চেহারাই পাল্টে যাবে নগরের

বন্দর নগর চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের পরিধি বেড়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নতুন ভবন ও উড়ালসড়ক নির্মাণ এবং সড়ক প্রশস্ত করছে। সিডিএ সূত্র জানায়, নগরের বিভিন্ন প্রকল্পের এক হাজার ১৫৩ কোটি টাকার কাজ চলছে।


আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৪৯ কোটি টাকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সিডিএ। এগুলো বাস্তবায়িত হলে নগরের চেহারা পাল্টে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও সিডিএ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ও প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ নগরের ব্যাপক উন্নয়ন-কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘সিডিএর উদ্যোগে একসঙ্গে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অবশ্যই ভালো লক্ষণ। বিশেষ করে সড়কগুলো প্রশস্ত করে ডিভাইডার দেওয়ায় গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা কমে গেছে। গাড়ি চলাচলেও অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। নগরের আরও কয়েকটি সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আবার অনেকগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। সবগুলো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে সুফলটা বিশ্বমানের হবে। তিনি আরও বলেন, নগরের সড়কের দুই পাশে নর্দমা তৈরি করছে সিডিএ, যা ইতিবাচক। যদিও চওড়ার দিক থেকে এসব নর্দমা কিছুটা অপ্রশস্ত। তবু জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও কমে যাচ্ছে।
তবে নগরের কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক প্রশস্ত হলেও নগরবাসী এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রসারিত সড়কের উভয় পাশ ব্যবহূত হচ্ছে গাড়ি পার্কিংয়ে। ফলে যানজট আগের মতোই রয়ে গেছে। এ জন্য সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে নগরবাসী।
রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং করার কারণে সুফল কিছুটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন প্রকৌশলী আলী আশরাফও। তিনি বলেন, নগরে বিভিন্ন রাস্তার পাশে দোকানপাট ও মার্কেট রয়েছে। মার্কেটের নিচে করা পার্কিংয়ের জায়গা ব্যবহূত হচ্ছে না। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অথবা পার্কিং করার জন্য আলাদা ভবন করতে হবে। যানজট কমানোর জন্য রাস্তার ওপর নয়, তবে রাস্তার পাশে ‘পার্কিং বে’ করতে হবে। কিছু বাণিজ্যিক ভবনের নিচের তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা অন্য কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। এ বিষয়টি তদারক করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে কাজ করতে হবে। এরপর বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত হবে।
জানা গেছে, গত তিন বছরে চট্টগ্রামে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিডিএ। এ ছাড়া বর্তমানে এক হাজার ১৫৩ কোটি টাকার ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো হলো: ১০৬ কোটি টাকার বহদ্দারহাট উড়ালসড়ক, ৯১ কোটি টাকার বহদ্দারহাট থেকে গণি বেকারি সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অলি খাঁ মসজিদ থেকে মুরাদপুর হয়ে অক্সিজেন সড়ক প্রশস্ত, ৪০ কোটি টাকার বাদামতলী থেকে পাঠানটুলী সড়ক প্রশস্ত, ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অলংকার থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত, ছয় কোটি টাকায় মোহরা শিল্প এলাকা সড়ক সমপ্রসারণ, ৪৪ কোটি টাকায়্রকাজীর দেউরি কাঁচাবাজার ও ফ্ল্যাট নির্মাণ, ১৮ কোটি টাকায় মেহেদীবাগ সিডিএ অফিসার্স কোয়ার্টার নির্মাণ, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কদমতলী ফ্লাইওভার্র প্রকল্প, ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি ভবন নির্মাণ প্রভৃতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ মার্চ পোশাক তৈরির কারাখানার নারী শ্রমিকদের ডরমেটরি ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ডরমেটরি ভবন নির্মাণ করা হলে অন্তত চার হাজার নারী শ্রমিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন।
সিডিএ সূত্র জানায়, সাগরের তীর ঘেঁষে আউটার রিং রোড হবে, যেটির নির্মাণকাজ শিগগির শুরু হচ্ছে। এই প্রকল্পের ৮৫৭ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি টাকা সরকার দেবে। বাকি ৬৮১ কোটি টাকার জোগান দেবে জাপানের জাইকা। রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এটি কর্ণফুলীর মোহনায় প্রস্তাবিত টানেলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, সিডিএ আরও ১২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে এসব প্রকল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সড়ক প্রশস্ত, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ সড়ক সমপ্রসারণ, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়েজিদ ফৌজদারহাট বাইপাস সড়ক সমপ্রসারণ, ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ, ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তর জেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ৫০ কোটি টাকায় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ৩০ কোটি টাকায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিটি সড়ক থেকে কদমতলী উড়ালসড়ক নির্মাণ।
এদিকে, সিডিএর অন্যন্যা আবাসিক এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের বিখ্যাত দিল্লি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখানে ক্যাম্পাস খুলবে। এ ছাড়া একই আবাসিকে ভারতের এপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৫০ শয্যার হাসপাতাল করতে পারে, যা বিবেচনায় আছে। ইতিমধ্যে জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.