সাদাকালো-দুঃখী নদীগুলোর জন্য কয়েক ছত্র by আহমদ রফিক
রবীন্দ্রনাথ একদা নাগর নদের অবস্থা দেখে বেশ কয়েক ছত্রের কাব্যভাষায় তাঁর মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি প্রমত্তা পদ্মার শীর্ণতা নিয়ে ছিন্নপত্রাবলীতে রীতিমতো আক্ষেপ করেছেন। তখনকার পরিস্থিতি ছিল অনেকাংশে প্রাকৃতিক কারণে। বাঁধ-ব্যারাজ ইত্যাদি কৃত্রিম কারণ, মানুষের হাতে তৈরি কারণ তখন বড় একটা দেখা যায়নি।
কিন্তু নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বেঁধে দিয়ে মানুষের জন্য দুরবস্থা তৈরির বিরোধী ছিলেন তিনি। এর প্রমাণ তাঁর রচনা।
প্রাকৃতিক জলস্রোত নিয়ে বিবাদ নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে যেকোনো মহাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে। এমনকি বড় দেশ হলে (যেমন বর্তমান ভারত) একই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পানির চাহিদা ও অধিকার নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। যেমন- আমরা স্মরণ করতে পারি 'নর্দমা বাঁচাও' আন্দোলনের কথা, যা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। আর গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ, যা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে (যা নিয়ে পাকিস্তান সরকার বড় একটা উচ্চবাচ্য করেনি), তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক কম হয়নি। অবশেষে একটা চুক্তি, একটা মীমাংসা হয়েছে বটে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষোভ একেবারে দূর হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক বিতর্কের বিষয় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, যা নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
কিন্তু তাতে কোনো পক্ষেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল না। কারণ আমি পানি বিশেষজ্ঞ নই, পরিবেশবিশারদও নই। কিন্তু নিজ ভূখণ্ডের বিপর্যয়ের প্রশ্নে একেবারে চুপ করে থাকা ঠিক নয় মনে করেই এ লেখা, যদিও জানি এ লেখারও প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল শূন্য। তবু লেখা আরো একটি কারণে যে নদীমাতৃক বাংলাদেশের জনগণের জীবন যেমন এর জলস্রোতের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি আকর্ষণীয় জলপ্রবাহের প্রকৃত সৌন্দর্য, যা দেখে রবীন্দ্রনাথ একদা শুধু মুগ্ধই হননি, পদ্মা-ইছামতি-গড়াই-নাগর হয়ে ওঠে তাঁর প্রিয় সঙ্গিনী।
আজই একটি দৈনিক পত্রে চোখে পড়ল রোমান্টিক বেদনার একটি খবর; শিরোনাম 'প্রমত্তা তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধূ ধূ বালুচর', স্বল্পায়তন বিবরণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় প্রতিবেদকদ্বয় আকর্ষণীয় ভাষায় যা লিখেছেন, তার কিছুটা উদ্ধার না করে পারছি না। তাঁরা লিখেছেন : 'পানির অভাবে নাব্যতা হারিয়ে তিস্তা বালুচরের রূপ নিয়েছে। তিস্তাকে দেখলে এখন নদী বলেই মনে হয় না। যে নদী দিয়ে অজানা পথে পাড়ি দিত সওদাগরি নৌকা। মিষ্টি পানির তিস্তা নানা প্রজাতির মাছের ছিল নিরাপদ আবাসস্থল, সেই তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুধুই বালু। তিস্তাপাড়ে এখন আর কেউ ভাটিয়ালি-পল্লীগীতি শুনতে পায় না।'
প্রতিবেদক দুজন সরেজমিন পরিদর্শন শেষে স্থানীয় প্রকৌশলীদের কাছ থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করে যা লিখেছেন, তার তাত্তি্বক পর্যালোচনা ইতিপূর্বে অনেক দেখেছি। পড়েছি বিশেষজ্ঞদের লেখায়। তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে চলেছে। তিস্তার পানি এখন এতই কম যে শুধু নাব্যতা ও নৌযান চলাচলের সমস্যার চেয়ে অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা।
স্বভাবতই এর প্রভাব পড়বে সেচনির্ভর কৃষি খাতে ও খাদ্য উৎপাদনে। এর প্রতিকূল প্রভাব দেখা দেবে জাতীয় অর্থনীতিতে আর স্থানীয়ভাবে কৃষককুল হবে ক্ষতিগ্রস্ত, যাকে বলে বিরূপ 'চেইন রিঅ্যাকশন'। সরকার এসব ক্ষেত্রে খানিকটা অসহায়। কিন্তু অসহায় হলে তো চলবে না। তাকে দ্বিপক্ষীয় বিদেশনীতি ঢেলে সাজাতে হবে, ভারতের সঙ্গে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।
তিস্তায় জেগে ওঠা বিশাল বালুচরের ধূসর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লেখা চলতে পারে, কিন্তু তাতে তো ক্ষুধায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হবে না, সংশ্লিষ্টদের পেট ভরবে না। বেগবান জলস্রোতের সৌন্দর্য তার চেয়ে অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষিত। কারণ তাতে রয়েছে নান্দনিক ও জাগতিক উভয় দিকের প্রয়োজন মেটানো।
এ প্রসঙ্গে এমন অভিযোগ রয়েছে যে শুকনো মৌসুমে ভারত আন্তনদী সংযোগের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির পরিপন্থী। এ জন্যই বিশেষজ্ঞ মাপের কারো কারো পরামর্শ, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় পানিবিষয়ক আলোচনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে বাংলাদেশের উচিত হবে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হওয়া, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার শরণাপন্ন হওয়া।
এ প্রসঙ্গে আবার কেউ কেউ চাইবে না বন্ধুপ্রতিম ভারতের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে। আমরাও তা চাই না। কারণ পাকিস্তানি আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের ছিল অবিশ্বাস্য অবদান। কিন্তু যেখানে অস্তিত্ব নিয়ে সমস্যা, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আত্মরক্ষায় সচল হতে হবে। তা না হলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের চেহারা শুধু মানচিত্রেই ধরা থাকবে, বাস্তবে নয়।
বেশ কিছুকাল আগে বগুড়া হয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে গিয়ে রাস্তার পাশে চোখে পড়েছিল নির্দেশিকা চিহ্ন- 'এইখানে করতোয়া নদী'। পাশে ছোট্ট খালে তিরতির করছে পানি, কানাকড়ির স্রোত নেই তাতে। পাশে ধানি জমিতে কৃষকদের রোপার কাজ চলছে। আরো কিছু দূরে এগিয়ে 'করতোয়া' নামে যে নির্দেশিকা দেখা গেল, তার পেছনে পুরোটাই আবাদি জমি- নদীর চিহ্নমাত্র নেই।
ইতিহাসখ্যাত প্রাচীন করতোয়ার কথা যদি বাদও দিই, তাহলেও সরেজমিন জরিপে দেখা যাচ্ছে যে উত্তরাঞ্চলে-পূর্বাঞ্চলে উভয় দিকেরই অপেক্ষাকৃত ছোট নদীগুলোতে অগভীর জলধারা স্রোতহীন আর চারপাশে অসংখ্য বালুচর। নদী নাব্যতা হারিয়ে নৌযান চলাচলের অনুপযোগী মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। কোনো কোনো নদীর বুক শুকনো সময়ে ফেটে চৌচির- যেমন দেখে এসেছি পতিসরে নাগর নদে, কুলিয়ার গড়াইয়ে শুধু মোষের গাড়িই নয়, মোটরযানও চলতে পারে নদীর বুকের ওপর দিয়ে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশ তাহলে একসময় বালুচরে পরিণত হবে, বড় কয়েকটি স্বনামখ্যাত নদীর ব্যতিক্রমী উপস্থিতি বাদে। দিন কয়েক আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন, শিরোনাম 'উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০টি নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর'। বলার অপেক্ষা রাখে না যে জলাভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
মনে হতে পারে, দুস্থ নদীগুলোকে কোনো অশুভ শক্তি গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছে। ড্রেজিং করে কতটাই বা তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। অথচ একসময় খরস্রোত বুকে ধরে দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে এসব নদী। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর সিলেটের কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ইত্যাদি, যেগুলো মৌলভীবাজারের নদী হিসেবে পরিচিত। সেই সঙ্গে রয়েছে হবিগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই ও করঙ্গি।
আমরা জানি, পাহাড়ি নদীর প্রাণশক্তি প্রবল। কিন্তু উজানে বাঁধ নির্মাণ তো ভাটির নদীকে গলা টিপে মারার মতোই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গেই আমরা উল্লেখ করতে পারি বহুল আলোচিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের কথা, যা নিয়ে লেখা হচ্ছে হাজার হাজার শব্দের প্রতিবাদলিপি। কিন্তু কে শুনবে নদীর মরণ-বাঁচন নিয়ে সাতকাহন।
সুরমা ও কুশিয়ারার উজানে ভারতীয় অঞ্চলে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি হলে বিদ্যুতের আলোয় অন্ধকার কাটবে কি না জানি না, কিন্তু শ্রীহট্ট-ময়মনসিংহের হাওরাঞ্চলের জলস্রোত যে তার প্রাণশক্তি হারাবে, তাতে সন্দেহ নেই। কমবেশি এর প্রভাব পড়বে মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের ওপরও। ক্ষতিগ্রস্ত হবে নৌ যোগাযোগ ও নৌ পরিবহন বাণিজ্য। এ তো গেল ভারতীয় বাঁধ প্রকল্পের যত সব হাঙ্গামা, যা 'ভাতে মারব, পানিতে মারব'র মতোই অবন্ধুসুলভ আচরণ।
কিন্তু আমরাও কি আমাদের প্রাণদায়িনী নদীগুলোর দুঃখ এতটুকু বুঝি? না, বুঝি না। বুঝলে তাদের দুঃখ ঘুচিয়ে দেশের সুস্বাস্থ্য ফেরানোর চেষ্টায় তৎপর হতাম। আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতাম। আমরা কি স্রোতস্বিনীর প্রতি কম অত্যাচার করছি? জবরদখল, দূষণ, অবৈধ স্থাপনা, মাটি ভরাট, বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা থেকে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট ইত্যাদি অপকর্মে নদীকে জীর্ণশীর্ণ ও অপবিত্র করে চলেছি। স্বচ্ছসলিলা নদীর কী করুণ শীর্ণকায় কৃষ্ণরূপ! শিল্পবর্জ্যে অসুস্থ নদী, দূষিত তার জলধারা। এককথায় অনাচারের মহোৎসব।
কেউ দেখার নেই। মাঝেমধ্যে উচ্চ আদালত অবৈধ স্থাপনা, বাঁধ ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য 'রুল' জারি করেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয় না। আর প্রয়োজনে ড্রেজিং- তাও সঠিকভাবে, সময়মতো সম্পন্ন হয় না। কাজেই নদী তথা জলপ্রবাহ প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন। সমস্যা আমাদেরও, দেশের-দশের। কিন্তু আমরা সেসব নিয়ে বড় একটা ভাবি না।
পরিশেষে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে ফিরি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবাধ্যতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিল্লিতে ফিরে যান, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর আশ্বাসমতো টিভি সিরিয়ালের আপ্তবাক্যমাফিক 'সব ঠিক হয়ে যাবে', তখন তাঁরা মমতাকে সঠিকমতো পরিমাপ করতে পারেননি। বুঝতে পারেননি কংগ্রেস-তৃণমূল তথা দিল্লি-কলকাতা সম্পর্কের গুরুত্ব। এত বড় একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী মাত হয়ে গেলেন ছোট্ট একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চালে।
রাজনীতি এমন একটি বিষয়, যেখানে 'সবার ওপরে দলীয় স্বার্থ, তাদের ওপরে নাই।' যে মমতার সাহায্যে কংগ্রেসের বড় কাঁটা পশ্চিমবঙ্গের বাম দুর্গের পতন ঘটানো গেল, তাঁকে অখুশি করা বা তাঁর মর্জিমতো না চলা কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই সহজ সত্যটা বাংলাদেশ সরকারের না বোঝার কথা নয়। তবু তারা বুঝেশুনেই মমতার প্রতি নমনীয়, তাঁকে খুশি করার চেষ্টায় ত্রুটি নেই।
কিন্তু ভবি ভুলবে না। আমাদের উচিত তিস্তা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। ছিটমহল নিয়েও মমতার ভূমিকা রীতিমতো আপত্তিকর। আমাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মনে আছে কি না জানি না, বিজেপি শাসনামলে যুক্তিহীন 'পুশব্যাক'-প্রক্রিয়ার বড় সমর্থক, উদ্ধত সমর্থক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশ তাঁর কাছ থেকে কোনো সুবিধা দূরে থাক, ন্যায্য দাবিও আদায় করতে পারবে না। এ সত্য বাংলাদেশের বুঝে নেওয়া দরকার।
তাই নদীর ন্যায্য পানিবণ্টন প্রশ্নে নমনীয় রাজনীতি ও কূটনীতিতে কোনো কাজ হবে না। এক হাতে নেওয়া, অন্য হাতে দেওয়ার নীতিই বাংলাদেশের জন্য সঠিক। ভারতীয় কূটনীতিকদের মধ্যে যে কয়েকজন যুক্তিবাদী আছেন, তাঁদের একজন জে এন দীক্ষিত তাঁর বইতে (লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড) ভারত সরকারের উদ্দেশে এমন কথা লিখেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের পূর্বশর্ত হলো ন্যায্য পানিবণ্টন, ছিটমহলসহ অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর ন্যায্য সমাধান, সীমান্তে হত্যা বন্ধের মতো বিষয়াদি। এভাবে দেওয়া-নেওয়ার বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক সৃষ্টি হলে তবেই ট্রানজিটের মতো সুবিধার প্রশ্ন উঠতে পারে। এই সারগর্ভ বক্তব্যের তাৎপর্য আমাদের শাসকশ্রেণীর বোঝা উচিত।
সব শেষে বলি, ভারতের পানি নিয়ে কূটনীতির পাশাপাশি স্বদেশে নদীগুলোর ওপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে আমাদের দেশবাসীর লোভী হাত, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও তো অত্যন্ত জরুরি। এই যে নদীর বুকে অবৈধ স্থাপনা, জবরদখল, নদীতে স্থায়ী বাঁধ তৈরি করে বা বেড়াজাল দিয়ে মাছ ধরা- এসব অন্যায় মুহূর্তে দূর করতে পারে প্রশাসন। এর জন্য আদালতের রায় বা রুল জারির অপেক্ষা করতে হবে কেন? এই লেখা শেষ করতে করতে দেখছি ও পড়ছি সচিত্র প্রতিবেদন : 'পদ্মায় দীর্ঘ বেড়া দিয়ে জমজমাট মাছ শিকার'। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড কি জলস্রোতকে কম কষ্ট দিচ্ছে? শীর্ণ করছে না নদীর জলপ্রবাহ? প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এসব অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে?
লেখক : রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাসৈনিক, কবি ও প্রাবন্ধিক
প্রাকৃতিক জলস্রোত নিয়ে বিবাদ নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে যেকোনো মহাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে। এমনকি বড় দেশ হলে (যেমন বর্তমান ভারত) একই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পানির চাহিদা ও অধিকার নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। যেমন- আমরা স্মরণ করতে পারি 'নর্দমা বাঁচাও' আন্দোলনের কথা, যা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। আর গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ, যা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে (যা নিয়ে পাকিস্তান সরকার বড় একটা উচ্চবাচ্য করেনি), তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক কম হয়নি। অবশেষে একটা চুক্তি, একটা মীমাংসা হয়েছে বটে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষোভ একেবারে দূর হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক বিতর্কের বিষয় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, যা নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
কিন্তু তাতে কোনো পক্ষেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল না। কারণ আমি পানি বিশেষজ্ঞ নই, পরিবেশবিশারদও নই। কিন্তু নিজ ভূখণ্ডের বিপর্যয়ের প্রশ্নে একেবারে চুপ করে থাকা ঠিক নয় মনে করেই এ লেখা, যদিও জানি এ লেখারও প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল শূন্য। তবু লেখা আরো একটি কারণে যে নদীমাতৃক বাংলাদেশের জনগণের জীবন যেমন এর জলস্রোতের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি আকর্ষণীয় জলপ্রবাহের প্রকৃত সৌন্দর্য, যা দেখে রবীন্দ্রনাথ একদা শুধু মুগ্ধই হননি, পদ্মা-ইছামতি-গড়াই-নাগর হয়ে ওঠে তাঁর প্রিয় সঙ্গিনী।
আজই একটি দৈনিক পত্রে চোখে পড়ল রোমান্টিক বেদনার একটি খবর; শিরোনাম 'প্রমত্তা তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধূ ধূ বালুচর', স্বল্পায়তন বিবরণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় প্রতিবেদকদ্বয় আকর্ষণীয় ভাষায় যা লিখেছেন, তার কিছুটা উদ্ধার না করে পারছি না। তাঁরা লিখেছেন : 'পানির অভাবে নাব্যতা হারিয়ে তিস্তা বালুচরের রূপ নিয়েছে। তিস্তাকে দেখলে এখন নদী বলেই মনে হয় না। যে নদী দিয়ে অজানা পথে পাড়ি দিত সওদাগরি নৌকা। মিষ্টি পানির তিস্তা নানা প্রজাতির মাছের ছিল নিরাপদ আবাসস্থল, সেই তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুধুই বালু। তিস্তাপাড়ে এখন আর কেউ ভাটিয়ালি-পল্লীগীতি শুনতে পায় না।'
প্রতিবেদক দুজন সরেজমিন পরিদর্শন শেষে স্থানীয় প্রকৌশলীদের কাছ থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করে যা লিখেছেন, তার তাত্তি্বক পর্যালোচনা ইতিপূর্বে অনেক দেখেছি। পড়েছি বিশেষজ্ঞদের লেখায়। তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে চলেছে। তিস্তার পানি এখন এতই কম যে শুধু নাব্যতা ও নৌযান চলাচলের সমস্যার চেয়ে অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা।
স্বভাবতই এর প্রভাব পড়বে সেচনির্ভর কৃষি খাতে ও খাদ্য উৎপাদনে। এর প্রতিকূল প্রভাব দেখা দেবে জাতীয় অর্থনীতিতে আর স্থানীয়ভাবে কৃষককুল হবে ক্ষতিগ্রস্ত, যাকে বলে বিরূপ 'চেইন রিঅ্যাকশন'। সরকার এসব ক্ষেত্রে খানিকটা অসহায়। কিন্তু অসহায় হলে তো চলবে না। তাকে দ্বিপক্ষীয় বিদেশনীতি ঢেলে সাজাতে হবে, ভারতের সঙ্গে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।
তিস্তায় জেগে ওঠা বিশাল বালুচরের ধূসর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লেখা চলতে পারে, কিন্তু তাতে তো ক্ষুধায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হবে না, সংশ্লিষ্টদের পেট ভরবে না। বেগবান জলস্রোতের সৌন্দর্য তার চেয়ে অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষিত। কারণ তাতে রয়েছে নান্দনিক ও জাগতিক উভয় দিকের প্রয়োজন মেটানো।
এ প্রসঙ্গে এমন অভিযোগ রয়েছে যে শুকনো মৌসুমে ভারত আন্তনদী সংযোগের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির পরিপন্থী। এ জন্যই বিশেষজ্ঞ মাপের কারো কারো পরামর্শ, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় পানিবিষয়ক আলোচনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে বাংলাদেশের উচিত হবে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হওয়া, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার শরণাপন্ন হওয়া।
এ প্রসঙ্গে আবার কেউ কেউ চাইবে না বন্ধুপ্রতিম ভারতের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে। আমরাও তা চাই না। কারণ পাকিস্তানি আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের ছিল অবিশ্বাস্য অবদান। কিন্তু যেখানে অস্তিত্ব নিয়ে সমস্যা, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আত্মরক্ষায় সচল হতে হবে। তা না হলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের চেহারা শুধু মানচিত্রেই ধরা থাকবে, বাস্তবে নয়।
বেশ কিছুকাল আগে বগুড়া হয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে গিয়ে রাস্তার পাশে চোখে পড়েছিল নির্দেশিকা চিহ্ন- 'এইখানে করতোয়া নদী'। পাশে ছোট্ট খালে তিরতির করছে পানি, কানাকড়ির স্রোত নেই তাতে। পাশে ধানি জমিতে কৃষকদের রোপার কাজ চলছে। আরো কিছু দূরে এগিয়ে 'করতোয়া' নামে যে নির্দেশিকা দেখা গেল, তার পেছনে পুরোটাই আবাদি জমি- নদীর চিহ্নমাত্র নেই।
ইতিহাসখ্যাত প্রাচীন করতোয়ার কথা যদি বাদও দিই, তাহলেও সরেজমিন জরিপে দেখা যাচ্ছে যে উত্তরাঞ্চলে-পূর্বাঞ্চলে উভয় দিকেরই অপেক্ষাকৃত ছোট নদীগুলোতে অগভীর জলধারা স্রোতহীন আর চারপাশে অসংখ্য বালুচর। নদী নাব্যতা হারিয়ে নৌযান চলাচলের অনুপযোগী মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। কোনো কোনো নদীর বুক শুকনো সময়ে ফেটে চৌচির- যেমন দেখে এসেছি পতিসরে নাগর নদে, কুলিয়ার গড়াইয়ে শুধু মোষের গাড়িই নয়, মোটরযানও চলতে পারে নদীর বুকের ওপর দিয়ে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশ তাহলে একসময় বালুচরে পরিণত হবে, বড় কয়েকটি স্বনামখ্যাত নদীর ব্যতিক্রমী উপস্থিতি বাদে। দিন কয়েক আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন, শিরোনাম 'উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০টি নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর'। বলার অপেক্ষা রাখে না যে জলাভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
মনে হতে পারে, দুস্থ নদীগুলোকে কোনো অশুভ শক্তি গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছে। ড্রেজিং করে কতটাই বা তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। অথচ একসময় খরস্রোত বুকে ধরে দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে এসব নদী। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর সিলেটের কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ইত্যাদি, যেগুলো মৌলভীবাজারের নদী হিসেবে পরিচিত। সেই সঙ্গে রয়েছে হবিগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই ও করঙ্গি।
আমরা জানি, পাহাড়ি নদীর প্রাণশক্তি প্রবল। কিন্তু উজানে বাঁধ নির্মাণ তো ভাটির নদীকে গলা টিপে মারার মতোই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গেই আমরা উল্লেখ করতে পারি বহুল আলোচিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের কথা, যা নিয়ে লেখা হচ্ছে হাজার হাজার শব্দের প্রতিবাদলিপি। কিন্তু কে শুনবে নদীর মরণ-বাঁচন নিয়ে সাতকাহন।
সুরমা ও কুশিয়ারার উজানে ভারতীয় অঞ্চলে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি হলে বিদ্যুতের আলোয় অন্ধকার কাটবে কি না জানি না, কিন্তু শ্রীহট্ট-ময়মনসিংহের হাওরাঞ্চলের জলস্রোত যে তার প্রাণশক্তি হারাবে, তাতে সন্দেহ নেই। কমবেশি এর প্রভাব পড়বে মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের ওপরও। ক্ষতিগ্রস্ত হবে নৌ যোগাযোগ ও নৌ পরিবহন বাণিজ্য। এ তো গেল ভারতীয় বাঁধ প্রকল্পের যত সব হাঙ্গামা, যা 'ভাতে মারব, পানিতে মারব'র মতোই অবন্ধুসুলভ আচরণ।
কিন্তু আমরাও কি আমাদের প্রাণদায়িনী নদীগুলোর দুঃখ এতটুকু বুঝি? না, বুঝি না। বুঝলে তাদের দুঃখ ঘুচিয়ে দেশের সুস্বাস্থ্য ফেরানোর চেষ্টায় তৎপর হতাম। আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতাম। আমরা কি স্রোতস্বিনীর প্রতি কম অত্যাচার করছি? জবরদখল, দূষণ, অবৈধ স্থাপনা, মাটি ভরাট, বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা থেকে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট ইত্যাদি অপকর্মে নদীকে জীর্ণশীর্ণ ও অপবিত্র করে চলেছি। স্বচ্ছসলিলা নদীর কী করুণ শীর্ণকায় কৃষ্ণরূপ! শিল্পবর্জ্যে অসুস্থ নদী, দূষিত তার জলধারা। এককথায় অনাচারের মহোৎসব।
কেউ দেখার নেই। মাঝেমধ্যে উচ্চ আদালত অবৈধ স্থাপনা, বাঁধ ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য 'রুল' জারি করেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয় না। আর প্রয়োজনে ড্রেজিং- তাও সঠিকভাবে, সময়মতো সম্পন্ন হয় না। কাজেই নদী তথা জলপ্রবাহ প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন। সমস্যা আমাদেরও, দেশের-দশের। কিন্তু আমরা সেসব নিয়ে বড় একটা ভাবি না।
পরিশেষে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে ফিরি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবাধ্যতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিল্লিতে ফিরে যান, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর আশ্বাসমতো টিভি সিরিয়ালের আপ্তবাক্যমাফিক 'সব ঠিক হয়ে যাবে', তখন তাঁরা মমতাকে সঠিকমতো পরিমাপ করতে পারেননি। বুঝতে পারেননি কংগ্রেস-তৃণমূল তথা দিল্লি-কলকাতা সম্পর্কের গুরুত্ব। এত বড় একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী মাত হয়ে গেলেন ছোট্ট একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চালে।
রাজনীতি এমন একটি বিষয়, যেখানে 'সবার ওপরে দলীয় স্বার্থ, তাদের ওপরে নাই।' যে মমতার সাহায্যে কংগ্রেসের বড় কাঁটা পশ্চিমবঙ্গের বাম দুর্গের পতন ঘটানো গেল, তাঁকে অখুশি করা বা তাঁর মর্জিমতো না চলা কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই সহজ সত্যটা বাংলাদেশ সরকারের না বোঝার কথা নয়। তবু তারা বুঝেশুনেই মমতার প্রতি নমনীয়, তাঁকে খুশি করার চেষ্টায় ত্রুটি নেই।
কিন্তু ভবি ভুলবে না। আমাদের উচিত তিস্তা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। ছিটমহল নিয়েও মমতার ভূমিকা রীতিমতো আপত্তিকর। আমাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মনে আছে কি না জানি না, বিজেপি শাসনামলে যুক্তিহীন 'পুশব্যাক'-প্রক্রিয়ার বড় সমর্থক, উদ্ধত সমর্থক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশ তাঁর কাছ থেকে কোনো সুবিধা দূরে থাক, ন্যায্য দাবিও আদায় করতে পারবে না। এ সত্য বাংলাদেশের বুঝে নেওয়া দরকার।
তাই নদীর ন্যায্য পানিবণ্টন প্রশ্নে নমনীয় রাজনীতি ও কূটনীতিতে কোনো কাজ হবে না। এক হাতে নেওয়া, অন্য হাতে দেওয়ার নীতিই বাংলাদেশের জন্য সঠিক। ভারতীয় কূটনীতিকদের মধ্যে যে কয়েকজন যুক্তিবাদী আছেন, তাঁদের একজন জে এন দীক্ষিত তাঁর বইতে (লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড) ভারত সরকারের উদ্দেশে এমন কথা লিখেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের পূর্বশর্ত হলো ন্যায্য পানিবণ্টন, ছিটমহলসহ অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর ন্যায্য সমাধান, সীমান্তে হত্যা বন্ধের মতো বিষয়াদি। এভাবে দেওয়া-নেওয়ার বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক সৃষ্টি হলে তবেই ট্রানজিটের মতো সুবিধার প্রশ্ন উঠতে পারে। এই সারগর্ভ বক্তব্যের তাৎপর্য আমাদের শাসকশ্রেণীর বোঝা উচিত।
সব শেষে বলি, ভারতের পানি নিয়ে কূটনীতির পাশাপাশি স্বদেশে নদীগুলোর ওপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে আমাদের দেশবাসীর লোভী হাত, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও তো অত্যন্ত জরুরি। এই যে নদীর বুকে অবৈধ স্থাপনা, জবরদখল, নদীতে স্থায়ী বাঁধ তৈরি করে বা বেড়াজাল দিয়ে মাছ ধরা- এসব অন্যায় মুহূর্তে দূর করতে পারে প্রশাসন। এর জন্য আদালতের রায় বা রুল জারির অপেক্ষা করতে হবে কেন? এই লেখা শেষ করতে করতে দেখছি ও পড়ছি সচিত্র প্রতিবেদন : 'পদ্মায় দীর্ঘ বেড়া দিয়ে জমজমাট মাছ শিকার'। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড কি জলস্রোতকে কম কষ্ট দিচ্ছে? শীর্ণ করছে না নদীর জলপ্রবাহ? প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এসব অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে?
লেখক : রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাসৈনিক, কবি ও প্রাবন্ধিক
No comments