েছে, তাঁর অনুমতি ছাড়া ওই গান আর যেন কোনো এফএম রেডিও প্রচার না করে। এর ফলে শিল্পী যেমন আর্থিক দিক থেকে নিরাপত্তা পাচ্ছেন, তেমনি সংশ্লিষ্ট এফএম রেডিওকে আইনগত কোনো ঝামেলা বা কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না।’
শিল্পী, ব্যান্ড ও এবিসি রেডিওর মধ্যে চুক্তি সম্পাদনে আইনগত দিকটি দেখেছেন এ. রহমান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আইনজীবী ব্যারিস্টার চিশতি ইকবাল। এই আড্ডায় এসেছিলেন তিনিও। বললেন, ‘এই চুক্তি সম্পাদনের ফলে কপিরাইটস কার্যালয়ে নিবন্ধন করা শিল্পী ও ব্যান্ডের গানগুলো এখন থেকে পুরো একটি বছর প্রচারের সম্পূর্ণ অধিকার পেয়েছে এবিসি রেডিও। পাশাপাশি তাঁদের নতুন অ্যালবামের গানগুলোও শ্রোতারা শুনতে পাবেন শুধু এবিসি রেডিওতে। সঙ্গে থাকবে শিল্পী ও ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকার, এবিসি রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের অংশগ্রহণ, নতুন অ্যালবাম ও নতুন গানের প্রচারণার জন্য এবিসি রেডিওর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। এই সময়ে আর কোনো এফএম রেডিও এই শিল্পী ও ব্যান্ডের চুক্তিভুক্ত গান প্রচার করতে পারবে না। যদি প্রচার করে, তাহলে এবিসি রেডিও ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
বাপ্পা মজুমদার বললেন, ‘দেশে এফএম রেডিওর প্রচার শুরু হয়েছে অনেক দিন তো হলো। সবাই আমাদের গান বাজাচ্ছে। চুক্তি দূরে থাক, কেউ কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সেদিক থেকে এবিসি রেডিওর সঙ্গে সম্পাদিত এই চুক্তি খুবই ইতিবাচক একটি ঘটনা।’
বালাম বললেন, ‘গান তৈরি করা একটি সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজ। যিনি এ কাজটি করছেন তাঁর কিন্তু আর কোনো দিকে খেয়াল করার কথা না। তাতে সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়। বাইরের দেশে তা হয় না। কিন্তু আমাদের এ কাজটিও করতে হচ্ছে। ব্যবসা কীভাবে হবে, প্রচারণার পরিকল্পনা কী, কোথায় পাইরেসি হচ্ছে, কোন এফএম রেডিও আমাদের গান বাজাচ্ছে, কারা রিংটোন বানিয়ে বসে আছে—এগুলো নিয়ে তো আমাদের ভাববার কথা নয়। কারণ আইন আছে, নিয়ম আছে। কিন্তু কোনো কিছুরই প্রয়োগ নেই। তাই আমরা এগিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।’
ওয়ারফেজের টিপু বললেন, ‘শুরু থেকেই এবিসি রেডিও রয়্যালিটি দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী ছিল। অন্য কোনো এফএম রেডিওর ক্ষেত্রে এমনটা দেখিনি।’
একই ব্যান্ডের সদস্য শাম্স বললেন, ‘সব কটি এফএম রেডিওকে গানের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বিনা অনুমতিতে তারা এই গান দিনের পর দিন প্রচার করে যাচ্ছে।’
অর্ণব বললেন, ‘আমি কিন্তু গোড়া থেকেই এফএম রেডিওগুলোর বিনা অনুমতিতে গান প্রচার করার ব্যাপারটি ভালোভাবে নিতে পারিনি। সুযোগ পেলেই প্রতিবাদ করেছি। অনেকেই একটু সময় চেয়েছেন। দেখতে দেখতে তো পাঁচ বছর হয়ে গেল, আর কত সময় দেব? এটা খুবই অন্যায়। যাঁরা গানের স্বত্ব সংরক্ষণ করেন, নিবন্ধন করিয়েছেন—তাঁদের সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। এ পর্যন্ত আমার পাঁচটি অ্যালবাম বেরিয়েছে। এই পাঁচটি অ্যালবামের গানই শ্রোতারা শুনতে পাবেন এবিসি রেডিওতে।’
আর হূদয় খানের মতে, এটি একটি অনন্য চুক্তি।
আড্ডায় ছিলেন এবিসি রেডিওর কর্মকর্তা এহসানুল হক। তিনি জানান, চুক্তি হওয়া শিল্পী ও ব্যান্ডের কাছ থেকে এবিসি রেডিও পেয়েছে প্রায় ৯০০ গান। গানগুলোর একটি তালিকা এরই মধ্যে বিভিন্ন এফএম রেডিওর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাতে গানগুলো একটি বছর আর কোনো এফএম রেডিওতে প্রচার না হয়। পাশাপাশি অন্য শিল্পী ও ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে এমন চুক্তির মধ্য দিয়ে গান প্রচারের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.